খেলা বর্জন করে কেন আন্দোলনে সিলেটের ক্রিকেটাররা? 

ফাইল ছবি

মাঠ সংকটের কারণে এবার দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে হবে সিলেট প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ, থাকবে না রেলিগেশনও। এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না স্থানীয় ক্রিকেটাররা। এনামুল হক জুনিয়রের নেতৃত্বাধীন সিলেট ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা দিয়েছে লিগ বর্জনের। পাশাপাশি রাজপথেও আন্দোলন করবেন তারা। এই পরিস্থিতিতে আয়োজকদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

গত রাতে লন্ডনে থাকা জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এনামুল জুনিয়র নিজের ফেসবুকে দেন এক পোস্ট। তাতে তিনি লিগ বর্জনের কথা জানান,  'আপনারা বললেন ফ্ল্যাট লিগ (রাউন্ড রবিন) দিতে পারবেন না, কারণ মাঠ নেই এই বছর। আমরা রাজি হলাম গ্রুপ লিগ খেলতে, এখন বলছেন রেলিগেশন দিবেন না। রেলিগেশন ছাড়া কি লিগ ভাই? সিলেট ডিসট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন, আপনাদের বলছি, আমাদের অভিভাবক নাদেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। যদি তাতে কোনো সমাধান না হয়, আমরা লিগ বয়কট করবো। আমি সিলেটের একাডেমির সব কোচদের অনুরোধ করবো, আপনারা একাডেমির খেলোয়াড়দের আমাদের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিন। আমরা আজকে প্রতিবাদ করছি ভবিষ্যৎ সিলেটের ক্রিকেটারদের জন্য। এতগুলো সিলেটি খেলোয়াড় যেখানে জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছে বা করছে, সেই জায়গায় ক্রিকেট লিগ এমন হতে পারে না।'

সিলেট জেলা প্রথম বিভাগ লিগে খেলে ১০ দল। ১০ দলকে এবার দুই গ্রুপে ভাগ করে লিগের আদল সাজিয়েছে আয়োজক জেলা ক্রীড়া সংস্থা। খেলোয়াড়রা চান, সব দল একে অন্যের বিপক্ষে খেলুক এবং রাখা হোক অবনমন।

এই দাবিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন ক্রিকেটাররা। পরে গত রাতে এক অনলাইন সভায় ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াব) ও সিলেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন লিগ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। মঙ্গলবার মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করার কথা তাদের।

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিসিবি পরিচালক ও স্থানীয় সংগঠক শফিউল আলম নাদেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,  'তারা আমার সঙ্গে কথা বলেছে। আমি বলেছি মাহিউদ্দিন সেলিম (জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক) ভাইয়ের সঙ্গে বসতে, আমরা পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তা, আম্পায়ারিং ও খেলার মান ঠিক রাখার বিষয় দেখব। কিন্তু তারা এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে চলে গেল। একাবারে বর্জনের ঘোষণা দিলে তো আমাদের কিছু করার নেই।'

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রাঙ্গণে আছে দুটি মাঠ। গ্রাউন্ড-১, ও গ্রাউন্ড-২, মূলত এই দুই মাঠই সিলেটের ক্রিকেটের অক্সিজেন। বিসিবিও বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিয়মিত মাঠগুলো ব্যবহার করে।  

আবার শহরের রিকাভীবাজারের জেলা স্টেডিয়াম অনেকদিন ধরেই নিজেদের হোম গ্রাউন্ড করে রেখেছে আবাহনী লিমিটেডের ফুটবল ইউনিট।

শফিউল সেই বাস্তবতাই তুলে ধরলেন,  'দেখুন, আমাদের উপায় কি ছিল সেটা তো দেখতে হবে। মাঠের প্রবল সংকট আছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুটি গ্রাউন্ডে খেলা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি, তারপরও রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে শেষ করা সম্ভব না। কারণ এখানে কদিন পর বিসিএলের ফাইনাল হবে, আয়ারল্যান্ড সিরিজের খেলা আছে মার্চে, আবার এইচপির ক্যাম্প দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা স্টেডিয়ামের মাঠ আবাহনী ফুটবল দল হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে ফুটবলের অনেক ইভেন্ট আছে। এছাড়া তো আমাদের হাতে আর মাঠ নেই।'

লিগে অবনমন কেন নেই?

এনামুল জানান মাঠ সংকটের কারণে গ্রুপ লিগ পদ্ধতি তারা মেনে নিলেও অবনমন না থাকা মানা সম্ভব না। তাদের বক্তব্য, অবনমন না থাকলে খেলার মধ্যে থাকবে না প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ। ক্লাবগুলোও ভালো দল বানাতে শক্তি প্রয়োগ করবে কম। সব কিছুই ঢিলেঢালা থাকার শঙ্কা ক্রিকেটারদের।

শফিউল অবশ্য জানান, রেলিগেশন রাখার বাস্তবতা আসলে সিলেটে নেই,  'রেলিগেশন রাখার বাস্তবতা নেই কারণ আমরা প্রথম বিভাগের জন্যই মাঠ পাচ্ছি না ঠিকমতো। পরে রেলিগেটেড করে দলগুলোকে কোথায় পাঠাব? আবার ওই দলের জায়গায় কাদেরকে আমরা প্রথম বিভাগে আনব?'

চলতি মৌসুমে অবশ্য দ্বিতীয় বিভাগ লিগ হয়েছে সিলেটে। গত বছর প্রথম বিভাগ থেকে রেলিগেটেড হয়ে যায় জালালাবাদ ক্লাব। গত ডিসেম্বরে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে উঠে এবার প্রথম বিভাগ খেলবে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। 

শফিউল জানান, নতুন মাঠ নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন তারা। আরও একটি মাঠ পেয়ে গেলে সারা বছরই বিভিন্ন লিগ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। 

এদিকে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটাররা এবার লিগ বর্জন করলেও  সময়মতই (১৬ ফেব্রুয়ারি) তা মাঠে গড়ানোর আশা স্থানীয় সংগঠকদের। প্রয়োজনে একাডেমির খেলোয়াড়দের দিয়ে খেলানোর চিন্তা করছেন তারা।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago