পুড়িয়ে বন্যপ্রাণী হত্যা: পরিবেশকর্মীদের সেই বাগান পরিদর্শন করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ

পরিবেশকর্মীদের ঘটনাস্থল পরিবেশ করতে দেয়নি বাগান কর্তৃপক্ষ। ছবি। মিন্টু দেশোয়ারা

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের পাশে হাতিমারা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের ইজারা নেওয়া জমিতে বাগান সম্প্রসারণের জন্য সম্প্রতি গাছ কেটে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এই আগুনে পুড়েছে হনুমান, মায়াহরিণ, বিরল প্রজাতির কাঠবিড়ালি ও পাখিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী।

জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় এই সংবাদ দেখে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে চা-বাগানটিতে যান। কিন্তু, তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শক করতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বাপা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম।

তিনি জানান, বাগানের সীমানা গেটে ঢোকার সময় প্রতিনিধিদলের বহনকারী গাড়িটি আটকে দেওয়া হয়। সে সময় লিটন বাবু ওরফে টিলা বাবু নামে একজন আসেন এবং তিনি বাগান ব্যবস্থাপক মো. মইন উদ্দিনের সঙ্গে কথা বকলে তার ফোন নম্বর বাপা প্রতিনিধিদলকে দেন। পরে বাগান ব্যবস্থাপকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি প্রতিনিধিদলকে তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। প্রতিনিধিদলকে টিলাবাবু বাগান ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে নিয়ে যান। প্রতিনিধিদল নিজেদের পরিচয় দিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা বলেন। সে সময় বাগানের ব্যবস্থাপক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি দিবেন বলে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যান। দীর্ঘ সময় বাপা প্রতিনিধিদলকে তার কার্যালয়ে বসিয়ে রেখে পরে ব্যবস্থাপক জানান, বাপা প্রতিনিধিদলকে ঘটনাস্থলে যেতে দেওয়া হবে না। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বাপার পক্ষ থেকে বাগানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে ব্যবস্থাপক মো. মইন উদ্দিন তাদের বাগানের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এফএ শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু, তিনি জিএমের ফোন নম্বর দিতে রাজি হননি। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলে বাধ্য হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই বাপা প্রতিনিধিদল ফিরে যায়।

আব্দুল করিম কিম বলেন, 'ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বাধা দেওয়াই প্রমাণ করে সংবাদপত্রে যেমন সংবাদ এসেছে, তেমনি করে বাগান কর্তৃপক্ষ গাছ কেটে, আগুন লাগিয়ে জীবজন্তু পুড়িয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিধ্বংসী কর্মযজ্ঞ করছে। যেজন্য ভীত হয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বাপা প্রতিনিধিদলকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে দেয়নি।'

'দেশের অন্যতম বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেমা-কালেঙ্গার পাশে অবস্থিত হাতিমারা চা-বাগানের যে স্থানটিতে গাছ কেটে আগুন লাগিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে, সেই গির্জাঘর এলাকাটি বন্যপ্রাণীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কয়েক প্রজাতির বানর, হনুমান, মায়াহরিণ, শুকরসহ নানা প্রজাতির জীবজন্তুর আবাসস্থল ছিল। গাছ কেটে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কারণে বন্যপ্রাণী, পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে আমরা জানতে পারি। এ ধরনের পরিবেশ-বিধ্বংসী, হীন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি', বলেন তিনি।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, কোষাধ্যক্ষ শোয়েব চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য আহসানুল হক সুজা, অ্যাডভোকেট শামীম পারভিন, চৌধুরী মাসুদ আলী ফরহাদ প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিমারা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো. মইন উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না। এ বিষয়ে জিএমের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।' পরে বাগানের জিএমের নম্বর চাইলে তিনি বলেন, 'জিএমের নম্বর দেওয়া নিষেধ আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
A freedom fighter’s journey to Mujibnagar

Who is a freedom fighter

The government's move to redefine freedom fighters has been at the centre of discussion

33m ago