বাজেট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, ঠকবেন না: ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী

জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীরা খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, 'এবারের বাজেট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনারা ঠকবেন না।'

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এনবিআর এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, 'সারাবিশ্বে আজ অর্থনীতির মন্দা অবস্থা বিরাজমান। তার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এ দেশের বেসরকারি খাত। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১ থেকে ৩৫তম স্থানে এসেছে। এর অংশীদার সবাই। উন্নয়নশীল দেশ ভারত, মালয়েশিয়ার কাতারে আজ আমরাও। সবাইকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।'  

মুস্তফা কামাল আরও বলেন, 'বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অর্জন সেটি অসাধারণ। এ বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আগের বছর যা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কোভিডের আগে ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতির যে অগ্রগতি সেটা অসাধারণ।'

বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আজ প্রশংসা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, 'এবারের বাজেটে সবাই খুশি হবেন। উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। এনবিআর সেই আলোকে নীতি প্রণয়ন করছে।'

তিনি ব্যবসায়ীদের উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর আহবান জানান।    

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ কমাতে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) হার ধাপে ধাপে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। বর্তমানে অগ্রিম আয়করের হার ৫ শতাংশ। 

তিনি সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকাভুক্ত ভোগ্য পণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতা বহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করেন। 

বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য সামগ্রী যেমন-চাল, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনি, সকল প্রকার ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর ২ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। 

এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মহিলা ও সিনিয়র সিটিজেনদের ক্ষেত্রে তা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি পণ্য ও সেবাখাতে মূল্য সংযোজন ভিত্তিক একক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, একক ১৫ শতাংশ আরোপ করলে পণ্য ও সেবাখাত বিভিন্ন এসআরওভিত্তিক অসম করহার ও জটিলতা থেকে রেহাই পাবে। একইসঙ্গে কর ব্যবস্থা সহজ ও সরল হবে।

পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করহার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যমান করহার ব্যবসা খরচ বহনে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া মূসকের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ভ্যাটের নেটের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। 
করদাতাদের ব্যবসা পরিচালনা ও মূসক কর্তৃপক্ষের তদারকি সহজ করতে ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল, রিফান্ড, অডিটসহ সব কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অটোমেশন নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেন।

বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম এইচ এস কোড সংক্রান্ত জটিলতায় তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কাপড় বা সুতা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ অঙ্গীকারনামা গ্রহণ সাপেক্ষে ছাড়করণের প্রস্তাব করেন।

বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ম্যানমেড ফাইবারের ওপর আরোপিত সব ধরনের শুল্ক কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সিইটিপি ও ইটিপির যন্ত্রপাতির উপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago