রাজশাহীতে আরও এক কৃষকের আত্মহত্যাচেষ্টা, তদন্ত কমিটি

রাজশাহী
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মুকুল সরেন (৩৫) নামে আরও এক কৃষক কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

তার স্বজন জানিয়েছেন, বোরো চাষে সেচ নিশ্চিত করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

মুকুল উপজেলার গোলাই গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার ভোররাত থেকে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সরেনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখন তিনি কথা বলতে পারছেন।

আজ মঙ্গলবার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সোমবার দিবাগত রাতে তিনি সরেনকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সে সময় তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, সেচের পানি না পাওয়ায় সরেন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

'জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে,' বলেন আহমেদ।

গত বছরের মার্চে পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি সেচের পানি না পেয়ে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন।

অভিনাথের স্ত্রী বাদী হয়ে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি ও গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন।

পানি সরবরাহে গাফিলতির মাধ্যমে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

এই অঞ্চলের কৃষি কাজের তত্ত্বাবধায়ক বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সাখাওয়াতকে অপসরণ করে গভীর নলকূপ অপারেটর হিসেবে হাসেম আলী বাবুকে নিয়োগ দেয়।

একই সেচ কর্মসূচির আওতায় চলতি বছর মুকুল সরেন চুক্তিতে নেওয়া প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের দুটি জমিতে বোরো ধান চাষ শুরু করেন।

'ফেব্রুয়ারিতে চাষাবাদ শুরুর সময় সরেন ঠিক মতো সেচ পেত,' বলেন তার মা দুলী হেমব্রম। হাসপাতালে ছেলের দেখাশোনা করছেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, 'এখন ধানে ফুল আসার সময়। এই সময় জমিতে পানি থাকা প্রয়োজন। এই সময় সরেন টানা ৮ দিন পানি পায়নি।'

কথার সূত্র ধরে সরেন বলেন, 'অপারেটর হয়রানি করেছে। গত প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে রোজ তিনি পরের দিন পানি দেবেন—প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরিয়ে দিতেন।'

সরেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

তিনি জানান, সেচ পাইপ মেরামত বাবদ অপারেটর তার কাছ থেকে ৮০ টাকা পাবেন।

'চাষাবাদে অন্য খরচ মেটাতে টাকা দিতে পারেনি। সেই কারণে অপারেটর পানি বন্ধ করে রেখেছিল,' বলেন তিনি।

পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ৭ কাঠা জমির ধান গাছ হলুদ হতে শুরু করে। ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। ৩ বিঘার আরেকটি জমির ধানও হলুদ হতে শুরু করে।

'আমার অসহায় লাগছিল। আমি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হওয়ায় কাউকে জোর করার সক্ষমতা আমার নেই,' বলেন সরেন।

সেচের ঘর থেকেই ২ বোতল কীটনাশক সংগ্রহ করেছিলেন সরেন। রোববার বিকেলে অপারেটরের সামনেই তিনি এক বোতল কীটনাশক পান করেন। বাবু আরেক বোতল কেড়ে নিয়ে চলে যান। এরপর সরেন হেঁটে বাড়িতে চলে যান। রাতে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হাসপাতালের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, সোমবার আনুমানিক রাত ৩টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেই সময় রাজশাহীর জেলা প্রশাসক তাকে হাসপাতালে দেখতে আসেন এবং সরেন পুরো ঘটনা তাকে খুলে বলেন। জেলা প্রশাসক চিকিৎসা ব্যয় বাবদ তাকে কিছু টাকা দেন এবং আশ্বাস দেন সরেন ন্যায় বিচার পাবেন।

'ভবিষ্যতে কেউ সেচের পানি না পেলে যেন সরাসরি আমাকে জানাতে পারে সে জন্য কৃষকদের আমার মোবাইল ফোন নম্বর দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি,' ডেইলি স্টারকে বলেন জেলা প্রশাসক।

তিনি আরও বলেন, 'উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আরও নিবিড়ভাবে কৃষি কাজ পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। ফসলি জমিতে সেচের পানি সরবরাহে কোনো রকম গাফিলতি আমরা প্রশ্রয় দেবো না।'

মুকুল সরেনের দুলাভাই রবি কিসকুও হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'এই অঞ্চলের পানি সংকটের বড় কারণ অপারেটরের সহযোগিতায় অবৈধভাবে অতিরিক্ত জমিতে চাষাবাদ ও অতিরিক্ত পানি খরচ।'

তিনি বলেন, 'গভীর নলকূপ থেকে ২৫০ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু বাড়তি অর্থ আয় করতে অপারেটর আরও জমি সেচ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মোট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫০ বিঘায়।'

তিনি বলেন, '২৫০ বিঘা জমিতে পানি পেতে ৭ দিন সময় লাগে। যখন জমির পরিমাণ ৪৫০ বিঘা হয়ে যায়, তখন পানি পেতে কৃষক ১০ দিনের বেশি অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়।'

'পানিই পাওয়া যাচ্ছে না, এই অবস্থায় গভীর নলকূপের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে পানি সংকট তীব্র হচ্ছে,' বলেন রবি কিসকু।

যোগাযোগ করা হলে অপারেটর হাশেম আলী বাবু বলেন, 'তাপপ্রবাহ চলছে বলে কৃষকদের প্রত্যেকে পানির জন্য চাপ দিচ্ছে। সবাইকে একইসঙ্গে আমি কীভাবে পানি দেবো!'

সেচ কর্মসূচিতে অতিরিক্ত জমি অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন বাবু। তিনি আরও বলেন, 'আমি তার (মুকুল সরেন) কাছ থেকে এক বোতল কীটনাশক ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। সে আরেক বোতল কীটনাশক খেয়েছিল কি না জানি না।'

'সরেন যখন কীটনাশক খাওয়ার ভয় দেখাচ্ছিলেন, তখন আমি তাকে জমিতে যেতে বলেছিলাম। আমি তাকে পানি দিচ্ছিলাম কিন্তু তিনি বাড়িতে চলে যান,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

'Most of them had lost parts of their skulls'

167 admitted to National Institute of Neurosciences & Hospital during July uprising, doctor tells ICT-1

10m ago