আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

অজিদের অষ্টম ফাইনালে প্রোটিয়াদের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল

আরও একবার সেমিফাইনালের বাধা পাড়ি দিতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর জয়ে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেল শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে।

অজিদের অষ্টম ফাইনালে প্রোটিয়াদের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল

আরও একবার সেমিফাইনালের বাধা পাড়ি দিতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে রোমাঞ্চকর জয়ে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেল শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে।
অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ছবি: রয়টার্স

প্রথম ছয় ওভারেই ৬০ রান দিয়ে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ধাক্কা সামলে স্বল্প পুঁজি নিয়েও প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে তারা খেলা নিয়ে গেল ৪৮তম ওভারে। কিন্তু চোকার্স তকমাটা তাদের পিছু ছাড়ল না! একটি-দুটি নয়, দলটি ফেলল চার-চারটি ক্যাচ। সব মিলিয়ে আরও একবার সেমিফাইনালের বাধা পাড়ি দিতে পারল না প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপে পঞ্চমবারের মতো সেমিতে পৌঁছেই বিদায় নিতে হলো তাদের। তাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে ৩ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়ে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেল শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে। রেকর্ড অষ্টমবারের মতো ফাইনালে উঠল তারা।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বৃহস্পতিবার আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দেখা মিলেছে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের। সেখানে ৩ উইকেটের জয় পেয়েছে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অজিরা। টস জিতে আগে ব্যাট করে ২ বল বাকি থাকতেই ২১২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ১৬ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে ২১৫ রান তুলে শেষ হাসি হাসে অস্ট্রেলিয়া।

মার্কো ইয়ানসেনের বলে চার মেরে ম্যাচ শেষ করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অজি দলনেতা প্যাট কামিন্স। একের পর এক ক্যাচ মিস আর অস্ট্রেলিয়ার শুরুর ঝড়ই মূলত প্রোটিয়াদের পেছনে ঠেলে দেয়।

আগামী রোববার বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চের ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। ২০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়বে দুই দল। ২০০৩ সালের ওই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতকে উড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। 

লক্ষ্যতাড়ায় নেমে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত শুরু পেয়ে যায় অজিরা। কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেনের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৬ ওভারেই ৬০ রান তুলে ফেলেন দুই অজি ওপেনার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার। ঝড় থামাতে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা নিয়ে আসেন স্পিন। এইডেন মার্করামের প্রথম বলেই লেংথ পড়তে ভুল করে বোল্ড হয়ে যান ওয়ার্নার। ফুল লেংথেই পেছনে খেলতে গিয়ে আউট হন ১৮ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ২৯ রানের ইনিংস খেলে।

মিচেল মার্শও ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন শূন্য রানেই আউট হয়ে। কভার পয়েন্টে রাসি ফন ডার ডুসেনের অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচে মার্শ আউট হলে ৬১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। দ্রুত ২ উইকেট পড়লেও হেড তার আক্রমণের ধারায় ছেদ পড়তে দেননি। প্রথম দশ ওভারেই তারা এনে ফেলে ৭৪ রান।

অবশ্য আতঙ্ক বনে যাওয়া হেডকে দুবার ফেরানোর সুযোগ পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ৪০ রানে বাঁহাতি ব্যাটারের ক্যাচ ডিপ পয়েন্টে ফেলে দেন বদলি ফিল্ডার হিসেবে নামা রিজা হেন্ড্রিকস। জীবন পেয়ে তিনি নিজের ফিফটি পেয়ে যান ৪০ বলে। এরপর ৫৭ রানে আবার তার ক্যাচ ওঠে স্লিপে। তাবরাইজ শামসির বলে জীবন পেয়ে যদিও তাকে ৬২ রানেই ফিরতে হয়। কেশব মহারাজ এসে নিজের প্রথম বলেই বোল্ড করে দেন হেডকে। ৪৮ বলে ৯ চার ও ২ ছয়ে ৬২ রানে যখন হেডের হুঙ্কার থামে, তখনই অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেছে ১০৩ রানে।

টার্নিং পিচে দুই বাঁহাতি স্পিনার এরপর ছুঁড়তে থাকেন একের পর এক প্রশ্ন। শামসি দ্রুত দুই শিকারে ম্যাচে প্রাণ ফেরান। রিভার্স সুইপ খেলতে যাওয়া মারনাস লাবুশেনকে এলবিডব্লিউ বানিয়ে ফেরান ১৮ রানেই। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এসে ১ রানেই বোল্ড হয়ে যান। ৪ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে দলীয় ১৩৭ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। 

স্টিভেন স্মিথের সাথে জশ ইংলিসের জুটিতে এগিয়ে যেতে থাকে অজিরা। ৪৯ রানের দূরত্বে যখন চলে আসে তারা, পেসার জেরাল্ড কোয়েটজি এসে স্মিথকে ফিরিয়ে দেন। দেখেশুনে খেলতে থাকা স্মিথ হুট করে বড় শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। ৬২ বলে ২ চারে ৩০ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় তাকে। এর আগে অবশ্য একবার ক্যাচ দিয়েও উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের ভুলে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।

ঠাণ্ডা মাথায় আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলতে থাকেন ইংলিশ। তবে প্রোটিয়ারা আবার উইকেট নিয়ে লড়াইয়ের মনোভাব ফুটিয়ে তুলে। অস্ট্রেলিয়ার দরকার যখন ২০ রান, তখন ফের কোয়েটজি এসে আউট করেন ৪৯ বলে ২৮ রান করা ইংলিসকে। পড়ে যায় অজিদের সপ্তম উইকেট।

চরম নাটকীয়তা তৈরি হয় সেসময়। ম্যাচের পাল্লা একবার এদিক, একবার ওদিক হচ্ছিল। তবে ধীরেসুস্থে খেলে কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক মিলে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে দেননি। যদিও জয়ের জন্য ৯ রান বাকি থাকতে ক্যাচ উঠেছিল কামিন্সের। কিন্তু ডি কক এবারও ক্যাচ লুফে নিতে ব্যর্থ হন। শেষমেশ প্রোটিয়াদের বেদনা বাড়িয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় অজিরা।

এর আগে টস হেরে অসাধারণ বোলিংয়ে প্রোটিয়াদের বুকে সজোরে আঘাত হানে অজিরা শুরুতেই। প্রথম ওভারেই বাভুমাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা কুইন্টন ডি কক উড়িয়ে মারতে যান হ্যাজেলউডের বল। তবে কামিন্সের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হয়ে যান ৩ রানেই। বলের এদিক-সেদিক নড়াচড়ায় প্রোটিয়ারা তখন চোখে আঁধার দেখতে পাচ্ছিল যেন। দলীয় সংগ্রহ দুই অঙ্কে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগে যায় ৮ ওভার। প্রথম বাউন্ডারি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৫২ বল! ১৮ রানে প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ করার পরও ধাক্কা কাটেনি।

১১তম ওভারে এইডেন মার্করাম পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১০ রান করেই। একপাশে চাপ শুষে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টায় থাকা রাসি ফন ডার ডুসেনও শেষমেশ ব্যর্থ। হ্যাজেলউডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ডুসেন ফিরে যান ৩১ বলে ৬ রানের ইনিংস খেলে। দুই ফিনিশার হেইনরিখ ক্লাসেন ও মিলারকে তাই পুনরুদ্ধারের কাজে নামতে হয়। ১৪ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৪ রানে থাকতেই এরপর বৃষ্টি নেমে আসে।

বেশ কিছু সময় বন্ধ থাকার পর আবার খেলা শুরু হলে ক্লাসেন-মিলার চড়াও হন লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার উপর। নিজের প্রথম পাঁচ ওভারেই পাঁচটি ছক্কার মার পড়ে জ্যাম্পার ওপর। সতর্কতার সঙ্গে জায়গামতো বল পেলে বাউন্ডারি বের করতে থাকেন দুই প্রোটিয়া ব্যাটার। তারপরও বিপদের মহাসাগরে পড়া দলটির একশ ছুঁতে লেগে যায় ২৮ ওভার। শতরানের দিকে এগোনো পঞ্চম উইকেট জুটিতে লড়াকু স্কোরের আশা দেখছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু আচমকাই দুটি উইকেট হারিয়ে বসে একই ওভারে।

পার্ট-টাইমার হেডের বলে বোল্ড হয়ে যান ক্লাসেন। ৪ চার ও ২ ছয়ে ৪৮ বলে ৪৭ রান করেন বিধ্বংসী ক্লাসেন। ভাঙে ১১৩ বলে ৯৫ রানের জুটি। পরের বলেই হেডের বড় বাঁক খাওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মার্কো ইয়ানসেন। তেতো স্বাদ নেন গোল্ডেন ডাকের। ৩১তম ওভারে ১১৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফেলে আবার খাদের কিনারায় চলে যায় প্রোটিয়ারা।

জেরাল্ড কোয়েটজি আট নম্বরে এসে দারুণ সঙ্গ দিয়ে সপ্তম উইকেটে ৭৬ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন মিলারের সঙ্গে। ৩৯ বলে ১৯ রান করে কোয়েটজি ফিরে যান। তবে রিপ্লেতে দেখা যায়, কামিন্সের বাউন্সারে উইকেটরক্ষক জশ ইংলিসের হাতে যাওয়া ক্যাচে আউট ছিলেন না তিনি। কারণ, বল লাগেনি ব্যাটে বা গ্লাভসে। তবুও হাঁটা দেন কোয়েটজি। কেশব মহারাজও ৪ রানে ফিরে গেলে মিলারের সঙ্গীর অভাবই পড়ে যায়।

লড়াকু ইনিংসে মিলার দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ দুইশ পার করান। ৭০ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর ১১৫ বলে সেঞ্চুরি পেয়ে যদিও পরের বলেই আউট হয়ে যান। ৮ চার ও ৫ ছক্কায় গড়া ছিল তার ১০১ রানের ইনিংস। এরপর কাগিসো রাবাদাকে বিদায় করে প্রোটিয়াদের গুটিয়ে দেন কামিন্স।

নিজের ১০ ওভারের কোটা স্টার্ক শেষ করেন ৩৪ রানে ৩ উইকেটে। হ্যাজেলউড ৮ ওভারে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নেন। ৫১ রান দিয়ে কিছুটা খরুচে থাকলেও কামিন্সের ঝুলিতে যায় ৩ উইকেট। এই তিন পেসারের বাইরে উইকেট পান অফ স্পিনার হেড। ২১ রানে তার শিকার দুটি।

Comments

The Daily Star  | English

8 killed as private car falls into roadside canal in Pirojpur

At least eight people, including four members of a family, died after a private car plunged into a roadside canal in Pirojpur early today

18m ago