আবার আলোচনায় ঢাবির ‘প্রলয় গ্যাং’, গতবারের ভুক্তভোগী এবারের আসামি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ছিনতাইয়ের ঘটনায় আবার আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর অপরাধ চক্র 'প্রলয় গ্যাং।'

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে গত ৯ নভেম্বর 'প্রলয় গ্যাং'য়ের কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়।

মামলায় ৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলা করেছেন ভুক্তভোগী মীর আলভী আরসালানের মা রেহেনা আক্তার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক।

আসামিরা হলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া, স্যার এ এফ রহমান হলের জোবায়ের ইবনে হুমায়ুন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মুরসালিন ফাইয়াজ, সাকিব ও জুবায়ের।

আলভীর মা রেহেনা আক্তার মামলায় অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে বসে এক বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় তবারক, মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের, হুমায়ূনসহ কয়েকজন তাদের নানাভাবে হেনস্তা করেন, ভয়ভীতি দেখান। আলভী প্রতিবাদ জানালে তাকে উদ্যানের নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাকে রড, লাঠি ও কাঠ দিয়ে পেটানো হয়। তবারক রড দিয়ে পিটিয়ে আলভীকে রক্তাক্ত করেন। মুরসালিন লাঠি দিয়ে আঘাত করে আলভীর ডান হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে ফেলেন।

আলভীর বুকে ও পিঠে লাথি মারেন জুবায়ের। সাকিবসহ কয়েকজন সিগারেটের আগুন দিয়ে আলভীর শরীর পুড়িয়ে দেন। এ ছাড়া আলভীর মুখ, মাথা, ঠোঁট ও চোখে ঘুষি দেওয়া হয়। আলভীর পকেটে থাকা আড়াই হাজার টাকা নিয়ে যান তবারক। আলভীর কাছে থাকা ২৫ হাজার টাকা দামের একটি মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন মুরসালিন। আলভীর ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ফেলেন আসামিরা।

গুরুতর আহত অবস্থায় আলভীকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামলা দায়েরকালে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মীর আলভী আরসালান ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এদিকে এই মামলার আসামি স্যার এ এফ রহমান হলের জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনার মাধ্যমেই প্রায় সাড়ে ৭ মাস আগে সামনে এসেছিল 'প্রলয় গ্যাং'য়ের কার্যকলাপ। হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় 'প্রলয় গ্যাং'য়ের ১৯ সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা ৬ থেকে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

এবার প্রলয় গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আরেক মামলায় হুমায়ুনই আসামি হলেন।

গত ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হুমায়ুনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় মামলা করেন হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান। মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন।

মূলত এই ঘটনার সমালোচনার মুখে গ্যাংয়ের সদস্য নাইমুর রহমান ও সাকিব ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কিছু শিক্ষার্থী মিলে আলোচিত অপরাধ চক্র 'প্রলয় গ্যাং' গড়ে তোলেন। এই গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় নানা অপকর্ম করার অভিযোগ আছে। হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনার পর গ্যাংয়ের প্রকাশ্য অপরাধমূলক তৎপরতা কয়েক মাস সেভাবে চোখে পড়েনি। তবে গ্যাং আবার সক্রিয় হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর মাকসুদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি মামলার বিষয়ে অবগত আছেন।

'যেহেতু থানায় মামলা হয়েছে, পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ও বিষয়টি দেখবে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

10h ago