বন্যা

চট্টগ্রামের ৩ উপজেলায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা

চট্টগ্রামে সড়কে বন্যার পানি। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার ফাইল

বাড়িঘর ও আঙিনা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের বন্যা কবলিত ৩টি উপজেলায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

তবে বন্যা দুর্গতরা এখন ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে বন্যায় ৩৬,৫০০ পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলা-- চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, ৪ দিনে বন্যার পানিতে ভেসে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় জেলায় ১৩৫ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যার পর বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) এর মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব জানান, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, জন্ডিস, চর্মরোগ এবং টাইফয়েডসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

একই কথার প্রতিধ্বনি করে চমেক এর চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. বর্ণালী বড়ুয়া বলেন, বন্যার পানির মধ্য দিয়ে যাদের চলাচল করতে হয়েছে তারা স্ক্যাবিস এবং কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসসহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

এলাকাবাসী জানায়, বন্যা কবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে কিছু মানুষ নিউমোনিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রবল বর্ষণ ও বন্যার সময় ৪ দিনে ঠাণ্ডা লেগে অনেক শিশু ও বয়স্ক মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে এলাকায় ৩ জন বয়স্ক ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় মারা গেছেন।

অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের [বর্তমান পৌরসভা] সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ বলেন, ওই এলাকার অনেক মানুষ ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ও চর্মরোগে ভুগছেন। বন্যা দুর্গত মানুষের চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত এলাকায় সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা ক্যাম্প করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

যোগাযোগ করা হলে, সাতকানিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. আফরিন সুলতানা জানান, তারা শনিবার পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত খুব বেশি রোগী পাননি।

তিনি বলেন, 'এখন আমরা বেশিরভাগ রোগী পাচ্ছি যারা বন্যায় বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ বন্যার পানির মধ্য দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে অথবা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে আহত হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ২-৩ দিন পর আমরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগী পেতে শুরু করব।'

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার রোগ নিয়ন্ত্রণ (এমওডিসি) ডা. রায়হান সিদ্দিকী শুক্রবার থেকে সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছেন।

রায়হানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি সাতকানিয়ার সন্তান এবং এলাকার সন্তান হওয়ায় বন্যা কবলিত মানুষের প্রতি একটা বিশেষ দায়িত্ব অনুভব করেন।

'এই দায়িত্ববোধের তাগিদে আমি এলাকার বন্যাকবলিত বিভিন্ন জায়গায় মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছি। শুক্রবার আমি উত্তর বাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরও কয়েকটি এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেছি।'

রায়হান বলেন, 'মেডিকেল ক্যাম্পে আমরা রোগীদের চিকিৎসা ও ওষুধ উভয়ই দিচ্ছি।'

যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে।

Comments

The Daily Star  | English
wheat production decline in bangladesh

With acreage and output falling, is there any prospect for wheat in Bangladesh?

Falling wheat acreage raises questions about food security amid climate change

16h ago