আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

জাম্পার ঝলকে পাকিস্তানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দারুণ জয়

আরেকবার তাহলে বিশ্বকাপে রেকর্ড লক্ষ্য-তাড়া করে জিতে যাবে পাকিস্তান? ৩৬৮ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ইনিংসের কয়েক অংশে এমন সম্ভাবনাই জাগিয়েছিল। কিন্তু অ্যাডাম জ্যাম্পা ও জস হ্যাজলউডদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তেমন কিছু হয়নি।

জাম্পার ঝলকে পাকিস্তানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দারুণ জয়

adam zampa

আবারও কি তবে বিশ্বকাপে রেকর্ড লক্ষ্য-তাড়া করে জিতে যাবে পাকিস্তান? ৩৬৮ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ইনিংসের কয়েক অংশে এমন সম্ভাবনাই জাগিয়েছিল। কিন্তু অ্যাডাম জ্যাম্পা ও জস হ্যাজলউডদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তেমন কিছু হয়নি। বিশেষ করে জাম্পা ছিলেন চোখ ধাঁধানো। দারুণ বল করে মহামূল্যবান সব উইকেটগুলো পেয়েছেন তিনিই। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শের সেঞ্চুরিতে বিশাল পুঁজি নিয়ে দোলাচল কাটিয়ে দলকে ৬২ রানের জয় এনে দিয়েছেন অজি বোলাররা।

শুক্রবার বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ছোট মাঠ আর পাটা উইকেটে রান বন্যার ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩০৫ রানে আটকে রাখতে ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন জাম্পা। আউট করেন বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইফতেখার আহমেদ আর মোহাম্মদ নাওয়াজকে। যদিও ১২৪ বলে ১৬৩ করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ওয়ার্নারই। 

৩৬৮ রানের বড় লক্ষ্যে নেমেও ধীরেসুস্থে ব্যাটিং শুরু করে পাকিস্তান। আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হক কম ঝুঁকি নিয়ে  বাউন্ডারি আদায় করেছেন নিয়মিত। সতর্ক কিন্তু একাগ্র জুটিতে পাওয়ারপ্লে তারা শেষ করে ৫৯ রানে। মিচেল স্টার্ক ৩ ওভারে ২৮ রান দিয়ে দেন। তবে জস হ্যাজলউড দুর্দান্ত আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৫ ওভারে মাত্র ১৮ রান দেন। তার সঙ্গে প্যাট কামিন্স মিলে একটা সময় চেপে ধরেছিলেন শফিককে। ঝুঁকি নিতে বাধ্য করে পাওয়ারপ্লে শেষে কামিন্স ওপেনিং জুটি ভেঙ্গে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু ২৭ রানে থাকা শফিকের ক্যাচ বাউন্ডারিতে বদলি ফিল্ডার শন অ্যাবট মিস দিয়ে দেন।

ইমামও জীবন পেয়ে যান, ৪৮ রানে থাকা অবস্থায় অধিনায়ক কামিন্সের হাতেই তখন ক্যাচ মিস হয়। ১৭তম ওভারে বিনা উইকেটে শতরান পেরিয়ে লক্ষ্যতাড়ায় মজবুত হতে থাকে পাকিস্তান। ৫২ বলে ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন শফিক। ইমামও ফিফটির দেখা পান ৫৪ বলে। তবে দুজনই ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। মার্কাস স্টয়নিসের বোলিংয়ে মৃত্যু ঘটে দুজনেরই। দলীয় ১৩৪ রানে শফিক ফিরে যান ৬১ বলে ৬৪ রান করে। ইমাম কিছুক্ষণ পরই বিদায় নেন ৭০ রানে। পাকিস্তানের ভরসা বাবর আজমও ১৮ রানের বেশি দিতে পারেননি।

রিজওয়ান একপাশে আগ্রাসী রুপ ধরে রেখেছিলেন। সউদ শাকিল এসে তাকে সঙ্গ দেন ভালোই। ৩০তম ওভারে ২০০ রান ছুঁয়ে লক্ষ্যে ভালোভাবেই টিকে থাকে। কিন্তু কামিন্স এসে সাকিলকে ৩০ রানে স্টয়নিসের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরালে অজিরা নিয়ন্ত্রণের সিংহভাগ নিয়ে নেয়। ইফতিখার এসে নড়বড়ে শুরু করলেও সিক্স-হিটিং পাওয়ার দেখিয়ে পাকিস্তানের আশা বাড়িয়ে দেন। কামিন্সকে দুটি ছক্কার পর স্টয়নিসকে মারেন একটি ছক্কা। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১২ ওভারে ১০৮ রানের সমীকরণে চলে আসে পাকিস্তান।

ততক্ষণে অধিনায়ক কামিন্স পঞ্চম বোলারের কোটা পূর্ণ করে ফেলেছেন। তার মূল চার বোলারের তিনটি ওভার করে বাকি তখন। জ্যাম্পাকে ফেরান, জ্যাম্পা এসে পাকিস্তানকেই ছিটকে দেন ম্যাচ থেকে। ইফতিখারকে এলবিডাব্লিউ বানানোর পর রিজওয়ানকেও একই উপায়ে আউট করেন। রিজওয়ানকে ৪৬ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরানোর পর নাওয়াজকেও যখন জ্যাম্পা স্টাম্পিংয়ে আউট করেন, ম্যাচটা ওখানেই শেষ। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা হ্যাজলউডও পরে পুরস্কৃত হন। উসামা মীরকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের ৮ম উইকেট ফেলেন তিনি।

দুপুরে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ারপ্লেতেই অস্ট্রেলিয়া এনে ফেলে ৮২ রান। ৮ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান যদিও ছিল ৪৩। শেষ দুই ওভারে আসে ৩৯ রান। ইফতিখার পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১৫ রান দেওয়ার আগে হারিস রউফ দিয়ে দেন ২৪ রান!

এলোমেলো বোলিংয়ে রউফ যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। প্রথম তিন স্পেলে বাউন্ডারি বৃষ্টিতে ৩ ওভারেই দিয়ে ফেলেন ৪৭ রান। অস্ট্রেলিয়া ১৩তম ওভারেই একশ পেরিয়ে যায়। ওয়ার্নার ৩৯ বলে ফিফটি হাঁকান, কিছুক্ষণ পর মিচেল মার্শও ৪০ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন।

ডেভিড ওয়ার্নার চড়াও হচ্ছিলেন, আর পাকিস্তানের আক্ষেপ বেড়েই চলছিলো। মাত্র ১০ রানে ছিলেন ওয়ার্নার, ৫ম ওভারে যখন শাহীন আফ্রিদির বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন। এত লোপ্পা ক্যাচ দশবারে দশবার ধরতে পারার কথা। শাদাবের জায়গায় সুযোগ পাওয়া উসামা মীর বিশ্বকাপে অভিষেকের দিন স্নায়ুযুদ্ধে পারেননি।

ইফতিখার ও নাওয়াজ মিলে মার্শকে আটকাতে পেরেছিলেন, স্ট্রাইক বদলে ব্যর্থ হচ্ছিলেন লম্বা সময়ে মার্শ। তবে স্পিনারদের বিপক্ষে আগ্রাসী হয়ে সেসব পুষিয়ে দিচ্ছিলেন ওয়ার্নার। ৩০তম ওভারেই তাই দুইশ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। পরের ওভারে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ফেলেন ওয়ার্নার, যা ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি। পরের বলেই মার্শও তার শতকের দেখা পেয়ে যান ৮৫ বলে।

শতকের উদযাপনে মেতে উঠার পর যেন 'পাগলামি'ই শুরু হয়ে যায়! দুজনেই ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেন। এভাবেই মীরকে মারতে গিয়ে ১০৫ রানে থাকা ওয়ার্নার ক্যাচ দিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ শফিকের কল্যাণে দ্বিতীয় জীবন পেয়ে যান ওয়ার্নার। মার্শ সেঞ্চুরির পর ৭ বলে ২১ রান এনে আউট হয়ে যান আফ্রিদির বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে। ১০ চার ও ৯ ছক্কায় ১০৮ বলে ১২১ রানে থামে তার বিধ্বংসী ইনিংস।

২৫৯ রানের জুটি ভাঙ্গলে ওয়ান ডাউনে ম্যাক্সওয়েল নেমে প্রথম বলেই এলোপাতাড়ি ব্যাট চালিয়ে আউট হয়ে যান। স্মিথ এলে মীরের বলে ১ রানে ক্যাচ উঠে স্লিপে, আবারও পাকিস্তানের ক্যাচ মিস, এবার ফসকায় অধিনায়কের হাতে থেকেই৷ স্মিথ বেশিক্ষণ টিকেননি অবশ্য, ৭ রানে মীরের বলেই আউট হন। ওয়ার্নার একপাশে রানের গতি ধরে রেখেছিলেন। ৪১তম ওভারে অস্ট্রেলিয়া ছাড়িয়ে যায় তিনশ। দলের তিনশর সঙ্গে ১১৬ বলে নিজের দেড়শও পেয়ে যান ওয়ার্নার।

শেষ দশ ওভারে অস্ট্রেলিয়া উড়াল দেওয়ার জন্য প্রস্তত ছিল। কিন্ত শাহীন ও রউফের দুর্দান্ত বোলিংয়ে একের পর এক উইকেট হারায় অজিরা। ওয়ার্নার ১২৪ বলে ১৬৩ রানের ইনিংস খেলে থামেন, ১৪টি চারের সঙ্গে ৯টি ছক্কা ছিল যে ইনিংসে। শেষ দশ ওভারে ৭০ রানের বেশি আনতে পারেনি অজিরা। হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। ৫ ওভারে ৭০ রান দেওয়া রউফ নিজের শেষ তিন ওভারে ১৩ রান দিয়ে লাগাম টেনে ধরেন। শাহীন ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করে ফাইফার পেয়ে ৫৪ রানে দশ ওভার শেষ করেন। শেষমেশ অস্ট্রেলিয়াকে তাই ৩৬৭ রানে অন্তত আটকাতে পারে তারা৷ যা তাড়া করতে নেমে ৩০৫ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে পাকিস্তান।

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

2h ago