ত্বকী হত্যার বিচার না হওয়ায় ২৬ নাগরিকের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত

১০ বছরেও নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৬ জন নাগরিক।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, 'নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ৬ মার্চ। অথচ আজও পর্যন্ত এ হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়নি। আমরা এতে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'অথচ এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর না যেতেই মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব কেন, কখন, কোথায়, কারা এবং কীভাবে ত্বকীকে হত্যা করেছে তা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছিলেন। তখন সংবাদপত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আমরা তা জানতে পারি। তদন্ত শেষ করার দীর্ঘ দিন পরেও এ হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয়নি।'

বিবৃতিদাতাদের বক্তব্য, 'রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার সংবিধান নিশ্চিত করেছে। অপরাধীর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দুর্বলতা প্রদর্শন ও বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্য শুধু আইনের ব্যত্যয়ই নয়, তা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। কোন হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা কখনোই কাম্য হতে পারে না। আমরা অচিরেই ত্বকী হত্যার বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।'

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ভাষাসৈনিক লেখক ও গবেষক আহমদ রফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রবীন্দ্রগবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. সনজীদা খাতুন, শিল্পী ও ভাষাসৈনিক মুস্তাফা মনোয়ার, লেখক-শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার, লেখক-শিক্ষাবিদ ড. হায়াৎ মামুদ, শিল্পী রফিকুন নবী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, শিক্ষাবিদ-গবেষক ড. সফিউদ্দিন আহমদ, শিশু সংগঠক ড. মাহফুজা খানম, শিক্ষাবিদ লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি ডা. সারোয়ার আলী, নারী অধিকারকর্মী-লেখক ড. মালেকা বেগম, মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, শিক্ষাবিদ অধ্যপক শফি আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি ও লেখক-গবেষক মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যপক এম এম আকাশ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ডা. লেনিন চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।  

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এর ২ দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওই বছরের ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন ঘাতক ত্বকীকে হত্যা করেছেন। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

তবে এ পর্যন্ত তা করা হয়নি। ত্বকী হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দ্রুত অভিযোগপত্র প্রদান ও বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।     

Comments

The Daily Star  | English

Shutdown is another economic peril

Vowing to continue an indefinite work stoppage and stage a protest march on tax offices, the NBR Reform Unity Council has intensified its demands

7h ago