ইমরান কি জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন?
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে আজ মঙ্গলবার তোশাখানা মামলায় ৩ বছরের সাজা স্থগিত করেছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি)।
সংক্ষিপ্ত রায়ে আইএইচসি জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ পিটিআই প্রধানকে জামিনে মুক্তি দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
এ ছাড়া ইমরান খানকে জামিনের জন্য ১ লাখ টাকা জামানত হিসেবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ইমরান কবে জেল থেকে মুক্তি পাবেন সেটা এখনো স্পষ্ট নয়।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সভাপতি শেহবাজ শরীফ পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের সাজা 'স্থগিত' করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট এবং পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়ালের সমালোচনা করেছেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট গ্রেফতার হন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত বছরের ২২ এপ্রিল অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অভিশংসিত হন তিনি। এরপর থেকে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ১৫০ টিরও বেশি মামলা। এ বছরের মার্চে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত ৩টি মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। এসব মামলায় তার ঘনিষ্ট সহযোগী শাহ মাহমুদ কোরেশিসহ তেহরিক-ই-ইনসাফের বেশ কয়েকজন কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৯ মে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর তুমুল প্রতিবাদে মুখরিত হয় পাকিস্তান। লাহোরে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করেন পিটিআইয়ের সমর্থকরা। সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বাসভবনেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
এই আল কাদির ট্রাস্ট মামলার বিষয়ে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানায়, ইমরান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি থেকে কয়েক বিলিয়ন রুপি ও কয়েকশ কানাল (১ কানাল= ৫০৬ বর্গমিটার) জমি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ইমরানকে মে মাসে এই মামলায় গ্রেপ্তারের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহ জানিয়েছিলেন, আল কাদির ট্রাস্টের ৬০ বিলিয়ন রুপি আত্মসাতের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিও নিউজের বরাতে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট ইমরানের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৫ নম্বর ধারায় মামলা হয়েছে। অভিযোগ রাষ্ট্রীয় গোপন নথির অপব্যবহার। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয় থেকে হারিয়ে গেছে গোপন নথি বা সাইফার। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফআইএ প্রাথমিক অভিযোগ দায়ের করেছে। এরপর সন্ত্রাস দমন বিভাগ করেছে এই মামলা।
ইতোমধ্যে তোশাখানা মামলায় ৫ আগস্ট থেকে গ্রেপ্তার রয়েছেন ইমরান। তোশাখানা অর্থ সরকারি কোষাগার। বিদেশি নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো উপহার জমা দিতে হয় সরকারি কোষাগারে। কিন্তু ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি উপহার বিক্রি করে বিনিময়ে অর্থ নিয়েছেন। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর, ইমরান জানান উপহার হিসেবে পাওয়া রোলেক্স ঘড়ি, দুটো কাফলিঙ্ক, একটি গ্রাফ, একটি কলম, একটি আংটি ও বেশ কয়েকটি ধাতব জিনিসের ভেতর ৪টি উপহার তিনি বিক্রি করেছেন। ইতোমধ্যে এ মামলায় তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক হুমায়ূন দিলওয়ার। গত শুক্রবার ওএসডি করা হয়েছে তাকে।
তবে ডনের সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ূন স্বেচ্ছায় ওএসডি হয়েছেন। সপরিবার হুমকি পাওয়ার পর তার অনুরোধে ইসলামাবাদ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক এ সিদ্ধান্ত দেন।
ডন জানিয়েছে, ইমরান সমর্থকদের 'রোষানল' থেকে বাঁচার জন্যই তাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে।
তোশাখানা মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন ইমরান।
তবে হাইকোর্টের আদেশে এই মামলায় জামিন পেলেও ইমরানের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা থাকায় সেগুলোতেও জামিন পাবেন কি না সেটা নিশ্চিত নয়। ফলে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
এ ছাড়া ইমরানের মাথার ওপর খগড় হয়ে ঝুলছে গত ১৮ আগস্ট দায়ের হওয়া গোপন নথি তথা সাইফার হারানোর মামলা। ইমরান বর্তমানে পাঞ্জাবের কারাগারে আটক আছেন।
জিও নিউজের বরাতে জানা যাচ্ছে, এই মামলার প্রাথমিকভাবে তেমন গুরুত্ব ছিল না। ইমরানের মুখ্যসচিব আজম খান এফআইএ এর কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর মামলার মোড় ঘুরে যায়। তিনি জানান, ইমরান রাজনৈতিক স্বার্থে, অনাস্থা ভোট এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি বা সাইফার ব্যবহার করেছেন।
দ্য ডন এর বরাতে জানা গেছে, এফএআই সূত্রে বলা হচ্ছে, এই নথিই সেই কাগজ যা দেখিয়ে ২০২২ সালের এপ্রিলে ইসলামাবাদের এক সমাবেশে ইমরান যুক্তরাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। বলেছিলেন, রাশিয়া প্রশ্নে তার অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে গত শনিবার কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এফআইএয়ের উপপরিচালক আয়াজ খানের কাছে গোপন নথি বা সাইফার হারিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছেন ইমরান। সাইফারটি যে নিখোঁজ তা স্বীকার করেছেন তিনি। তবে গত বছর জনসমাবেশে জনসম্মুখে তুলে ধরা নথিটি সাইফার ছিল না বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নথিটি কাছে রাখার অধিকার তার ছিল, তবে সেটি হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন ইমরান।
তবে এজন্য কঠোর মূল্য দিতে হতে পারে তাকে। রাষ্ট্রীয় গোপন নথির অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবার সম্ভাবনাও রয়েছে ইমরানের।
Comments