৫০ পেরোলে দেখা দিতে পারে যেসব শারীরিক সমস্যা

প্রতীকী ছবি

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ। বয়স ৫০ বছর পেরোলেই দেখা দিতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

হৃদরোগ: প্রতি বছর ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বয়স ৫০ বছর পেরোনো একজন ব্যক্তির হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ। হৃদরোগের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং পিঠে, কাঁধে বা ঘাড়ে ব্যথা, ঘাম, মাথা ঘোরা বা বমি ভাব।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, ধূমপান না করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে।

স্ট্রোক: স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যায়। যদি দুর্বলতা, অসাড়তা বা কথা বলতে সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাওয়া, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম ও ধূমপান ত্যাগ করে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অ্যানিউরিজম: হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা সম্ভব হলে তা অ্যানিউরিজম হওয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে দিতে পারে। রক্তনালীর নির্দিষ্ট কোনো জায়গার অস্বাভাবিকতা বা দুর্বলতার জন্য নালির বাইরের দিকে বুদবুদ বা বেলুনের মতো ফুলে ওঠাকে অ্যানিউরিজম বলে। এর কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোকও হতে পারে। এই রোগের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যথা, বমি ভাব, মাথা ঘোরা, ত্বকে আড়ষ্টতা এবং দ্রুত হৃৎস্পন্দন।

পিত্তপাথর: পিত্তপাথরের কারণে পেটে উপরের অংশে তীব্র ব্যথা হতে পারে। স্থূলতা, ডায়াবেটিস, ক্রোনস ডিজিজ থাকলে এবং ব্যায়াম না করার কারণে পিত্তপাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস: প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয় প্রদাহ থেকে মারাত্মক পেটে ব্যথা, বমি ভাব, বমি, জ্বর হতে পারে। এমনকি এর কারণে মৃত্যুও হতে পারে। পিত্তথলিতে পাথর, অতিরিক্ত মদ্যপান, উচ্চ ক্যালসিয়ামের মাত্রা বা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডস এর কারণ হতে পারে। এই রোগের লক্ষণ থাকলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

হাড় ক্ষয়: বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় হতে পারে এবং ভেঙে যেতে পারে, বিশেষ করে নারীদের। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও ওষুধের মাধ্যমে নতুন করে হাড় ক্ষয় কমানো যেতে পারে বা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

রেটিনার সমস্যা: যদি রেটিনা চোখের বাইরের প্রাচীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবে না এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। যদি ভাসমান কিছু দেখা যায় বা আলোর ঝলকানি অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে চিকিত্সার পরামর্শ নিন।

কিডনিতে পাথর: কিডনির পাথর হচ্ছে একটি শক্ত ক্যালসিয়ামের গুটি, যা প্রচণ্ড ব্যথা তৈরি করে, সংক্রমণ করতে পারে, প্রস্রাবে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। প্রচুর পানি পান করার মাধ্যমে কিডনির পাথর প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ বেশি হয়।

নিউমোনিয়া: ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া ৫০ ঊর্ধ্বদের বেশি হয়। একে নিউমোকোকাল নিউমোনিয়া বলা হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এতে রোগ আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ বেশি পায়। এর জন্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের একটি টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেয়।

স্পাইনাল স্টেনোসিস: স্পাইনাল স্টেনোসিস ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, কিন্তু হঠাৎ করেই সেটা বুঝতে পারবেন। আর্থ্রাইটিস মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ুপথকে সংকুচিত করে দেয়। এর ফলে পিঠে বা ঘাড়ে ব্যথা, অসাড়তা বা খিঁচুনি হতে পারে। ওষুধ, ম্যানুয়াল থেরাপি বা সার্জারির সাহায্যে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

বাত: বাতের সমস্যা থাকলে হঠাৎ ব্যথা অনুভব হয় এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, বিশেষত বুড়ো আঙুল ফুলে যায়। ইউরিক অ্যাসিড জমে এই সমস্যাটি তৈরি হয়। রেড মিট ও শেলফিশ বেশি খেলে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে, উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খেলে এই রোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ফ্রুক্টোজ, সোডা সুইটনার ও চর্বির কারণেও এই রোগ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

পালমোনারি এমবোলিজম: ফুসফুসের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে সেটাকে পালমোনারি এমবোলিজম বলা হয়। ৫০ বছর বয়সের পরে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদি বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সেইসঙ্গে এই রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশির সঙ্গে রক্ত আসা, পায়ে ব্যথা ও চামড়া নীলাভ হয়ে যাওয়া।

হৃদরোগ থাকলে, সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে বা দীর্ঘ সময় উড়োজাহাজ বা গাড়ির মতো ছোট জায়গায় বদ্ধ থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Sagar-Runi murder: Inconclusive DNA test results stall probe

The task force investigating the 2012 murders of journalist couple Sagar Sarowar and Meherun Runi in its report submitted to the High Court last month said it required more time to complete the probe as the results of the DNA samples collected from the scene were inconclusive.

5h ago