চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহারে জর্জরিত হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল: টিআইবি

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানের একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাজনৈতিক প্রভাব, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসা সেবার মান নিম্নগামী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সেবার মান পড়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে এখন রোগীরাও কম আসছেন। এর ফলে আয় কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। 'হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়, হাসপাতালটিতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতির পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বিনষ্ট করছে। হাসপাতালটিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

টিআইবি বলেছে, যথাযথ আইন ও বিধিমালা না থাকায়, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ট্রেজারার ও ক্ষমতাসীন দলীয় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছে এবং হাসপাতাল পরিচালনা, নিয়োগ, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, অনুদানের অর্থের আয়-ব্যয়সহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় বিডিআরসিএস চেয়ারম্যানকে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। তা ছাড়া, হাসপাতালের জন্য আলাদা মানবসম্পদ কাঠামো এবং আর্গানোগ্রাম নেই। ফলে অপরিকল্পিত নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিসহ হাসপাতালের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়মিত নবায়ন না করা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নির্বাচন করা ও চেয়ারম্যানের কথামতো কাজ না করায় হাসপাতাল পরিচালকের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, পদায়নে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত পছন্দ ও দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডাক্তার নিয়োগে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে- চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ চাওয়ারও অভিযোগ উঠে এসেছে গবেষণায়। রাজনৈতিকভাবে নিয়োগের ফলে প্রশাসনিক কাজে প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ হাসপাতালের প্রাত্যহিক চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনায় চিকিৎসক, নার্স, নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ প্রয়োজনীয় জনবলের ঘাটতি রয়েছে। 

গবেষণায় আরও দেখা যায়, হাসপাতালের ২০ শয্যার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ডায়ালাইসিস সেন্টার থাকা সত্ত্বেও, বিতর্কিত জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে হাসপাতালে একটি বিশেষায়িত ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়। এমনকি জেএমআইকে সুবিধা দিতে হাসপাতালের নিজস্ব মেশিন অকেজো রাখার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ হাসপাতালের বাইরে প্রাইভেট চেম্বার করেন বলে জানা গেছে গবেষণায়। ইন্টার্ন ডাক্তারের মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ভিজিটিং কার্ড প্রদান করেন। হাসপাতালের বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে প্যাথলজি পরীক্ষা ও আলট্রাসনোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'হাসপাতালটিতে এক ব্যক্তির মাধ্যমে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ হওয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিহীনতা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দ ও দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পদায়ন থেকে শুরু করে ক্রয়খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের যে সুনাম ছিল, তা ব্যাপকভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। অন্য হাসপাতালের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ক্রমেই হাসপাতালটি একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এই সুশাসনের ঘাটতি থেকে উত্তরণে সবার আগে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। একইসঙ্গে, ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোর মূলধারায় সুশাসনের মৌলিক উপাদানসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump says not yet made decision on whether to attack Iran

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

1d ago