আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

ইংল্যান্ডের মতো দুরবস্থা হয়েছিল কখনো কোনো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের?

ইংল্যান্ড কোথায়? যেখানে আছে, সেখান থেকে আর নিচে যাওয়া যায় না।

ইংল্যান্ডের মতো দুরবস্থা হয়েছিল কখনো কোনো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের?

ইংল্যান্ড কোথায়? যেখানে আছে, সেখান থেকে আর নিচে যাওয়া যায় না।
ইংল্যান্ডের নতুন ওয়ানডে দল

সময়ের সঙ্গে কত দ্রুতই বদলে যায় দৃশ্যপট!

৫ নভেম্বরের এই দিনে একটু ফিরে যান তো ৫ অক্টোবরে। আগ্রাসী ব্র্যান্ডের ক্রিকেটে নাম কামানো ইংল্যান্ড পারবে বিশ্বকাপ ধরে রাখতে? বিশ্বকাপের আকাশে ইংলিশদের নিয়ে সম্ভাবনার বেলুন উড়ছিল তখন। এক মাস যেতে না যেতেই সেই সম্ভাবনার বেলুন চুপসে মিলিয়ে গেছে হাওয়ার সঙ্গে!

ইংল্যান্ড কোথায়? যেখানে আছে, সেখান থেকে আর নিচে যাওয়া যায় না। সাদা বলে যাদের দাপট বিশ্লেষণ-বই লেখার উপলক্ষ হয়েছে, তারা ভারত বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলের সবার শেষে। সাদা বলের রাজত্ব করা দলটা ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে, সেমিফাইনাল বাদ দিয়ে সে সত্যটাই এখন রুখতে ব্যস্ত ইংলিশরা।

অথচ বিশ্বকাপের আগে কেউ কী এমনটা ভেবেছিল? বললে তাকে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। নয়তো তাকে অক্টোপাসের চেয়েও উপরে রাখতে হয়। সেমির লাইনআপে কে না রেখেছিল ইংল্যান্ডকে!

একে একে নামগুলো পড়ুন- অ্যারন ফিঞ্চ, ডেল স্টেইন, অনিল কুম্বলে, ম্যাথু হেইডেন, টম মুডি, হার্শা ভোগলে, স্টিভ হার্মিসন, শেন বন্ড, মিচেল মেক্লেনগান, ওয়াসিম জাফর, দীপ দাসগুপ্ত, উরুজ মমতাজ, পারভেজ মাহরুফ। একজনেরও সেমির লাইনআপ ইংল্যান্ড ছাড়া ছিল না। ইংল্যান্ড সেমিতে যাচ্ছে, বলেছেন সবাই।

সেই ইংল্যান্ডই কিনা সাত ম্যাচ খেলে জিততে পারল মাত্র এক ম্যাচ! রানের ব্যবধানে হারগুলোতে গড়ে হেরেছে প্রায় ১০৮ রানে। ৬৯, ১০০, ২২৯, সবচেয়ে কম ব্যবধানটা ৩৩ রানের। বাকি দুই হারও আসেনি ৮ উইকেটের কমে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এমন দুরবস্থা অবাক করছে পুরো ক্রিকেটবিশ্বকে। আর কোন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এমন বেহাল কি কখনো হয়েছিল?

এর চেয়ে খারাপ হতে পারে না ভেবে যদি আপনার উত্তর হয় 'না', তাহলে আপনি ভুল বলেননি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই হেরে গেছে ছয়টি ম্যাচ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচ হারার অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড হয়েছে তাই ইংল্যান্ডের। এর আগে আগেরবারের চ্যাম্পিয়নরা সর্বোচ্চ ৪টা ম্যাচই হেরেছিল।

২০২৩ এর ইংল্যান্ডের মতো দুর্দশা না হলেও কাছাকাছি অবস্থা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে। ১৯৮৭ এর চ্যাম্পিয়নরা '৯২ বিশ্বকাপে এসে ৮ ম্যাচ খেলে হেরে গিয়েছিল ৪টিতেই। চার ম্যাচ হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল প্রথম পর্ব থেকেই। সেই বিশ্বকাপটাও হয়েছিল এবারের মতো রাউন্ড রবিন লিগে। এভাবে প্রথম পর্ব না পেরুনোর দিক দিয়ে আরেক ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের পাওয়া যায়। এর বাইরে প্রত্যেক বিশ্বকাপেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা দল দ্বিতীয় পর্বে পাড়ি দিয়েছে।

১৯৯২ ও ২০১৯ এর মতো পদ্ধতি ছিল না ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে। তবে সেবারও প্রথম পর্ব ডিঙিয়ে যেতে পারেনি ১৯৯৬ এর চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। ৬ দলের গ্রুপ থেকে তিন দল যেতে পারত সুপার সিক্সে। সেখানে শ্রীলঙ্কা ৫ ম্যাচে ৩টি হেরে প্রথম পর্বেই আটকে যায়। বিশ্বকাপের আর মাত্র একটি আসরে ৩ ম্যাচ হেরেছিল কোন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল। গতবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ১০ ম্যাচ খেলে যদিও জিতেছিল ৭টিতে। সেমিতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়াকে দুর্দশার সঙ্গে মেলানো যায় না তাই।

অন্য সব ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বেলায়ও মোটাদাগে সাফল্যের ফুলই ঝরেছে বলা যায়। প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো পরেরটাতেও জিতেছিল। '৭৯ বিশ্বকাপজয়ী ক্যারিবিয়ানরা ১৯৮৩ তে না পারলেও ফাইনালে গিয়েছিল। ৮ ম্যাচে হেরেছিল মাত্র দুটিতে। '৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারত পরের বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে পা রাখে। সবমিলিয়ে ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে দুটির বেশি হারেনি ভারতীয়রা।

বিশ্বকাপের ফরম্যাটের বদলে ম্যাচ সংখ্যারও অদল-বদল হয়েছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান যেমন পরের বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ২টি হেরেছিল। ৫ ম্যাচে ৪ জয়ে প্রথম পর্ব পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে থেমে যেতে হয় পাকিস্তানকে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মধ্যে দাপট দেখিয়েছে অজিরাই। ১৯৯৯ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া পরের দুটি বিশ্বকাপই জিতেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন নামে প্রবেশ করে। সেই দুইবারে এগারোটি করে ম্যাচ খেলে একটি ম্যাচও হারেনি অজিরা।

২০০৭ এর চ্যাম্পিয়নরা ২০১১ বিশ্বকাপেও কোয়ার্টার ফাইনালের আগে থামেনি। কোয়ার্টার ফাইনালের হারে সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচে ওই দুই হার (এক ম্যাচে ফল আসেনি)। ২০১১ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারতও পরেরবার সেমিফাইনালের ঘরে ঢুকে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে সেমির ওই একটা হারই ছিল ভারতের ৮ ম্যাচে।

অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাইরে কোন দল শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি। তবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সাফল্যও অতটা কম আসেনি। ইংল্যান্ড সেখানে এতটাই দুর্বিষহ সময় পার করছে, ষষ্ট ম্যাচেই হেরে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সবচেয়ে বেশি ম্যাচে হারের রেকর্ডটা গড়েছে। সপ্তম ম্যাচে এসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সেই রেকর্ডই আরও বড় করেছে জস বাটলারের দল।

এখনও দুই ম্যাচ বাকি। ফলাফল যাই হোক, ইংল্যান্ডের ২০২৩ বিশ্বকাপের গল্প এক লাইনে লিখতে গেলে সেটা হবে- শিরোপা ধরে রাখতে এসে এত জীর্ণশীর্ণ অবস্থা হয়নি আর কোন দলেরই। ভারত বিশ্বকাপে এতটাই বেহাল ইংল্যান্ড, তারা যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে সেটাই ভুলে যেতে পারেন যে কেউ!

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago