সেই কুমিল্লাই ফাইনালে

টানা তিন হারে আসর শুরু করেছিল কুমিল্লা ভিক্টরিয়ান্স। এরপর টানা নয়টি ম্যাচ জয়। তাতে নিশ্চিত হয় বিপিএলের কোয়ালিফায়ার পর্ব। সেখানেও দুর্দান্ত দলটি। এদিন সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারাতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তাদের। অথচ পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলে শীর্ষে থেকেই কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছিল সিলেট। তাদের হারিয়ে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টরিয়ান্স। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৭.১ ওভারে মাত্র ১২৫ রান তুলে গুটিয়ে যায় সিলেট। জবাবে ২০ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে কুমিল্লা। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ফাইনালে উঠল দলটি। এর আগের তিন ফাইনালেই শিরোপা জিতেছে তারা।

অন্যদিকে হারলেও বিদায় হয়ে যায়নি সিলেট। গ্রুপ পর্বে শীর্ষ দুইয়ে থাকার সুবিধা পাচ্ছে তারা। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে আরও একটি সুযোগ রয়েছে তাদের। আগামী মঙ্গলবার এলিমিনেটর রাউন্ডে ফরচুন বরিশালকে বিদায় করে দেওয়া রংপুর রাইডার্সের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

মূলত বোলাররাই জয় ভিত গড়ে দেন কুমিল্লার। শুরু থেকেই সিলেটকে চেপে ধরেন তারা। মাঝে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রতিরোধ গড়েছিলেন। এরপর সপ্তম উইকেটে জর্জ লিন্ডের সঙ্গে মুশফিকুর রহিম একটি জুটিতে লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিল সিলেট। তবে তা যথেষ্ট হয়নি। এ জুটি ভাঙতেই টপাটপ উইকেট হারিয়ে ১৭ বল আগেই গুটিয়ে যায় দলটি।

এদিন দলীয় ১৬ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে সিলেট। আন্দ্রে রাসেলের লেগস্টাম্পে রাখা ফুলটস বলে অবিশ্বাস্যভাবে টাইমিংয়ে হেরফের করে সাজঘরে ফেরেন শফিকুল্লাহ গাফারি। একই ওভারে রানআউটের ফাঁদে পড়েন তৌহিদ হৃদয়। জাকিরও আউট হন আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়ে। মঈন আলীর বলে টপএজ হয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন সুনীল নারিনের হাতে।

দলের এমন পরিস্থিতিতে চার নম্বরে নামেন অধিনায়ক মাশরাফি। শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের চাপ লাঘব করার চেষ্টা চালান তিনি। ৩৭ বলে গড়েন ৫৬ রানের জুটি। ১৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৬ রান করে রাসেলের বলে আউট হন মাশরাফি। আরও একটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে শূন্যে তুলে পয়েন্টে তানভির ইসলামের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তিনি।

এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শান্তও। স্কোরবোর্ডে আর ৬ রান যোগ হতে তানভিরের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। উইকেট ছেড়ে পেছনে গিয়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে লাইন মিস করেন তিনি। আর উইকেটে নেমে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন রায়ান বার্লও। ফলে বড় চাপেই পড়ে যায় দলটি। যা থেকে আর কার্যত উতরে উঠতে পারেনি তারা।

এরপর মুশফিককে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন লিন্ডে। ৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। কিন্তু দলকে লড়াইয়ের জন্য পর্যাপ্ত পুঁজি এনে দিতে পারেননি তারা। মুকিদুল ইসলামের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। তাতেই কার্যত শেষ হয়ে যায় সিলেটের লড়াই। আট রানের ব্যবধানে শেষ চার উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় দলটি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন শান্ত। ২৯ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ২২ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ২৯ রান করেন মুশফিক। কুমিল্লার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন তানভির, রাসেল ও মোস্তাফিজুর রহমান।

লক্ষ্য ছোট হলেও রান তাড়ায় শুরুতে বেশ আগ্রাসী ছিল কুমিল্লা। পাওয়ার প্লেতেই ৫৮ রান সংগ্রহ করে তারা। যদিও এ সময়ে উইকেট হারায় ৩টি। ৩৮ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে রুবেল হোসেনের শিকার হন লিটন দাস। মূলত শুরুতে ঝড় তোলেন নারিন। ১৮ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস খেলে তানজিব হাসান সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে যান এ ক্যারিবিয়ান।

দলীয় ৭৩ রানে ফিরে যান ইমরুল কায়েসও। শফিকুল্লাহ গাফারির বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর মঈন আলীকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৩০ রানের জুটি গড়েন তারা। তাতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় দলটি।

অবশ্য শুরুতেই ফিরতে পারতেন মোসাদ্দেক। লিন্ডের বলে এগিয়ে স্টাম্প থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বল ধরতেই পারেননি মুশফিক। এরপর রাসেলের সহজ একটি ক্যাচও মিস করেন মুশফিক। জীবন পেয়ে এরপর টানা দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন এ ক্যারিবিয়ান। এ দুটি মিস না হলে হয়তো ভিন্ন ফলাফলও হতে পারতো।

শেষ পর্যন্ত ২৭ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। মঈন করেন ২১ রান। সিলেটের পক্ষে ৩৩ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন রুবেল।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus urges young people to engage more in politics

Yunus made the call when a group of young political activists from different political parties of Norway called on him at the state guest house Jamuna today

18m ago