রোয়াংছড়িতে ২ গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৮ জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর

ময়নাতদন্তের শেষে মরদেহগুলো পরিবার ও পাড়াবাসীদের কাছে তুলে দেওয়া হয়। ছবি: স্টার

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় সশস্ত্র সংগঠনের ২ গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত ৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।

রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়নাতদন্তের শেষে মরদেহগুলো পরিবার ও পাড়াবাসীদের কাছে তুলে দিয়েছি।'

তবে নিহত সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে দেখা যায়, বম জনগোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন মর্গে রাখা মরদেহ দেখার জন্য এসেছেন। মরদেহ দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তবে একই পাড়ার ৬ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

প্রবীণ এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমার নাতির মরদেহ নাকি এখানে আছে, তাই দেখতে এসেছি। সে তো কুকি-চিন সদস্য নয়। তার বাবা নেই। তার বাবা যখন মারা যায়, তখন সে অনেক ছোট। বিধবা মা, বউ ও ছোট এক সন্তান নিয়ে গ্রামের আর ১০ জনের মতোই সে ছিল। এখন তার পরিবারকে কে দেখবে?'

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের (বিএসসি) সাধারণ সম্পাদক লাল থাং জেল বম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিহতরা সবাই বম জনগোষ্ঠীর। তাদের মধ্যে ৬ জন রুমা উপজেলার জুরভারংপাড়ার, একজন রৌনিনপাড়ার ও একজন রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইংখিয়াংপাড়ার বাসিন্দা।'

লাল থাং জেল বম জানান, এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন লাল ঠাজার বম (২৭), সাংখুম বম (৪৫), ভানলাল দু বম (৩৫), সানথির থাং বম (২২), বলরেম বম (১৭), লাললিয়ান ঙাক বম (৪৪)। তাদের মধ্যে লাল ঠাজার বম জুরভারংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি।

তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন পাইংখিয়াংপাড়ার জিহিম বম (৪০) এবং রৌনিনপাড়ার বমরাম থাং।

নিহতদের মধ্যে ৭ জনই সাধারণ গ্রামবাসী, যাদের মধ্যে একজন সরকারি কর্মচারী। তবে, বমরাম থাংয়ের বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।

লাল থাং জেল বম জানান, বমরাম থাং কুকি-চিন সদস্য কি না, তা নিয়ে এলাকাবাসীর সন্দেহ আছে।

এই ঘটনার পর বমপাড়াগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে পরিবার নিয়ে জেলা ও উপজেলা সদরের কাছে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) তরিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতাদের মাধ্যমে দাফন করার জন্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় নিহতদের নাম-পরিচয় দেখানো হলেও আমাদের পক্ষ থেকে তাদের পরিচয় দেওয়া হয়নি।'

গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে খামথামপাড়ায় ২ গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয় বলে জানান রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি হয়। ওই এলাকায় বসবাসকারী খিয়াং জনগোষ্ঠীর ৯০টিরও বেশি পরিবার এবং পাশের বম পাড়ার অধিবাসীরা আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে যান।

ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, 'শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে  খামথানপাড়া থেকে গুলিবিদ্ধ ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Promises vs reality: RU students still face poor food, housing woes

RU has around 32,000 students but its 17 residential halls can house only about 10,000

30m ago