বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটে যেভাবে চলছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তাদের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।
বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটে যেভাবে চলছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান
অলঙ্করণ: বিপ্লব চক্রবর্তী

কয়েক সপ্তাহ ধরে লোডশেডিং একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কিছু কিছু কারখানার মালিক ও মিলার উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন, অথবা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহের সঙ্গে মিলিয়ে শ্রমিকদের জন্য নতুন ডিউটি রোস্টার চালু করেছেন।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক আবার সময়মতো পণ্য সরবরাহ ও ক্রেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যয়বহুল ডিজেল ব্যবহার করে উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের মধ্যে অনেকেই এভাবেই তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এতে তাদের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

সব মিলিয়ে কারখানার মালিক ও মিলাররা এই মুহূর্তে মুনাফার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন না।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরবরাহ লাইনে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়া ও নিয়মিত লোডশেডিংয়ের কারণে কিছু মিল মালিক সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।'

তিনি বলেন, 'উইভিং মিল ও ডাইং ইউনিট চালানোর জন্য প্রচুর গ্যাসের চাপ ও বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। কয়েক মাস ধরে গ্যাসের চাপ কম থাকায় টেক্সটাইল মিলাররা ৫০ শতাংশ ধারণক্ষমতা নিয়ে কারখানা পরিচালনা করছেন। কিন্তু, সম্প্রতি ঘন ঘন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এই সংকটের তীব্রতা বেড়েছে।'

'ডিজেলচালিত ইঞ্জিন দিয়ে দিনে ৮ ঘণ্টা কারখানা চালানো সম্ভব নয়। কারণ জেনারেটরগুলোও দীর্ঘ সময় ধরে চললে সমস্যা দেখা দেবে,' বলেন তিনি।

এদিকে গত বছর গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও পাবনার মতো জেলায় তাঁত ব্যবহারকারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

দেশীয় বাজারে সুতা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিটল গ্রুপের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ছোট কারখানার শ্রমিকরা বিদ্যুৎ ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা না করে বাড়িতে চলে যায়।'

গত ২ মে থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকটে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।

কারখানা ও মিলগুলোতে উৎপাদন দ্রুত কমে যাওয়ায় অবিক্রীত সুতার মজুত থেকে যাচ্ছে উল্লেখ করে আলম বলেন, 'বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছোট কারখানা ৩০ শতাংশ ধারণক্ষমতা নিয়ে চলছে।'

গার্মেন্টস রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ক্রেতাদের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ায় তারা খরচ ও মুনাফা কমিয়েছে।

তিনি বলেন, 'উৎপাদন অব্যাহত রাখতে শ্রমিকদের জন্য নতুন ডিউটি রোস্টার চালু করা হয়েছে।'

যেমন- গ্যাসের চাপ বাড়লে প্রতিষ্ঠানটির টঙ্গী ও রাজেন্দ্রপুর ইউনিট স্পিনিং ও ডাইংয়ের কাজ করে এবং বাকি সময় তারা অন্যান্য কাজ করে।

তিনি বলেন, 'গ্যাসের চাপ কম থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রুপটির গ্যাস বিল ৩৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রতি মাসে ৭০ কোটি টাকা হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠান এখন ৫০ শতাংশ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারে।'

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্থানীয় কারখানাগুলো রপ্তানি ও শ্রমিকদের বেতন দিতে সমস্যায় পড়বে।'

তিনি বলেন, 'শেষ পর্যন্ত কারখানা মালিকরা লাভ করতে না পরে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, 'পরিস্থিতি খুবই খারাপ। জ্বালানি ঘাটতি এখন উদ্বেগের বিষয়। ডিজেলচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ব্যবসা চালানো খুব ব্যয়বহুল। ফলে, উৎপাদন কমেছে ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে।'

তিনি বলেন, 'এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে সোলার প্যানেল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের শুল্ক কমানোর দাবি পূরণ হয়নি।'

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সমীর সাত্তারও জসিম উদ্দিনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

তিনি উদ্যোক্তাদের কারখানা পরিচালনায় জ্বালানি সাশ্রয়ী সরঞ্জাম ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of the people who died during the student-led mass protests in July and August.

2h ago