তুলে নিয়ে যেভাবে হত্যা করা হয় রবিউলকে

রবিউল হত্যার ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
রবিউল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

দ্বন্দ্বের জেরেই সাভারের ধামরাইয়ে পোশাকশ্রমিক রবিউল ইসলামকে (৩০) তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে জীবিত অবস্থাতেই বস্তায় বন্দি করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি জানা গেছে।

রবিউল হত্যার ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ৪ জন হলেন—আলম ভূঁইয়া (৫৫), সেলিম ভূঁইয়া (৩৮), আজহার ভূঁইয়া (৩২) ও ফারুক ভূঁইয়া (৩৫)।

পুলিশ জানায়, গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় একটি সড়কে রবিউল রিকশায় যাওয়ার সময় আলম ভূঁইয়ার ছেলে ইশতিয়াকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা লাগে। ওই ঘটনায় তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে রবিউলের পরিচিত স্থানীয় হুরমুজ আলীর ছেলে সোহাগ রবিউলের পক্ষ নিয়ে ইশতিয়াককে চড়-থাপ্পড় দেন। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাত ৯টার দিকে সোহাগ ও ভূঁইয়া পরিবারের মধ্য কয়েক দফায় মারামারি হয়।

ওই ঘটনায় সোহাগকে প্রধান ও রবিউলকে দ্বিতীয় আসামি করে আশুলিয়া থানায় মামলাও করে ভূঁইয়া পরিবার। এসব ঘটনার জেরেই তারা রবিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

রবিউল হত্যা মামলার বাদী তার বোন ফারজানা আক্তার ঝিলিক। মামলায় ভূঁইয়া পরিবারের ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়।

আজ সকালে ফারজানা আক্তার ঝিলিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই পোশাক কারখানায় সাব-কন্টাক্ট্রর হিসেবে কাজ করত। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার ভাইকে জোরপূর্বক তুলে নেয় মামলার আসামিরা। পরে তাকে আলম ভূঁইয়ার বাড়িতে নিয়ে মারধর করে। এরপর আমার বাইকে তারা একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে বস্তাবন্দি করে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধামরাই থানার ভাড়ারিয়া এলাকার একটি পুকুরে ফেলে হত্যা করে। আমার ভাইয়ের হাত-পা ভেঙে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তারা। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।'

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হত্যাকারীরা গতকাল সকালে রাস্তা থেকে প্রথমে তুলে নিয়ে যায় রবিউলকে। পরে তাকে একটি বাড়িতে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মুমূর্ষু অবস্থায় পরবর্তীতে তাকে একটি বস্তায় ভরে একটি গাড়িতে তুলে ধামরাইয়ে মহাসড়কের পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। তখনো রবিউল জীবিত ছিল। পরে স্থানীয়রা পুকুর থেকে রবিউলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।'

'আমরা এখনো গাড়িটি শনাক্ত করতে পারিনি। আর গ্রেপ্তার আসামিরাও তথ্য দিচ্ছেন না। আজ তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আশা করি আদালত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সব রহস্যই বেড়িয়ে আসবে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, পূর্ব দ্বন্দ্বের জেরেই রবিউলকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া এলাকার পুকুর থেকে রবিউলকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে একটি চলন্ত মাইক্রোবাস থেকে বস্তাটি সড়কের পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

Comments