শিশুর ডেঙ্গু নাকি মৌসুমি জ্বর: কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দিনদিন বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু সংক্রমণ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। অন্যদিকে এই মৌসুমে শিশুদের মধ্যে সর্দি-কাশি ঠান্ডা জ্বরের প্রকোপও দেখা যাচ্ছে।

এই সময়ে শিশুর ঠান্ডাজনিত রোগ, ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা-পরামর্শ, হাসপাতাল পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকার আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ডিপার্টমেন্ট অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার পেডিয়াট্রিকসের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক।

শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে নাকি সাধারণ সর্দিজ্বর—কীভাবে বুঝবো?

অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, 'এখন শিশুরা দুই ধরনের রোগেই অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু তো আছেই। সঙ্গে বাচ্চাদের ঠান্ডা, কাশি, সর্দিজ্বর যেটাকে আমরা 'ফ্লু' বলি সেটাতেও আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত ডেঙ্গুতে আগে জ্বর আসে, শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে যায়, খেতে পারে না, গা-হাত-পা ব্যথা করে। ডেঙ্গু হলে শুরুতেই ঠান্ডা-সর্দি-কাশি থাকে না। প্রথমে প্রচণ্ড জ্বর হবে, ১০২-১০৩ ডিগ্রির মতো। জ্বর নামতে চাইবে না। তার সঙ্গে দুর্বলতা, চোখে ব্যথা, হাত পা ব্যথা হয়।'

'অন্যদিকে মৌসুমী জ্বরে আগে হাঁচি-কাশি-সর্দি শুরু হয়। তারপর জ্বর আসে। সর্দি-জ্বর হলেও শিশুর হাত-পা ব্যথা করে কিন্তু সেটা হয় মূলত জ্বরের কারণে। জ্বর মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এলে শিশুও সুস্থবোধ করতে থাকে। সর্দি জ্বর হলে জ্বরটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিন্তু ডেঙ্গু হলে শিশু অসুস্থবোধ করে অনেক বেশি। ফ্লু হলে শিশুর চোখ খুব একটা লাল হয় না। কিন্তু ডেঙ্গুতে শিশুর চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত ফ্লু হলে বাসার সবার একসাথে হয়,' বলেন তিনি।

কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে?

অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, 'ডেঙ্গু রোগী অনেক সময় দেরি করে হাসপাতালে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থা তৈরি হয়। এখন যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম। তাই অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে। জ্বর হলেই আগে খেয়াল রাখতে হবে ডেঙ্গু হলো কি না। চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। জ্বর আসার দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। সাধারণ সর্দিজ্বর হোক কিংবা যাই হোক জ্বর আসলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসককে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে কী রোগ হয়েছে, কী করতে হবে।'

অনেকে আগেই আশঙ্কা করে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এটি করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার যুক্তি নেই। অপ্রয়োজনে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে দেখা যায় পরে যার আসলেই প্রয়োজন সে ভর্তি হতে পারছে না, হাসপাতালে বেড খালি নেই। যেটা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে।'

'জ্বর উঠলে প্রথম দিন না হলেও দ্বিতীয় দিন চিকিৎসকের কাছে যাবেন। চিকিৎসক রোগী দেখে প্রয়োজন অনুযায়ী পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষা করে যদি চিকিৎসক মনে করেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন, তাহলে উনি সেটাই পরামর্শ দেবেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শিশুরা একেবারেই খেতে পারে না, বমি করে। তখন হাইড্রেশন মেইনটেইন করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি। এজন্যই চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। নিজে নিজে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভর্তি হওয়া সবার জন্য মঙ্গল।'

মানতে হবে সর্দি কাশির শিষ্ঠাচার, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা

ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, 'শিশুকে সবসময় ফুল হাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখতে হবে। যদিও এখন গরম বেশি কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। বাসাবাড়ি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনের বেলা শিশু ঘুমালে মশা যাতে না কামড়ায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাতের মশা থেকেও আজকাল ডেঙ্গু হতে পারে। তাই মশা থেকে সবসময় সাবধান রাখতে হবে।'

পরিবারের কেউ সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হলে সর্দি কাশির শিষ্ঠাচার মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মাহবুবুল।

তিনি বলেন, 'পরিবারে যখন কারো সর্দি জ্বর হবে, হাঁচি-কাশি হবে তখন অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আমরা তো কোভিড মহামারির সময়ের শিষ্ঠাচার এখন আর মানি না। সেটা মানতে হবে। পরিবারে যারই সর্দি কাশি হবে— বাবা হোক, মা হোক, ভাই-বোন হোক—সে যখন হাঁচি কাশি দিচ্ছে তার মাধ্যমে কিন্তু পাশের জনেও ফ্লু ছড়াচ্ছে। তাই সর্দি-কাশি হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এটা ঘরে, বাইরে সবখানেই। অনেক সময় দেখা যায়, চেম্বারে রোগী এসেছেন। হাঁচি দিচ্ছেন, কাশি দিচ্ছেন কিন্তু মুখে মাস্ক নেই। এটা করা উচিত নয়।'

রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা

হাসপাতাল পরিস্থিতির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শিশু হাসপাতালে এখন প্রচুর ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে রোগীর অবস্থা বুঝে আমরা ভর্তি করি। আমরা রোগীদের জরুরিভিত্তিতে পরীক্ষা করি, ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা বুঝতে পারি রোগীর অবস্থা কী। কিন্তু বর্তমানে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক রোগীকে জায়গার অভাবে ভর্তি করতে পারি না। শিশু হাসপাতালে বেড না পেয়ে অনেক রোগী হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে সরকারি অন্যান্য যে হাসপাতালগুলো আছে বিশেষ করে সিটি করপোরেশন হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল এসব হাসপাতালের চিকিৎসা ভালো। ওখানে শিশুদেরও চিকিৎসা হয়। ওখানে নিয়ে যেতে পারেন।'

ডেঙ্গু মৌসুমে হাসপাতালে আইসিইউতে চাপ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শিশু হাসপাতালে সব মিলিয়ে আইসিইউ বেড ৬০ এর কিছু বেশি। এই সংখ্যা যথেষ্ট না। একটা রাজধানী শহর হিসেবে সে তুলনায় শিশু হাসপাতালে আইসিইউ বেড সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে কোনো মহামারি হলে আমরা সংকটে পড়ে যাই। ডেঙ্গু ছাড়া অন্য রোগীরাও আছে, তাদেরও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার প্রচুর ঘাটতি আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Sada Pathor Looting: Admin officials, law enforcers involved

Some government officials  including members of law enforcement agencies were involved in the rampant looting of stones from Bholaganj’s Sada Pathor area, found a probe committee of the Sylhet district administration.

3h ago