এশিয়া কাপ ২০২৩

হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার, শঙ্কায় সুপার ফোর

sadeera samarawickrama

সর্বনাশটা হয়ে গিয়েছিল ব্যাটিংয়েই। সম্মিলিত দুর্দান্ত বোলিং প্রয়াস হয়ত পারত সেটা পুষিয়ে দিতে। সেই আভাস শুরুতে খানিকটা দেখা গেলেও তা নিভিয়ে দিলেন সাদেরা সামারাবিক্রমা আর চারিথা আসালাঙ্কা। বাংলাদেশের মামুলি পুঁজি পেরিয়ে যেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। বড় হারে এখন এশিয়া কাপের সুপার ফোর শঙ্কায় পড়ে গেছে সাকিব আল হাসানের।

বৃহস্পতিবার ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করে মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে ম্যাচ অনেকটা খুইয়ে বসে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। রান তাড়ায় শুরুতে ধাক্কা খেলেও ১১  ওভার হাতে রেখে তা পেরিয়ে গেছে স্বাগতিকরা।

এই হারের পর সুপার ফোরে যাওয়া এখন বেশ কঠিন। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের সঙ্গে জিততেই হবে, তারপর অপেক্ষা করতে হবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তানের ম্যাচের।

বোলিং দিয়ে আসল কাজ করে নেওয়া লঙ্কানরা তীরে তরি ভেড়ায় সাদেরা-আসালাঙ্কার ব্যাটে। সাদেরা ৭৭ বলে করেন ৫৪, আসালাঙ্কা ৯২ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে মাহেথ থিকসেনা আর মাথিশা পাথিরানা বেঁধে দেন সুর। থিকসেনা ১৯ রানে নেন ২ উইকেট, পাথিরানা ৩২ রানে পান ৪টি। তাদের তোপে বৃথা যায় নাজমুল হোসেন শান্ত ৮৯ রানের ইনিংস।

১৬৫ রানের অল্প পুঁজি নিয়ে তৃতীয় ওভারেই দলকে সাফল্য এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তার ফুলার লেন্থের হালকা স্যুয়িং করা বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে স্টাম্প খোয়ান দিমুথ করুনারত্নে।

পাথুম নিশানকা ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। সেই অ্যাপ্রোচ তার কাল হয়েছে। শরিফুল ইসলামের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। ১৫ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে দারুণ কিছুর আভাস তখন স্পষ্ট।

সাদেরা কুশল মেন্ডিসকে এক পাশে রেখে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিচ্ছিলেন। মেন্ডিস ছিলেন কুঁকড়ে। সাকিব এসে আর্ম ডেলিভারি দিয়ে বোল্ড করে দেন মেন্ডিসকে, ম্যাচ জমে উঠে।

এরপরই সেটা নিভিয়ে দিতে মঞ্চে হাজির আসালাঙ্কা। সাদেরার সঙ্গে তার জুটি ক্রমশ বাংলাদেশের চেহারা করে দেয় মলিন। কোন রকম চাপ না নিয়ে রান বাড়াতে থাকেন তারা। শেখ মেহেদি সাদেরাকে ৭৮ রানের জুটি যখন ভেঙেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সাকিব পরে দ্রুত ধনঞ্জয়াকেও ফিরিয়ে দিলেও সেটা স্রেফ খানিকের উত্তেজনাই তৈরি করেছে। 

টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়ার সময় অধিনায়ক সাকিব বলেছিলেন, বেশ ভালো উইকেটে প্রতিপক্ষকে বড় রানের চ্যালেঞ্জ দিতে চান তারা। কিন্তু খেলতে নেমে পাওয়া গিল ভিন্ন ছবি। বাংলাদেশের পুরো ইনিংস চলল খুড়িয়ে খুড়িয়ে।

অবশ্য প্রতিপক্ষকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। অফ স্পিনার কিংবা বলা ভালো রহস্য স্পিনার  থিকসেনা শুরু থেকেই ভয় ধরানো স্পেল করলেন। মাঝে গতির ঝড় তুলে বাংলাদেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন তরুণ পেসার  পাথিরানা।

এই দুই বোলার মিলে ১৫.৪ ওভার বল করে ৫১ রানে পেলেন ৬ উইকেট। ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বল করেন পাথিরানা। তার গতি বুঝতে পারলেন না সাকিব-মুশফিকের মতো অভিজ্ঞরা।

অভিষিক্ত তানজিদ হাসান তামিমকে দিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ওভারে এই তরুণ থিকসেনার ক্যারম বলটা বুঝতেই পারলেন না। পরিষ্কার এলবিডব্লিউতে রিভিউ নেওয়ারও সাহস না করে ফেরেন শূন্য রানে। নাঈম শেখ তিন বাউন্ডারিতে দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর ইঙ্গিত। কিন্তু তার বিদায় দৃষ্টিকটু শটে। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়াতে গিয়ে তুলে দেন সহজ ক্যাচ।

শুরুতে নড়বড়ে থাকা শান্ত জীবন পান ২ রানে। তবে কঠিন সময় বোলারদের দিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এক পাশে উইকেট পতনের স্রোতে সেই সুযোগ অনেকটা পরে কাজেও লাগান। অধিনায়ক সাকিব এসেছিলেন চারে। প্রত্যাশার কিছুই মেটেনি তার ব্যাটে। পাথিরানার বাইরের বল কাট করতে গিয়ে ধরা দেন কিপারের গ্লাভসে। কুশল মেন্ডিস দারুণ নিচু ক্যাচ নেওয়ার বাহবা পাবেন।

৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কেঁপে উঠা টাইগার শিবির স্বস্তি পাচ্ছিল শান্ত-তাওহিদ হৃদয়ের জুটিতে। শান্ত সাবলীল খেললেও হৃদয় ছিলেন কিছুটা খোলসবন্দি। আড়ষ্ট উইকেটের কারণেই হয়তবা চতুর্থ উইকেট জুটির ৫৯ রান এসেছে ৮০ বল খেলে। হৃদয় খোলস ছেড়ে বেরুতে গিয়ে কাবু হন দাসুন শানাকার বলে। ছয়ে নেমে মুশফিকুর রহিম করেছেন চরম হতাশ। পাথিরানার গতিতে বারবার ধুঁকছিলেন। একবার কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েও আম্পায়ারের ভুলে বেঁচে যান। জীবন কাজে লাগাতে পারেননি। ১৩ রান করেই পাথিরানার শিকার তিনি। আপার কাটে থার্ডম্যান ফিল্ডারের ফাঁদে পড়েন মুশফিক।

মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদী হাসানরাও সঙ্গ দিতে পারেননি শান্তকে। ফিফটির পর মন্থর হয়ে পড়ে শান্তর ব্যাটও। ৮ম ব্যাটার হিসেবে তিনি আউট হওয়ার পর আর কেবল ৬ বল স্থায়ী হয় বাংলাদেশের ইনিংস।

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown

Officials of the National Board of Revenue have decided to withdraw their nationwide shutdown in view of the broader interests of trade and commerce.

27m ago