রয়ের সেঞ্চুরির পর বাটলার-মঈন-কারানের ঝড়ে ইংল্যান্ডের ৩২৬    

Jeson Roy
ইংলিশ ব্যাটারদের বাউন্ডারি এভাবে দেখা ছাড়া যেন কোন উপায় ছিল না মোস্তাফিজদের। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ওপেন করতে নেমে ডানা মেললেন জেসন রয়, আগ্রাসী মেজাজে তুললেন সেঞ্চুরি। জস বাটলারের ব্যাটে পাওয়া গেল আক্রমণাত্মক ঝাঁজ। ফিফটি করলেন তিনিও। শেষ দিকে ঝড়ো ইনিংস খেললেন মঈন আলি আর স্যাম কারান। বাংলাদেশের বোলারদের নিস্তেজ করে তিনশো ছাড়ানো পুঁজি আনল ইংল্যান্ড। 

শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাটিং পেয়ে  ৭ উইকেটে ৩২৬ রান করেছে ইংল্যান্ড। দলকে বড় পুঁজি এনে দিতে ১২৪ বলে সর্বোচ্চ ১৩২ রান করেন রয়। অধিনায়ক বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৬৪ বলে ৭৬ রান। সাতে নেমে মঈন করেন ৩৫ বলে ৪২। ১৯ বলের ক্যামিওতে আটে নেমে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন কারান।

আগের ম্যাচে ২১০ রান তাড়া করতে গিয়ে ৭ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। মিরপুরের চিরায়ত উইকেটে আগে ব্যাট করতে চায় যেকোনো দল। বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল সবাইকে অবাক করে শুরুতে বাছেন ফিল্ডিং। ইনিংস বিরতির সময় এই সিদ্ধান্তের কারণে অস্বস্তি টের পেতে পারেন তিনি। টস জিতলে আগে ব্যাটিং নিতেন বলে জানিয়েছিলেন বাটলার। টস হেরেও সেটা পেয়ে যাওয়ার পর এই পুঁজি নিয়ে তামিমের ঠিক উল্টো অবস্থায় থাকার কথা তার।

এদিন উইকেটে দুইরকম বাউন্স দেখা যায়নি, তবে মন্থরতা কিছুটা ছিল। বাইশ গজের পরিস্থিতি ভালো দেখে নিজেদের মেলে ধরতে সমস্যা হয়নি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পটু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।

ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরুর পথে ছিল ইংল্যান্ড। সপ্তম ওভারে গিয়ে তারা খায় প্রথম ধাক্কা। আগের ম্যাচে দারুণ করা তাসকিন এদিনও ধরে রাখেন ছন্দ। তিনিই শিকার করেন প্রথম উইকেট। তাসকিনের বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ফিল সল্ট। নিচু ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় হাতে জমান নাজমুল হোসেন শান্ত।

আগের ম্যাচে রান না পাওয়া রয় থিতু হয়ে যান। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানো ডাভিড মালানের সঙ্গে তার জুটি জমে যায়।

Jason Roy
সেঞ্চুরির পর জেসন রয়। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

স্পিন বলে সুইপ, রিভার্স সুইপে আর পেসে ড্রাইভ অব্যাহত রেখে রান বাড়াতে থাকেন রয়। মালান ছিলেন থিতু হওয়ার চেষ্টায়। রয়ের আগ্রাসী মেজাজে ৫৪ বলের জুটিতে চলে আসে ৫৮ রান। যাতে ৩৫ বলে ৪২ রানই রয়ের।

১৬তম ওভারে ৬০ রানের জুটিটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার ভেতরে ঢোকা বল লাইন মিস করে পায়ে লাগিয়ে এলবিডব্লিউতে কাবু হন ১৯ বলে ১১ করা মালান। জেমস ভিন্স এসে রয়কে সঙ্গ দিতে পারেননি। বেশ খানিকটা সময় নিয়েছিলেন থিতু হওয়ার। কিন্তু লাভ হয়নি। তাইজুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাত্র ৬ রান করে।

রয় খেলতে থাকেন সেই শুরুর মেজাজে। বাঁহাতি স্পিনারদের বলগুলো বারবার রিভার্স সুইপ করে যাছিলেন তিনি, সফলও হচ্ছিলেন। অধিনায়ক বাটলার এসেই বাউন্ডারি পেয়ে যান। চতুর্থ উইকেটে জমে উঠে তাদের জুটি।

Jos Buttler
জস বাটলারের আগ্রাসী ব্যাটিং। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সেঞ্চুরির পরও ছুটছিলেন রয়, বাটলার দেখাচ্ছিলেন মুন্সিয়ানা। মাঝের ওভারে বাংলাদেশকে চরম হতাশায় ডুবাতে থাকেন তারা।

রয়ের হাতে বিস্তর ভুগলেও তাকে পরে ফেরাতে পারেন সাকিব আল হাসান। ৩৬তম ওভারে তার বলে সুইপের চেষ্টায় লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন ইংলিশ ওপেনার। ১৮ চার ও ১ ছক্কায় ১৩২ রানে থামেন রয়। চতুর্থ উইকেটে ভাঙে ৯৩ বলে ১০৯ রানের জুটি।

Moeen Ali
মঈন আলি আনেন জুতসই রান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এরপর উইল জ্যাকসকে দ্রুতই তুলে নেন তাসকিন। বাটলারকে আটকানো যাচ্ছিল না। মঈনকে নিয়ে আরেকটি ঝলমলে জুটি পেয়ে যান তিনি। স্লগ ওভারে গিয়ে অগ্নিমূর্তি নেন বাটলার। দারুণ সব শটের বাহারে ছুটতে থাকেন তিনি। মিরাজকে পর পর দুই ছক্কা মারার পর দারুণ রিটার্ন ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ৭৬ করে যান ইংল্যান্ড অধিনায়ক।

সপ্তম উইকেটে মঈনের সঙ্গে ৪২ বলে ৫২ রানের জুটি দিয়ে যান বাটলার।  বাকিটা যেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে সারতে চেয়েছিলেন মঈন। তবে তাকে থামান তাসকিন। লিটন দাসের তালুবন্দি হয়ে ফেরার আগে ৪২ রানের ইনিংস খেলে যান এই অলরাউন্ডার।

আগের ম্যাচে বিশ্রামে থাকা কারান নামার পর থেকেই তার ব্যাট ছিল উত্তাল। অল্প সময়ের উপস্থিতিতে ২ চার ও ৩ ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ঢঙে ৩৩ করেন তিনি।

বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ব্যবহার করে কেবল পাঁচ বোলার। কার্যকর কোনো ষষ্ঠ বোলার নেইও একাদশে। তাইজুল ইসলাম ছাড়া বাকি সবাই ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি গড়ে রান দেন। তাসকিন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট পান ৬৬ রানে। ২ উইকেট নিতে মিরাজের খরচা ৭৩ রান। আগের ম্যাচে হতাশ করা মোস্তাফিজুর রহমান এদিনও ছিলেন বিবর্ণ। ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য।

সিরিজ বাঁচাতে রেকর্ড রান তাড়া করে জিততে হবে বাংলাদেশকে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২১ রান তাড়া করে জেতাই বর্তমান সর্বোচ্চ।

Comments

The Daily Star  | English
National election

Political parties must support the election drive

The election in February 2026 is among the most important challenges that we are going to face.

9h ago