‘টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ হাস্যকর’

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে রোববার আটক করে পুলিশ।
বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: স্টার

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে রোববার আটক করে পুলিশ।

পরে সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।

আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে কয়েকজন অভিভাবক আজ মঙ্গলবার বুয়েটের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

হাওরে গিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ 'হাস্যকর' উল্লেখ করে তারা বলেন, 'আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে আটক করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দিয়ে তাদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।'

অভিভাবকরা বলেন, 'গত শনিবার আমাদের সন্তানেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সঙ্গে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে আরও কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা সবাই একসঙ্গে ঘোরার কথা জানায়।'

রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তাদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না উল্লেখ করে তারা বলেন, 'আমরা ভেবেছি ট্যুরে আছে, হাওরে হয়তো নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে ফোনে কল যাচ্ছে না। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে অনেকের কাছেই সন্তানরা কল করে তাদের নিজের ও অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানতে চায়।'

'তারা জানায় যে হাওরে নৌকায় ভ্রমণের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাদের আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে গেছে। আইডি কার্ডের নম্বর নেওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা ফোনে শুধু এটুকুই বলতে পারে। এর বেশি আর কথা বলতে দেওয়া হয়নি। ফোন নিয়ে নেওয়া হয়,' উল্লেখ করেন অভিভাবকরা।

তারা আরও বলেন, 'আমরা এরপর তাদের খোঁজে সুনামগঞ্জের ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি। কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তাই, জানতে পারিনি কেন তাদের আটক করা হয়েছে।'

পরে সোমবার বিকেলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে অভিভাবকরা জানতে পারেন যে তাদের সন্তান ও স্বজনদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।

অভিভাবকরা বলেন, 'আমাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা আশ্চর্য হই। আমরা মনে করি, এ রকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।'

তাদের দাবি, স্থানীয় ওসি ও এসপি ছাড়াও রোববার রাত থেকে তারা বুয়েট উপাচার্যকে ফোন দিয়েছেন। কিন্তু কারও সঙ্গেই কথা বলা যায়নি।

গতকাল বিকেলে পাওয়া মামলার বিবরণীর বরাত দিয়ে অভিভাবকরা জানান, 'তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।'

'এমন বাস্তবতায় গতকাল সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বিচ্ছিন্নভাবে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার চেষ্টা করি। অপেক্ষা করার সময় আরও কয়েকজন অভিভাবক আসেন।'

উপাচার্যের সঙ্গে দেখা না করে তারা বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেন অভিভাবকরা।

অভিভাবকরা জানান, 'ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আমাদের জানান যে সোমবার বিকেলে পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এর আগে তারা বিষয়টি জানতেন না।'

'আমরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে আমাদের উদ্বেগ জানাই। আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির মুখে। সেটা আমরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে জানাই এবং এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি। তারা তাদের প্রসিডিউর অনুযায়ী চেষ্টা করবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেন,' অভিভাবকরা বলেন।

তারা আরও বলেন, 'আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে জব্দ করা মালামাল হিসেবে যেসব জিনিসপত্রের কথা বলা হয়েছে তা অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট। তারা টার্ম-ব্রেকের ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল। সঙ্গে সদ্য এসএসসি পাশ করা কয়েকজন আত্মীয়কেও নিয়ে যায়। এভাবে হাওরে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এই অভিযোগ হাস্যকর।'

অভিভাবকদের দাবি, 'কোন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানরা জড়িত নয়। ছোটবেলা থেকেই তাদের পড়ালেখার প্রতি ঝোঁক ছিল। রাজনীতির সঙ্গে কখনো তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।'

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব শাহরিয়ারের বাবা জামালউদ্দিন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। তার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালানোর বিষয়ে ভাবছি। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য অভিভাবকদের সঙ্গেও আলোচনা করছি।'

 

Comments