এখন সেন্টমার্টিনবাসীর প্রয়োজন খাবার-পানি

ত্রাণের জন্য লাইনে আছেন দ্বীপবাসীর অনেকে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

ঘূর্ণিঝড় মোখা বয়ে যাওয়ার পর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এখনো বিদ্যুৎ ফেরেনি। কোনো কোনো জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। গতকাল বৃষ্টির কারণে সেখানকার রাস্তাগুলোয় পানি জমে আছে। প্রচণ্ড বাতাস। দু-একটি দোকান ছাড়া সবগুলোই বন্ধ।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সেন্টমার্টিনের জেটিঘাট এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসতে পারছেন না বলে অনেকে জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, দ্বীপের জনজীবন এখনো অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে।

তাদের ভাষ্য, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সেন্টমার্টিনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে তৈরি হয়েছে খাবার পানির সংকটও। যদিও কিছু পরিমাণ ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু টেকনাফের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ আপাতত বন্ধ, তাই কোনো জিনিসপত্র সেখান থেকে আনা যাচ্ছে না। দোকানে থাকা জিনিসপত্র প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে। আবার জিনিসপত্র এলে তারপর বিক্রি করতে হবে।'

কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসকের যৌথ উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণে চিড়া, মুড়ি, গুড়, ম্যাচ, মোমবাতি ও পানি দেওয়া হচ্ছে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন বেশিরভাগ পানি লবণাক্ত। খাবার পানির সংকটে আছি। যদি কোনো জায়গায় মিঠা পানির খোঁজ পাওয়া যায়, সবাই মিলে সেখানেই ভিড় করছে।'

'পরিবারে আমরা ৭ জন। যে পরিমাণ ত্রাণ পেয়েছি, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এটুকু ত্রাণ দিয়ে কী হবে, তা বুঝতে পারছি না', বলেন তিনি।

দ্বীপের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এরফান উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবারে সদস্য ৭ জন। ঘরে খাবার বলতে আছে অল্প পরিমাণ আলু আর মুসুর ডাল। আর কিছু নাই। ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেছে।'

মাঝের পাড়ার বাসিন্দা সালামত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৫-৬ দিন যাবৎ ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় খাবারের সংকট তৈরি হয়েছে।'

৪ নম্বর ওয়ার্ডের আয়েশা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রাতে চিড়া-মুড়ি খাইছি। ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে গেছে। ঝড়ের সময় ঘরে খাবার ছিল না। শুধু পানি খেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে আতঙ্কে বসে ছিলাম।'

গতকাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় দ্বীপের কয়েকটি রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাঠের ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে অনেকে আসা-যাওয়া করছেন। পণ্য আনছেন। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। লঞ্চ চলাচল এখনো চালু হয়নি।'

আজ সকাল ১০টার দিকে দ্বীপবাসীদের অনেকে মাঝের পাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জড়ো হয়ে কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসকের যৌথ উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন। ত্রাণ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, তারা একটি ব্যাগে চিড়া, মুড়ি, গুড়, ম্যাচ, মোমবাতি ও পানি পেয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ১ হাজার মানুষ ত্রাণ নেওয়ার জন্য সেখানে গিয়েছেন।

তবে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের দাবি, 'দ্বীপের অবস্থা এখন স্বাভাবিক। কোনো খাদ্য সংকট নেই। গত ২ দিন ট্রলার চলাচল না করায় ভোগান্তি হয়েছিল। এখন সব স্বাভাবিক।'

ত্রাণের জন্য লাইনে আছেন দ্বীপবাসীর অনেকে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

'আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ দিচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

মুজিবুর রহমান জানান, সেন্টমার্টিনে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যবসা হয়। এই ৫ মাসের ব্যবসা দিয়ে এখানকার মানুষ সারা বছরের খরচ চালায়। এখানকার অধিকাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর আছেন জেলে। একদিকে ঘূর্ণিঝড় অন্যদিকে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে মানুষ কষ্টে আছে।

সেন্টমার্টিনে সরকার প্রতিমাসে ৭৭২ জনকে খাদ্য সহায়তা দেয় বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

New Hampshire hamlet tied in first US Election day votes

Kamala Harris and Donald Trump each got three ballots in the tiny community in the northeastern state of New Hampshire

11m ago