ঈদযাত্রা: উত্তরের পথে নিদারুণ ভোগান্তির শেষ কোথায়

পিকআপে করেই বাড়ি ফিরছেন অনেকে। ছবি: স্টার

আমাদের বাসের ঠিক সামনে থেমে থেমে চলা ট্রাকের ওপর জনা তিনেক নারী বসে না থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ যাত্রায় ওনারা সম্ভবত হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে শেষ রাত অবধি ঢাকার উত্তরাঞ্চলের বাস কাউন্টারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। টয়লেটের সুব্যবস্থা নেই; ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে যানবাহনে ওঠা এবং থেমে থেমে চলতে থাকা। এ এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা যে কারও জন্যই।

আর এই একই অভিজ্ঞতা শতশত নারী-শিশুদের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্ন! যখন লিখছি ঠিক তখনি সহযাত্রী এক ভদ্রমহিলা বাসস্ট্যান্ডের টয়লেটের দুরবস্থার দেখে এসে বলছিলেন, '২ মাস আর কিছু খেতে পারব না।' তিনি প্রথম শ্রেণির এসি বাসের যাত্রী। তার মতো যারা এসি বাসে যাচ্ছেন, তাদের অভিজ্ঞতাই যদি এমন হয়, তাহলে যে নারী-শিশুরা খোলা ট্রাক কিংবা পিকআপে চেপে যাচ্ছেন, তাদের ঈদযাত্রা ঠিক কেমন হবে?

এটাই আমাদের জাতীয় জীবনের চরম বৈষম্যের ছবি। আলাপটা আজ এদিকে না নিয়ে বরং ঈদযাত্রাতেই থাকুক।

৪ ঘণ্টারও বেশি শিডিউল বিপর্যয়ের পর কল্যাণপুর থেকে ভোর ৪টার দিকে বাসে উঠেছি। তারপর আরও ৭ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। গুগল ম্যাপ অনুসারে আমাদের বাসটি আজ বুধবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ছিল! মহাসড়কে যতদূর চোখ যায় শত শত বাস-ট্রাক থেমে থেমে চলছে। অথচ একসময় ৬ বা সাড়ে ৬ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে রংপুরে পৌঁছানো যেত। তখন কিন্তু পুরো রাস্তা ২ লেন-ই ছিল! এখন স্বাভাবিক সময়েও গড়ে ৮ ঘণ্টা লাগে।

এমনটা কেন হলো? ৩ কোটি ৮১ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ঈদযাত্রার ভোগান্তি বিগত এক দশকেরও বেশি সময় চলছে। অথচ এই সংকট সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। বছরের পর বছর রাস্তার কাজ চলছে; বারবার প্রকল্পের সময় ও বাজেট বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। রাস্তার কাজ যথাসময়ে শেষ করা জরুরি।

বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশ থেকে শুরু হওয়া যানজট। ছবি: স্টার

উত্তরের জনপদ, বিশেষ করে রংপুর বিভাগের ট্রেন যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে কার্যকর কোনো মনযোগ দেওয়া হয়নি কখনোই। অথচ এটা ছাড়া সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যময় যাত্রা নিশ্চিত করা অসম্ভব। যোগাযোগ অবকাঠামো ছাড়াও ইদের ছুটি ব্যস্থাপনায় ভেবে-চিন্তে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। যেমন: ঈদের ছুটি বিভিন্ন এলাকা বা শিল্পখাতে ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুরু হতে পারে। গার্মেন্টসের ছুটি একদিন বা দুইদিনে; সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ভিন্ন ভিন্ন দিনে।

এ ছাড়া ছুটি ৩ বা ৪ দিনের পরিবর্তে আরও বেশি হওয়া উচিত। প্রয়োজনে বছরের অন্যান্য ছুটির দিন কমিয়ে হলেও। তাতে সড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা সহনীয় হতে পারে। এতে মানুষ নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করতে পারবে; পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবে।

তবে সব কিছুর ওপর বড় বিষয় হলো সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। কেননা, আজ ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত পুরো সড়কেই যানবাহন থেমে থেমে এগিয়েছে। অথচ এই অংশের বেশিরভাগই ৪ লেনের! এই অব্যবস্থাপনার কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি।

মওদুদ আহম্মেদ সুজন: নিজস্ব প্রতিবেদক, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

1h ago