পাহাড় কাটার সংবাদের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলা, ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা

মামলা প্রত্যাহারের চাপে আতঙ্কে পরিবার
হামলায় আহত আইয়ুব মিয়াজী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে সাংবাদিককে মারধর করে দোতলা ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় মূল আসামিদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

পরিবারের অভিযোগ, পাহাড় কাটার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক জনবাণী ও স্থানীয় দৈনিক সাঙ্গুর চন্দনাইশ উপজেলা প্রতিনিধি আইয়ুব মিয়াজীর ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।

মঙ্গলবার বিকেলে এই হামলার ঘটনায় সেদিন রাতেই আইয়ুব মিয়াজীর বাবা আব্দুস শুক্কুর চন্দনাইশ থানায় মো. আলাউদ্দিন (৩৫) ও মো. ফারুক (২৬) এবং অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। মামলা তুলে নিতে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল তাদের চাপ দিচ্ছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, এলাকায় পাহাড় কাটার বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন আইয়ুব মিয়াজী। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং এসি ল্যান্ডকে পাহাড় কাটার তথ্য দেন। এ কারণে পাহাড় খেকোরা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। এর এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে তারা আইয়ুবের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে লাঠিসোঁটা ও লোহার রড নিয়ে তাকে পিটিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ফেলে দেন।

নির্যাতিত সাংবাদিকের বাবা আবদুস শুক্কুর আজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাহাড় কাটায় জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী মহল মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।'

হামলায় আহত সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। তিনি এখন কথা বলতে পারলেও বুকে ব্যথা অনুভব করেন। চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তার পাঁজরের হাড়ে তিনটি ফ্র্যাকচার রয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন সুস্থ হতে সময় লাগবে।

পাহাড় কাটার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আলাউদ্দিন পাহাড় কাটার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং ফারুক তার সহযোগী। তারা আমার উপর হামলা করেছে, আমাকে ভবন থেকে ফেলে দিয়েছে। এখন তারা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইয়ুবের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একজন চিকিৎসক জানান, তার অবস্থা স্থিতিশীল।

চন্দনাইশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তারে স্থানীয় থানা পুলিশ আন্তরিক নয়।

দেলোয়ার বলেন, বুধবার পুলিশ বাবু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটা শুধুই 'আই ওয়াশ'।

তিনি আরও বলেন, 'সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কারা হামলার সঙ্গে জড়িত। ফুটেজে যাদেরকে আইয়ুবের ওপর হামলা করাতে দেখা যাচ্ছে তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।'

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, মূল আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। তাই তাদের খুঁজে বের করতে সময় লাগছে।'

যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বলেন, কেউ ভিকটিমদের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিলে তারা স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন।

তিনি বলেন, 'অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে গেছে-এই কথা বলে স্থানীয় থানা পুলিশের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ যেকোনো মূল্যে তাদের গ্রেপ্তার করবে। আমি ইতিমধ্যে চন্দনাইশ থানার ওসিকে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি। আমি আবারও তার সঙ্গে কথা বলব।

 

Comments

The Daily Star  | English

Remittance rose 9% in August

However, August’s inflow was 2.22 percent lower than the previous month

1h ago