ঈদের নতুন জুতা পরার আগেই পা হারাল হোসাইন

ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পা হারানো শিশু হোসাইন। ছবি: শাহীন মোল্লা

ঈদে নতুন জামা-জুতা কিনে দেওয়ার সামর্থ ছিল না শিশু মো. হোসাইনের কৃষক বাবার। কিন্তু নতুন পোশাকের জন্য নাছোড়বান্দা তার আট বছরের মন। আবদার করেছিল বড় ভাই হারুনুর রশিদের কাছে।

ঈদের আগের দিন বড়ভাই উপজেলা সদরে নিয়ে জামা-জুতো কিনে দিলেও, হোসাইন বাড়ি ফিরতে পারেনি। ফেরার পথে পায়ে গুরুতর আঘাত পেল ভ্যানের ধাক্কায়। সেখান থেকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (পঙ্গু) হাসপাতালে।

এখনো হোসাইন জানে না যে তার একটি পা আর নেই। আজ রোববার দুপুরে তার বা পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। সে শুয়ে আছে, অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব থাকায় এখনো কিছু বুঝতে পারছে না। ভাবছে পায়ে শুধু ব্যান্ডেজ।

চুয়াডাঙ্গার জীবনগরের ধোপাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হোসাইন। হাসপাতালে তার সঙ্গে আছেন বড়ভাই চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন।

পঙ্গু হাসপাতালে হোসাইনের ভাই হারুনের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদকের যখন কথা হয় তখন পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে পাশেই শুয়ে ছিল ছোট ভাইটি। সে যেন দেখতে না পারে তাই একটি কাপড় দিয়ে পা ঢেকে রাখা হয়েছিল।

ডাক্তাররা জীবন বাঁচাতে পা কেটে ফেলেছে—এই কথা তাকে জানানো হয়নি। তাই কথা বলার জন্য হোসাইনের কাছ থেকে একটু দূরে সরে আসার অনুরোধ করেন হারুন।

হারুন জানান, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি করেন তিনি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছোট ভাইটির আবদার পূরণ করতে ঈদের আগের দিন সকালে তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন উপজেলা সদরে। অনেকগুলো বিপণি ঘুরে নিজে পছন্দ করে জামা, প্যান্ট আর জুতা কেনে হোসাইন।

ঈদের কেনাকাটা করে ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যানে পা ঝুলিয়ে বসে বাড়ি ফিরছিল দুইভাই। বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ভ্যানের সঙ্গে তাদের ভ্যানের সংঘর্ষ হয়।

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হারুন বলেন, ব্যাটারিচালিত ভ্যানটির বাম পাশে বসেছিল হোসাইন। আর তিনি ছিলেন ডান দিকে। উল্টো দিক থেকে আরেকটি খালি ভ্যান এসে হোসাইনের বাম পায়ে হাটুর কাছে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে হোসাইনকে জীবননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তাকে আনা হয় পঙ্গু হাসপাতালে।

তিনি জানান, নিজে কিছু না কিনলেও দেড় হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন ভাইয়ের কেনাকাটার জন্য। এই টাকাতেই তার সব কেনাকাটা হয়ে গিয়েছিল।

নতুন পোশাক পরে ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলবে—এর জন্য হোসাইনের যেন তর সইছিল না। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় জীবন বদলে গেল। সে আর কোনো দিন খেলতে পারবে কি না, সেটাও কোনো চিকিৎসক বলতে পারছে না।

তিনি বলেন, পা বাঁচাতে চিকিৎসকরা সব ধরনের চেষ্টাই করেছেন। পায়ের রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, জানতে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গিয়েও পরীক্ষা করা হয়। আজ সকালেও আরেক দফা এই পরীক্ষা হয়। কিন্তু পরে ডাক্তাররা জানান, পা রাখতে গেলে হোসাইনের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। এরপর আজ দুপুর ২টায় তার পায়ে অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়।

তিনি বলছিলেন, পা কেটে ফেলা হতে পারে, হোসাইন এটা আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকদের কথাবার্তায় সে এটা বুঝে ফেলেছিল। এ জন্য সে বারবার অনুরোধ করছিল ডাক্তার যেন তার পা ঠিক করে দেয়।

হারুন ও তার বাবা বলেন, ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার কথা ছিল হোসাইনের। নতুন জামা-জুতা কিনে বাড়িতে ফিরবার সময় তার চেহারায় সেই পুলক দেখেছিলাম। এখন তার ভবিষ্যৎ নিয়েই আমরা শঙ্কিত।

Comments

The Daily Star  | English
earthquake in Bangladesh

Hundreds feared dead after 6.0 magnitude earthquake strikes Afghanistan

The quake was at a depth of 10 km (6.21 miles), GFZ said.

2h ago