গরুর মাংসের দাম কমায় হতাশ খামারিরা

গরুর মাংসের দাম
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় গরুর খামার। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার ফাইল ফটো

মাংসের দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা খামারিদের গরুর দাম কম দিচ্ছেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ গবাদিপশু খামারিদের এলাকা পাবনার কথাই ধরা যাক। এখানে প্রতি মন (৩৭ কেজি) গরুর মাংসের জন্য খামারিরা পাচ্ছেন ২২ হাজার টাকা থেকে ২৩ হাজার টাকা। কয়েক মাস আগেও তা ছিল ২৪ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা।

মূল্যস্ফীতির মুখে চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশীয়ভাবে পালিত ও প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাই পথে আসা গরুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে মাংসের দাম কমার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক খামারি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, লালনপালনের খরচ মেটাতে না পেরে তারা গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার খামারি সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত মাসে পাঁচটি গরু বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, কম দামের কারণে একটিও বিক্রি করতে পারিনি।'

তিনি জানান, তার খামারে ৩০টি গরু আছে। বেশিরভাগ গরু দুধ দেয়। তিনি মাংসের জন্য ১০টি গরু লালন-পালন করছেন।

সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, 'প্রতি মন মাংস উৎপাদনে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হলেও ব্যবসায়ীরা প্রতি মন মাংসের দাম ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত দিচ্ছেন।'

প্রতিটি গরু পালনে খরচ হয় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে বর্তমানে বাজারে গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। তাই তিনি গরু বিক্রি করেননি।

তার মতো জালালপুর গ্রামের খামারি মো. রাজুও গরু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

দেশের ১৬ হাজারেরও বেশি খামারির প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ এমরান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খামারিরা কম দামে গরু বিক্রি করলে পোষাতে পারবেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসায় কেউ লোকসান দিতে চান না। তারপরও, চাহিদা কমে যাওয়ায় খামারিদের অনেকে কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।'

পাবনা ও সিরাজগঞ্জের খামারিরা ডেইলি স্টারকে জানান, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা ব্যবসা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রামখারুয়া গ্রামের খামারি মো. রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গোখাদ্যের দাম বাড়ছে। প্রতি বস্তা ব্রানের দাম এক হাজার ৮০০ টাকা। এক মাস আগেও এর দাম ছিল এক হাজার ৭০০ টাকা। গোখাদ্যের দাম বাড়লেও মাংসের দাম কমছে। আমরা খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতি মন মাংস উৎপাদনে আমাদের ২৪-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। পাচ্ছি ২০-২২ হাজার টাকা। খামার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।'

রাজু গত মাসে পাঁচ লাখ টাকায় ১০টি ছোট গরু বিক্রি করেছেন। গোখাদ্যের খরচ হিসাব করলে তার এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজু আরও বলেন, 'যদি খামার টিকিয়ে রাখতে চাই তাহলে প্রচুর খরচ। সেই টাকা তুলতে পারব কিনা তা অনিশ্চিত। পশু পালনের খরচ তুলতে কয়েকটি গরু বিক্রি করেছি।'

দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য গত রোববার ব্যবসায়ী ও খামারিদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি)।

সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, 'গরুর মাংসের অস্বাভাবিক দামে ক্রেতাদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য কাজ করা হচ্ছে।'

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ ব্যবসায়ীরা আগামীকাল বুধবার গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করবেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপ-পরিচালক মাহামুদুল হাসান বলেন, 'কে কোন মানের মাংস বিক্রি করছেন এর জরিপ করতে হবে। সেই অনুযায়ী মাংসের দাম ধরতে হবে।'

খামারি ও ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানান, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি তুলনামূলক কম দামে দেশি মাছ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস বিক্রি কমেছে।

তারা আরও জানান, গরুর মাসের দাম কমার আরেকটি কারণ ছিল ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসা গরুর দাম কম। এ ছাড়াও, চোরাই পথে ভারত থেকে হিমায়িত মাংস আসায় গরুর মাংসের দাম কমেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত অক্টোবরে খাদ্যমূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে। এটি অন্তত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত পাঁচ মাসের গরুর মাংসের খুচরা দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি কেজি গরুর মাংস গড়ে ৭৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

কিন্তু, গত রোববার প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে গড়ে ৬৭৫ টাকায়।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৮ সালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৩২০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৮০০ টাকা।'

তিনি জানান, গত এক মাসে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ১০০ টাকা কমেছে।

তিনি গরুর মাংসের দাম কমার কারণ হিসেবে এর চাহিদা কমার পাশাপাশি বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. রিয়াজুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে আমিষের অন্যান্য উৎস কম দামে পাওয়া গেলে গরুর মাংসের দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক।'

এ ছাড়া বাজারে শীতের সবজি থাকায় বছরের এই সময়ে মাছ-মাংসের দাম কমে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

5h ago