ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে সাগরের ইলিশ, বরিশালে দাম কমলেও চাঁদপুরে বেশি

২৫ বছর ধরে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেন মো. নুরু (৪৫)। মাছ ধরার নৌকায় ৭ দিন কাটিয়ে আজ শুক্রবার বিপুল সমুদ্রের ইলিশ নিয়ে ফিরেছেন তিনি। ছবিটি শুক্রবার সকালে বরিশাল নগরের পোর্টরোডস্থ জেলা মৎস্য পাইকারি বাজারে তোলা। ছবি: টিটু দাস/স্টার

দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ মাছ। ইলিশ পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে নদীর মাছ না পাওয়ায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে বরিশাল পোর্ট রোড পাইকারী মৎস্য মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৫ গুণ ইলিশ বাজারে উঠেছে। এই ৬০০-৮০০ গ্রাম সাগরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা মণ দরে।

অন্যদিকে ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটও। শুক্রবার সকালে সাগর থেকে বড় আকারের ১০টি ফিশিং ট্রলারে নৌ পথে ও ছোট বড় ৮টি ট্রাকে সড়ক পথে প্রায় ২ হাজার মণ ইলিশ এসেছে। এসব ইলিশ মাছঘাটের বিভিন্ন আড়তে নামিয়ে নিলামে উঠানো হয়।

সাগরের ইলিশেই সয়লাব বাজার, নদীর মাছ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা

বরিশালের বাজারগুলোতে ব্যাপক ইলিশ মাছ উঠলেও তুলনামূলকভাবে সাগরের ইলিশই বেশি দেখা গেছে।

বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নীরব হোসেন টুটুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে নদীর ইলিশ ৫০ মণও নেই। সাগরের ইলিশেই বাজার সয়লাব। মাঝারি সাইজের ইলিশ ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।'

এদিকে নদীর ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ উপকূলের জেলেরা।

কুয়াকাটা অঞ্চলের জেলে জাকির মাঝি বলেন, 'মায়ের দোয়া' নামে ৩টি ট্রলার নিয়ে ৭ দিন আগে কুয়াকাটা সাগর ও পায়রা বন্দরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে ৩টি ট্রলারে ৭৫ জন জেলে ছিল। খরচ হয়েছে মোট ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু মাছ পেয়েছি মাত্র ৭৫ মণ।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন হাওলাদার বলেন, 'এবার বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় ইলিশ দেরিতে পাওয়া যাচ্ছে। এখন যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর ডিম হয়নি। তাই এগুলো সাগরেই পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশের ডিম হওয়া মাত্র তারা নদীর দিকে ছুটে আসবে। আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নদীতেও ইলিশ পাওয়া যাবে।'

বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের ২৫টি ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ১৩ হাজার টনেরও বেশি ইলিশ পাওয়া গেছে।

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন বরিশাল পাইকারী মার্কেটে প্রায় ৫০০ মণ, বরগুনা পাথরঘাটায় প্রায় ২৫০০ মণ এবং আলীপুর, মহীপুরে অন্তত ৩-৪ হাজার মণ সমুদ্রের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে চাঁদপুরে ঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী বিপ্লব খান বলেন, 'ইলিশ মৌসুম শুরু হওয়ার পর আজকেই সবচেয়ে বেশি ইলিশ উঠেছে। তবে স্থানীয় পদ্মা, মেঘনার ইলিশের তুলনামূলকভাবে কম।'

মাছঘাটের আড়তদার শবেবরাত বলেন, 'মৌসুম শুরু হওয়ার পর গত কয়েকদিনের তুলনায় আজকে সকালে সাগর থেকে ফিশিং ট্রলার ও ট্রাকে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায়২ হাজার মণ ইলিশ উঠেছে। এসব মাছ অধিকাংশই বৃহত্তর হাতিয়া, নোয়াখালি অঞ্চল থেকে জেলেরা ধরে এনেছেন।'

মাছের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে মাছঘাটের আড়তদার ও মৎস্যবনিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মানিক জমাদার বলেন, 'শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় আজকে অন্যান্য দিনের তুলনায় মাছ বেশি আসলেও ক্রেতাও ছিল বেশি। তাই মাছের দাম তেমন একটা কমেনি। লোকাল পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় ও সাগরের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় কেজিতে কেনাবেচা হয়েছে।

তবে এভাবে মাছ আসতে থাকলে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Starlink logo

Yunus approves Starlink's license in Bangladesh

Bangladesh is the second country in South Asia, after Sri Lanka, to welcome Starlink

Now