প্যারিস সামিট: জলবায়ু অর্থায়নে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের ৫ সুপারিশ

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে ৫ দফা সুপারিশ বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন পৃথিবীর অন্যতম জলবায়ু-আক্রান্ত দেশ বাংলাদেশের একদল বিশেষজ্ঞ।

চলতি সপ্তাহের ২২ ও ২৩ জুন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নীতি-নির্ধারকরা একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চুক্তি করতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানেই ৫ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরেন বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক ও ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ড সেক্রেটারিয়েটের প্রধান ড. মো. গোলাম রব্বানী।

প্যারিসের ব্রোংনিয়ার্ট প্রাসাদ এবং ইউনেস্কো ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন।
 
অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সংস্থা এবং বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন।

জলবায়ু অর্থায়নে নতুন এই চুক্তিটি কাজ করবে সেই মানুষদের জন্য, যাদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের তুলে ধরা ৫ সুপারিশ হচ্ছে- আস্থার পুনর্নির্মাণ। অঙ্গীকারের ফাঁকা বুলিতে বিশ্ব এখন ক্লান্ত। এখন কথার সঙ্গে মিল থাকতে হবে কাজের। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির সাফল্যের পর থেকে বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় প্যারিসের প্রতীকী গুরুত্ব অব্যাহত রয়েছে, যদিও বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে এখন অঙ্গীকার কমে আসছে। ঘোষিত অঙ্গীকার অনুসারে পদক্ষেপ দেখা না গেলে এই সম্মেলনটিও এর মূল্য ও বিশ্বাস হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

স্বল্পমেয়াদি নির্বাচনী চক্রের পরিবর্তে জাতীয় নেতাদের এখন অবশ্যই তাদের দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সংকীর্ণ ও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের পরিবর্তে সত্যিকারের নেতৃত্বের উচিত এমন কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যা সেই দেশের এবং এই গ্রহের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ সুরক্ষিত করবে। মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য অর্থবহ পদ্ধতিগত সংস্কার সাধনে বাধার সৃষ্টি করে এই 'স্বল্পমেয়াদিতা'।

'সকলের তরে' দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ: জাতীয় বাজেটে বর্তমান ও আগামীর সংকট উভয়কেই প্রতিফলিত করতে হবে। এটা এখন আর কোনো একটি মন্ত্রণালয়, খাত বা শিল্পের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। যেমন, বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত নানা কার্যক্রমের উর্বর ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে এর প্রতি রাজনৈতিক মালিকানাবোধ, উপযুক্ত নীতিমালা, শিক্ষা-গবেষণার প্রতিশ্রুতিশীল সুযোগ, সরব সুশীল সমাজ, উদ্ভাবনী শিল্প এবং গতিশীল তরুণ আন্দোলন। মূল বিষয় হচ্ছে, এই নেতৃত্ব কৌশলগত ঐক্য এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করবে।

উপযুক্ত পন্থা ও দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজতে নিম্নআয়ের দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া, যারা এরই মধ্যে জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের উপায়-উপকরণ প্রদানে কাজ করছে। এখানে নতুন করে আর 'চাকা আবিষ্কারের' প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটা পুরানো সমস্যা। এর সমাধানও জানা। দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশের ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। এই তহবিলে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ ছোট ছোট সংস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই টাকা নিজে থেকেই টেকসই। সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে এখান থেকে আয় হয়। এটা এমন মানুষদের মধ্যে অর্থ বিতরণ করে, যারা জলবায়ু অভিযোজন এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সম্মুখসারিতে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাজের মাধ্যমে স্থানীয়-নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সমাধানগুলোর প্রসার ঘটানো সম্ভব হচ্ছে।

নারী ও শিশুদের চালকের আসনে রাখা। দুনিয়াজুড়ে দারিদ্র্য ও সংকটের অসম বোঝা বহন করে অভাব সামলানোর ব্যবস্থাপনায় থাকেন নারীরা। তাই প্রতিটি পরিবারের কর্মচাঞ্চল্য, সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ভাবন এবং সংকট মোকাবেলায় সামর্থ্য তৈরিতে তারাই নেতৃত্ব দেন। তদুপরি আজকের তরুণদের চেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে সংকটকে আর কেউ দেখে না, যেহেতু এই তরুণরাই রয়েছেন সবচেয়ে বড় সংকটে। একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থায়ন চুক্তির মাধ্যমে সর্বত্র  নারৗ ও তরুণদের গতিশীলতা ও সম্ভাবনার দ্বার খুলতে হবে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

10h ago