গাজা থেকে ১০ লাখ বাসিন্দা সরে যেতে বাধ্য হয়েছে

বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ১০ অক্টোবর, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিস। ছবি: রয়টার্স

টানা ৯ দিন ধরে গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। আসন্ন স্থল হামলার আগে এ অঞ্চল থেকে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সরে গেছে। তারা এখন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

গত ৭ অক্টোবর থেকে চলছে হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাত। ইতোমধ্যে গাজা উপত্যকা থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।

হামাসের বিরুদ্ধে স্থল হামলা শুরুর আগে সতর্কতা হিসেবে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশের পর গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা প্রাণ হাতে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিরা সঙ্গে বেশি কিছু নিতে পারছেন না। তারা তাদের সর্বস্ব ছোট ব্যাগ ও সুটকেসে ভরে তিন চাকার মোটরসাইকেল ও বিবর্ণ দশার পুরনো গাড়ি, ভ্যান, গাধায়-টানা গাড়িতে করে সরে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গাজার উত্তরাঞ্চল এখন একটি করুণ দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছে।

গাজা শহর ছেড়ে দক্ষিণে মিশর সীমান্তে রাফায় এসেছেন মোনা আবদেল হামিদ (৫৫)। তিনি বলেন, 'এখানে কোনো বিদ্যুৎ, পানি বা ইন্টারনেট নেই। আমার মনে হচ্ছে আমি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলছি'। অপরিচিত মানুষদের সঙ্গে জায়গা ভাগ করে নিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র জনাথন কনরিকাস বলেছেন, 'আমরা অত্যন্ত তীব্র ও বর্ধিত আকারে গাজা শহরে সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। এ অবস্থায় বেসামরিক ব্যক্তিদের এখানে থাকা নিরাপদ নয়।'

ইরান ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সতর্ক করেছে, গাজায় হামলা চালানো হলে তার জবাব দেওয়া হবে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদোল্লাহিয়ান বলেন, 'কেউ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার নিশ্চয়তা দিতে পারবে না এবং এটাও কেউ নিশ্চিত করতে পারবে না যে এই সংঘাত প্রতিবেশী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে না।'

আরব লিগ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন সতর্ক করেছে, গাজায় অভিযান চালালে তা 'গণহত্যার' জন্ম দেবে।

জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেন, পুরো অঞ্চল 'ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।'

ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তরের ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও দক্ষিণে এখনো বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে।

দক্ষিণের খান ইউনিস ও রাফায় এখনো যুদ্ধবিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এক বাসিন্দা জানান, রাফায় এক ডাক্তারের বাড়িতে হামলা হয়েছে।

খামিস আবু হিলাল বলেন, 'পরিবারের সবাই মারা গেছেন।'

জাতিসংঘ সোমবার জানায়, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ৪৭ ফিলিস্তিনি পরিবারের প্রায় ৫০০ সদস্যের সবাই নিহত হয়েছেন।

একাধিক বিদেশি সরকার ও জাতিসংঘ ও রেড ক্রসের মতো ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরায়েলের নির্দেশের সমালোচনা করেছে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের কর্মকর্তারা রোববার জানান, সংঘাতের এক সপ্তাহের মাঝেই ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তবে সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী লিন হেসটিংস জানান, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিনিময়ে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

'কোনো শর্ত ছাড়াই এই দুটি বিষয় (জিম্মিদের মুক্তি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানো) বাস্তবায়ন হওয়া উচিত', এক ভিডিও বার্তায় বলে তিনি।

'তারা দাবি করছে তারা হামাসকে ধ্বংস করতে চায়, কিন্তু তাদের বর্তমান কার্যক্রমে সমগ্র গাজা ধ্বংস হতে যাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

গাজার হাসপাতালগুলো নিহত ও আহতদের ভারে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। কর্মকর্তারা জানান, রোববার পর্যন্ত আহতের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৬০০।

ইসরায়েলি জ্বালানি মন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ রোববার জানান, দক্ষিণ গাজায় পানি সরবরাহ আবারো চালু করা হয়েছে।

তবে অব্যাহত বিদ্যুৎ বিভ্রাটে লাইফ সাপোর্ট ব্যবস্থা, লবণাক্ত পানি পরিশোধনকেন্দ্র, খাবার সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত ফ্রিজ ও হাসপাতালের ইনকিউবেটর অকেজো হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, টয়লেটে যাওয়া, গোসল করা ও কাপড় ধোয়ার মতো দৈনন্দিন কাজগুলোও এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

2h ago