বিলিভ ইট অর নট

মটরশুঁটি নিয়ে পিথাগোরাসের অদ্ভুত বিশ্বাস ও মৃত্যুর নেপথ্যে

মটরশুঁটি নিয়ে পিথাগোরাসের অদ্ভুত বিশ্বাস ও মৃত্যুর নেপথ্যে
ছবি: সংগৃহীত

পিথাগোরাসের নাম শুনলে আমাদের মনে পড়ে যায়, পাঠ্যবইয়ে থাকা তার সেই উপপাদ্যের কথা। এই উপপাদ্যে সমকোণী ত্রিভুজের ৩ বাহুর মধ্যকার সম্পর্ক দেখিয়েছিলেন তিনি। তার উপপাদ্য অনুসারে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ এর লম্ব ও ভূমির বর্গের যোগফলের সমান।

তবে এটুকু পড়েই আবার ঘাবড়ে যাবেন না! আমরা এখানে সেই উপপাদ্য প্রমাণ করতে যাচ্ছি না। বরং, এই উপপাদ্যের প্রণেতা পিথাগোরাসের অদ্ভুত এক বিশ্বাস নিয়েই বরং কথা বলা যাক।

পিথাগোরাসকে নিয়ে আমরা যা জানি বা যতটুকু জানি, তার সিংহভাগই প্লেটো ও সক্রেটিসের লেখা থেকে। পিথাগোরাস 'মেটেমসাইকোসিস'-এ বিশ্বাস করতেন। অর্থাৎ, আত্মা অবিনশ্বর ও এক দেহ থেকে অন্য দেহে প্রবেশ করতে পারে- এমন বিশ্বাস ছিল তার। তিনি মনে করতেন, মরণের পর আত্মা সেই ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য কোনো মানবদেহে, এমনকি অন্যান্য প্রাণির দেহেও স্থানান্তরিত হতে পারে।

দার্শনিক পর্ফিরির মতে, 'পিথাগোরাস মনে করতেন যাদের আত্মা আছে, তারা সবাই আন্তঃসম্পর্কিত।'

এই বিশ্বাস থেকেই পিথাগোরাস শাকাশি হয়েছিলেন ও শুরু হয়েছিল 'পিথাগোরিয়ানিজম' এর। যদিও এটিকে একটি 'কাল্ট' মনে করা হতো, তবে সংঘের সদস্যরা মূলত পিথাগোরাসের 'মেটেমসাইকোসিস' ও শাকাশি আহারের ব্যাপারগুলোই মানতেন। তবে এটি ছিল গুপ্তসংঘ, পিথাগোরাস নিজেও কোনো বই লিখে যাননি কোনো ব্যাপারে; তাই তাদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে তেমন কোনো কিছু জানা যায় না।

শাকাশি হওয়াটা সেই সময়ে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। দার্শনিক প্লুটার্ক, গ্রিক প্রাণিবিজ্ঞানী ও দার্শনিক থিওফ্রস্টাস শাকাশি ছিলেন৷ তবে পিথাগোরাসের শিমজাতীয় সব সবজিতেও ছিল অনীহা, বিশেষ করে মটরশুঁটিতে৷

কিন্তু কেন তিনি মটরশুঁটি এড়াতেন? এ বিষয়ে প্রচলিত আছে, পিথাগোরাসের বিশ্বাস ছিল মটরশুঁটির অভ্যন্তরটা মৃতদের আত্মার বসবাসক্ষেত্র হয়ে থাকতে পারে! মটরশুঁটির আকৃতি ও মাংসল গঠন তাকে এমন ভাবতে প্ররোচিত করেছিল। তাই তার মনে হতো, মটরশুঁটি খাওয়াটা একরকম নরখাদক হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার!

তবে অন্য আরেকটি মতানুযায়ী, কারণটি ভিন্ন। মটরশুঁটির সঙ্গে ভ্রূণের ফিটাস, মানুষের মাথা, এমনকি নর ও নারী যৌনাঙ্গের সাদৃশ্যও খুঁজে পাওয়া সম্ভব! এছাড়া উদ্ভিদটির সরু স্টেমগুলোকে দেবতা হেইডেস এর সাম্রাজ্যের প্রবেশদ্বার বলেও মনে করা হতো!

তবে কারণ যা-ই হোক, শিমজাতীয় সব উদ্ভিদ ছিল পিথাগোরিয়ানিজমে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

তবে এই ব্যাপারটি পরোক্ষভাবে হয়তো তার মৃত্যুর জন্যও দায়ী! কীভাবে তা হতে পারে?

সমস্যাটি হয়েছিল গ্রিসের ধনাঢ্য এক ব্যক্তির পুত্রকে সংঘে যোগদানের জন্য মনোনীত না করায়। ছেলেটির পক্ষে পরিপূর্ণভাবে শাকাশি হওয়া, তার সঙ্গে শিমজাতীয় সমস্ত উদ্ভিদ খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই পিথাগোরাস তাকে সংঘে অন্তর্ভুক্ত করেননি। প্রতিশোধ হিসেবে সেই ছেলেটি শহরের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলে তার বিরুদ্ধে। এর ফলে একসময় পিথাগোরাসের সংঘ সদস্যদের ওপর ধেয়ে আসে তীব্র আক্রমণের তীর; অল্প কয়েকজনই সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন৷

পিথাগোরাস নিজে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন, পেছনে তখন পুড়ছে সংঘ ভবন। কিন্তু অদৃষ্টের কী পরিহাস! দৌড়াতে দৌড়াতে তিনি এসে পড়েন বিশাল এক মটরশুঁটি খেতের সামনেই। তার সামনে পথ খোলা ছিল একটিই-খেতের ভেতর দিয়ে দৌড়ে যাওয়া। কিন্তু তাতে দুমড়ে-মুচড়ে যেতো খেতে থাকা মটরশুঁটি।

পিথাগোরাস নিজের বিশ্বাস থেকে একচুল সরেননি। সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর উত্তেজিত জনতা তাকে নাগালে পায়। উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয় তাকে। নিথর পিথাগোরাস লুটিয়ে পড়েন মটরশুঁটি খেতের ওপরে।

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago