বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনে নাইলনের বেড়া

সুন্দরবনের বাঘ
বন বিভাগের ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে ৩ মাস আগে তোলা বাঘের ছবি। ছবি: সংগৃহীত

বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনের কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে নাইলনের বেড়া দেবে বন বিভাগ। আগামী নভেম্বর থেকে এ কাজ শুরু হবে।

সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় এবং লোকালয় ও বনের মধ্যে খাল শুকিয়ে গেছে এমন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় জাল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বন বিভাগ।

তবে প্রাথমিকভাবে দুটি এলাকায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেওয়া হবে নাইলনের বেড়া।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর মেয়াদি সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম চলবে। এতে খরচ হবে ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

প্রকল্পের দুটি অংশের একটি হলো বাঘ গণনা এবং অপরটি বাঘ সংরক্ষণে ব্যবস্থা।

সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে বাঘ গণনার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আর পূর্ব বিভাগের কাজ শুরু হবে আগামী নভেম্বরে।

বাঘ গণনায় খরচ হবে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা খরচ হবে বাঘ সংরক্ষণ ও অন্যান্য কাজে।

প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ ও শিকারি প্রাণী জরিপ, উঁচুটিলা ও ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হবে। বাঘের ক্যানাইন ডিসটেম্পার ভাইরাস নিয়েও হবে গবেষণা।

সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) ও কমিউনিটি পেট্রল গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যদের।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে বাঘ রক্ষা সহজ হবে। এতে বাঘ হত্যা কমবে এবং বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও এই প্রকল্পের পরিচালক আবু নাসের মহসিন হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাঘ রক্ষায় নভেম্বরে পূর্ব সুন্দরবনের বৈদ্যমারী এবং ধানসাগর এলাকায় মোট ১০ কিলোমিটারের মতো নাইলনের বেড়া দেওয়া হবে। পরে সাতক্ষীরা রেঞ্জের গোলাখালি এলাকায় এটি পাইলটিং করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই নাইলনের বেড়ার উচ্চতা হবে ৮ ফুট, যেন কোনো গরু বা মহিষ সুন্দরবনের ঢুকতে না পারে। তেমনি সুন্দরবনের বাঘও যেন গ্রামে না আসে সেজন্য এই বেড়া দেওয়া।'

'আমরা দেখেছি চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন জায়গা যেমন জয়মনি, ধানসাগর, লাঙলি এলাকায় বাঘ লোকালয়ে এসে গরু-মহিষ-ছাগল খেয়ে যাচ্ছে। আবার বলেশ্বরের মাঝখানে যেখানে মাঝেরচর আছে সেখানে কয়েক হাজার মহিষ চরে। এই মহিষ নদী পার হয়ে প্রায়ই সুন্দরবনে ঢোকে। নাইলনের বেড়া এখানে কার্যকরী হবে,' যোগ করেন এই কর্মকর্তা।

আবু নাসের মহসিন আরও বলেন, 'ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশে নাইলনের বেড়ার সুফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ অংশেও আমরা ওই অনুযায়ী কাজ করব।'

'স্থানীয় কমিউনিটি যেমন ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম, কমিউনিটি পেট্রল টিম এটি দেখভাল করবে ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে,' বলেন তিনি।

সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক আনোয়ারুল কাদির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুন্দরবনের আশেপাশের লোকালয়ে মাঝেমধ্যে বাঘ চলে আসে, গরু-ছাগল-মানুষ হত্যা করে। এর ফলে লোকালয়ের মানুষের মধ্যে বাঘের প্রতি এক ধরনের হিংস্রতা জন্ম নেয়। তখন তারা সংঘবদ্ধ হয়ে বাঘ পিটিয়ে মেরে ফেলে।'

'যদিও পিটিয়ে বাঘ হত্যার ঘটনা কমে আসছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সুন্দরবনের আশেপাশের লোকালয়ে বাঘ-ভীতি রয়ে গিয়েছে। এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই বাঘ হত্যা বন্ধে কার্যকরী হবে।'

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় ৩৪০ ভিটিআরটি সদস্য ও ১৮৪ সিপিজি সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাঘের অবস্থান নির্ণয়ে বনকর্মী-কর্মকর্তা, সিপিজি ও ভিটিআরটি সদস্যদের বিশেষ অ্যাপ দেওয়া হবে।

অ্যাপের মাধ্যমে তারা মোবাইল ফোনে বাঘের গতিবিধি দেখতে পারবেন। লোকালয়ে বাঘ এলে তারা দ্রুত সুন্দরবনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন।

তাছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ড্রোন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ট্র্যাকার, নাইলনের বেড়া, জিপিএস, বাঘকে অচেতন করার জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান ও ক্যামেরাসহ কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সুন্দরবনে কমপক্ষে ৫৪টি বাঘ মারা গেছে। এর মধ্যে ১৬টি প্রাকৃতিক মৃত্যু, ২৪টি শিকারিদের হাতে ও ১৪টি স্থানীয়দের হাতে মারা গেছে।

আবু নাসের মহসিন হোসেন মনে করেন, '২০১৮ সালের পর থেকে সুন্দরবনে বনদস্যু না থাকায় এখন আর বাঘ শিকার হচ্ছে না। তাই বাঘ বাড়ছে। বনে বাঘের সংখ্যা বেশি থাকার মানে হলো সুন্দরবনের ভালো থাকা।'

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago