জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওপর বিরক্ত হয়ে বগুড়া চান্দু স্টেডিয়াম ছাড়ছে বিসিবি

স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং ক্রীড়া সংগঠকদের উপর বিরক্ত হয়ে এক সময়ের ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ভেন্যু বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ছেড়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

সূত্র বলছে, বছরের পর বছর বিসিবিকে অসহযোগিতা করায় বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপর এক প্রকার বিরক্ত হয়েই মাঠ ছেড়ে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সম্প্রতি এই অসহযোগিতার বিষয়টি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলনকে চিঠিতে জানিয়েছে বিসিবি, দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা-ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তা।

একদিন আগে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ১৭ জন কর্মচারী-কর্মকর্তাদের স্টেডিয়াম ছেড়ে দিয়ে শনিবারের মধ্যেই ঢাকায় রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্টেডিয়ামে বিসিবির যেসব আসবাব-পত্র আছে সেগুলো ঢাকায় পাঠাতে বলা হয়েছে, জানিয়েছেন চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার মোঃ জামিলুর রহমান।

আজ বিকেলে চান্দু স্টেডিয়ামে রক্ষিত বিসিবির মালামাল ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এই কর্মকর্তা।

আগামী ৮ মার্চ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিসিবির ইয়ুথ ক্রিকেট লীগ। সূচি অনুযায়ী সেটা বগুড়া চান্দু স্টেডিয়ামেও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা গত ১ মার্চ থেকে এই স্টেডিয়ামে শুরু করেছে বগুড়া প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ। যা শেষ হবে আগামী ২৫ মার্চ। বিষয়টি নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং বিসিবি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হলে বিসিবি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলছে সূত্র।

এই ঘটনার ২-৩ বছর আগেও এখানে জাতীয় ইভেন্ট ইয়ুথ ক্রিকেট লীগ হতে দেয়নি বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার লোকজন। ঢাকা থেকে খেলোয়াড় এসে প্রাকটিস করলেও পরে আর এই মাঠে খেলোয়াড়দের নামতে দেয়নি জেলা ক্রীড়া সংস্থার লোকজন, বলছে বিসিবির একটি সূত্র। সূত্র অনুযায়ী, নানা রকমের অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ক্রিয়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর বলেন, 'জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপরে বিরক্ত হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। যদি কোনো কারণ থাকে তবে সেটা উল্লেখ করে বলতে হবে। এনসিএলের মাঠ দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির অধীনে আছে। তারা যদি মাঠ ছেড়ে যায় আমাদের বলার কি আছে।'

ইয়ুথ ক্রিকেট লীগের দেওয়া সময়-সূচীর মধ্যে কেন জেলা ক্রিয়া সংস্থা বগুড়া প্রিমিয়ার ডিভিশন আয়োজন করছে জানতে চাইলে মাসুদুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন ঘটনা এর আগেও হয়েছে। ইয়ুথ ক্রিকেট লীগ শুরু হবে আগামী ৮ মার্চ থেকে। এর মধ্যে আমাদের লীগ শুরু হলেও ইয়ুথ ক্রিকেট লীগের সময় বগুড়া প্রিমিয়ার ডিভিশন বন্ধ রাখা হবে। বিসিবির মাঠ। বিসিবি খেলা দিলে কেউ আটকাতে পারবে?'

এই বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক এবং বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি মাত্র কয়েক মাস আগে এখানে জয়েন করেছি। এখানে চান্দু স্টেডিয়াম নিয়ে বিসিবি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার মধ্যে সম্পর্কের একটি টানাপোড়ন ছিল সেটা কেউ আমাকে জানায়নি।'

'বগুড়া থেকে বিসিবির মালামাল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যাহারের বিষয়ে আমি কোনো চিঠিও পাইনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সেটা সংগ্রহ করেছি। সেখানে অসহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। পদাধিকার বলে আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, সেই কারণে বিসিবির লীগের মধ্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার লীগ কেন হচ্ছে সেই বিষয়ে বিসিবি আমার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারতো কিন্তু বিষয়টি বিসিবি আমাকে জানায়নি।'

'তবে বিষয়টি আজকে জানতে পেরে বগুড়াবাসীর খেলার স্বার্থে ইতিমধ্যেই আমি বিসিবির সভাপতি এবং যুব ক্রীড়া মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছি যাতে বিসিবি ভেন্যুটি প্রত্যাহার না করে। সেই সঙ্গে অনুরোধ করেছি যেন বিসিবি আমাকে আরো কয়েক মাস দায়িত্ব দেয় যেন বিসিবির সব খেলা সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়,' বলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল।

এই বিষয়ে বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আব্দুল বাতেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আপনি সিইওকে জিজ্ঞাসা করেন তিনি এই বিষয়ে বলতে পারবেন।'

এই বিষয়ে দ্য ডেইলি ষ্টার থেকে বিসিবির সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এটা বিসিবির অফিসিয়াল ডিসিশন। আপাতত বগুড়া থেকে আমাদের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে ঢাকায় আনা হচ্ছে।'

তবে এনএসসি বরাবর লিখিত এক চিঠিতে নিজামউদ্দিন লিখেছেন, 'বিগত কয়েক বছর যাবত বগুড়া ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার ফলে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্ট / লিগ আয়োজন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড উক্ত স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। উক্ত ভেন্যুতে কর্মরত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দকে ইতিমধ্যেই অন্য ভেন্যুতে বদলি করা হয়েছে।'

২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আইসিসি বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরে স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়।

ওই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই ভেন্যুতে পাঁচটি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয়, যার চারটিতেই জয় লাভ করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই মাঠেই টাইগাররা প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কাকে হারাতে সক্ষম হয়। একটি টেস্ট ম্যাচও গড়িয়েছিল স্টেডিয়ামটিতে যেখানে লঙ্কানদের কাছে ১০ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।

এই মাঠে সবশেষ ইংল্যান্ড 'এ' দল এসে খেলে গেছে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে)। এরপর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এখানে কোনো আন্তর্জাতিক  ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

4h ago