যেভাবে সংগীতপ্রেমীদের প্লেলিস্টে অপরিহার্য ‘কার্নিভাল’

ব্যান্ডদল কার্নিভাল। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল/স্টার

লকডাউনের বিশাল অবসরে যখন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে গান শোনার বাড়বাড়ন্ত, তখন বাংলাদেশি ব্যান্ড কার্নিভাল হাজির হয় 'মোহমুক্তি' নিয়ে। আজও সবার মুখে মুখে ঘোরে অ্যালবামটির গান। প্রায় দুই দশকের দীর্ঘপথ পেরিয়ে কার্নিভাল অবশেষে এখন তার ন্যায্য পাওনা বুঝে নিচ্ছে, তরুণ সঙ্গীতানুরাগীদের প্লেলিস্টে ব্যান্ডটির গান এখন যেন অপরিহার্য।

'কার্নিভাল' শুরু হয় শখের বসে। চার বন্ধু তিনু, সাব্বির, তন্ময় ও সানি মিলে ২০০৬ সালে শুরু করে ব্যান্ডটি।

'ইন্দ্রালয়' নামে প্রথম অ্যালবাম বের করে তারা। 'যখন আমরা শুরু করি, তখন আমরা 'বড় কিছু' হব ভাবিনি। শো-তে আমাদের বন্ধুরাই শুধু আসত। হয়ত আমরাও তাদের শো-তে যেতাম বলে,' শুরুর দিকে কথা স্মরণ করে ভোকাল তিনু রশিদ বলেন।  

তিনু রশিদ 'কার্নিভাল' ব্যান্ডের একমাত্র প্রতিষ্ঠাকালীন ও পুরোনো সদস্য।

ব্যান্ডদল কার্নিভাল। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল/স্টার

পুরোনো লাইনআপ ভেঙে পড়লে, ২০১১ সালে সালমি, মৌসুম আর খালিদ যুক্ত হয় কার্নিভালে, এরপর তৈরি হতে থাকে 'আত্মোৎসর্গ, 'ডিসফাংশনাল মোশন পিকচার' এবং 'মোহমুক্তি'র মতো একের পর এক চমৎকার অ্যালবাম।

'সত্যি বলতে আমরা শুধু আড্ডা দিই। এমনকি কার্নিভালে যোগ দেয়ার আগে থেকেই আমরা একসাথে গান শুনতাম, গান নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম। হয়তো একারণেই এতদিন ধরে আমরা একসাথে আছি,' ড্রামার খালিদ আশরাফ জানালেন তাদের দীর্ঘ পথচলার রহস্য।

'কার্নিভালে'র সঙ্গে কথোপকথকনের বেরিয়ে এল আরও না জানা কথা। শো-য়ের অনুরোধে 'না' বলাটা যেন এই ব্যান্ডের একটা অভ্যাস। কারণ সবসময় শো করার মতো যথেষ্ট আগ্রহ তারা পান না। তারচেয়ে একসাথে বাসায় বসে কনসার্ট দেখতে বেশি আগ্রহী তারা।

তিনু রশিদ বলেন, 'এ কে রাহুল অবশ্যই ধন্যবাদ পাবে এত বছর আমাদের পাশে থাকার জন্য। এমনও হয়েছে যখন রাহুল আমাদের জন্য শো বুক করে রেখেছে, কিন্তু আমরা যাইনি, কারণ মগবাজার থেকে উত্তরা যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের কারোরই নাই!'

ব্যান্ড হিসেবে 'কার্নিভালে'র মোড় ঘুরিয়ে দেয় 'মোহমুক্তি' অ্যালবাম। করোনো মহামারির সময়ে স্পটিফাই, ইউটিউবের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরমের কল্যাণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এটি। এ প্রসঙ্গে ব্যান্ড গিটারিস্ট সালমি রহমান বলেন, 'আসলে অ্যালবামটি আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।' খালিদ ব্যাখ্যা করেন, '২০১৬ সালে এ অ্যালবামের রেকর্ডিং শুরু করি, কিন্তু মুক্তি দেওয়ার কোনো পছন্দসই জায়গা পাচ্ছিলাম না আমরা। স্ট্রিমিংও ব্যাপকভাবে তখন শুরু হয়নি। আমরা শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করাটা কাজে দিয়েছে।'

'মোহমুক্তি' অ্যালবামের প্রচ্ছদ।

অ্যালবামটির দারুণ সাউন্ড মিক্সিং করেন আনামুল হাসান রাজু, আর প্রচ্ছদ করেন শিরন। তাদেরও ধন্যবাদ জানান 'কার্নিভাল' সদস্যরা।

২০২১ সালে 'লাইভ ফ্রম কন্ট্রোল রুম' নামে প্রথম একক কনসার্ট শুরু করে দলটি। বাংলা ব্যান্ডজগতে এরপর থেকেই নিজেদের আসন আরও পাকা করে নেয় 'কার্নিভাল'। তিনু রশিদ জানান, ব্যান্ড ম্যানেজার রুদান আল আমিন (ত্রিনান) এর সকল কৃতিত্বের দাবিদার।

তিনি বলেন, 'যখন ত্রিনান আমাদের প্রস্তাব করে এরকম কিছু করার, তখন আমরা অনেক দোটানায় ভুগছিলাম। তাও আবার ৫০০টাকার টিকেটে! আমি তাকে টিকিটের দাম ২০০-২৫০ টাকা রাখার কথা বলছিলাম।'

কিন্তু দেখা গেল ১০ দিনের মাথায় সব টিকিট বিক্রি শেষ। ভক্ত-অনুরাগীরাও প্রচন্ড আনন্দ-উত্তেজনার সাথে তাদের সাথে গলা মেলালেন কনসার্টে।

এরকম অপ্রত্যাশিত সাড়া পাওয়ায়, কিছুদিন পরই তারা আরেকটি একক কন্সার্ট করেন। সেটিতেও সব টিকিট বিক্রি করে বাজিমাত করেন তারা।

আবার কনসার্ট হবে কি না এমন প্রশ্নে ম্যানেজার রুদান বলেন, 'আমরা তৃতীয় একক কনসার্ট করার পরিকল্পনা করছি। তবে এবার আয়োজনের নাম ও থিম পাল্টাবে।'

বর্তমানে শাহার শায়র ও ইবন ইবতেশাম নামে দুজন অতিথি সদস্য কার্নিভালে বাজাচ্ছেন। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন বরকত শোভন।

প্রায় দুই দশক পরও কার্নিভাল কী করে আজও একসাথে? এটা কি তাদের বেশ নিরীক্ষাধর্মী ও সময়ের চেয়ে আগানো কাজের কারণে? 'ভ্রম', 'আমার সত্য' বা 'সেইসব দিনরাত্রি'র মতো কালজয়ী গান এখনো ব্যান্ডটিকে ধরে রেখেছে বলে? নাকি নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে এখনো কিছুটা পরিচিতির বাইরে থাকার কারণে?

যদিও শেষ পর্যন্ত ব্যান্ডের কেউই এর সঠিক উত্তর খুঁজে পায়নি৷ এ প্রসঙ্গে তিনু রশিদ বলেন, 'আমরা খুশি যে তরুণরা আমাদের গান শোনে। আমরা নিতান্তই সাধারণ ছেলেপেলে যারা তাদের মিউজিক করতে পছন্দ করে। প্রতিদিন কাজ শেষে যখন আমি জ্যামিংয়ে আসি, সবরকমের দুশ্চিন্তা, ভয় মূহুর্তেই কেটে যায়। এতেই আমি খুশি।'

অনুবাদ করেছেন আসিফ করিম চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

1h ago