কপ-২৮ সম্মেলন

পর্যায়ক্রমে তেল, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার বন্ধের চুক্তি

কপ২৮ সম্মেলনের চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর এক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন সভাপতি ও অন্যান্যরা। ছবি: রয়টার্স
কপ২৮ সম্মেলনের চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর এক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন সভাপতি ও অন্যান্যরা। ছবি: রয়টার্স

দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক কপ-২৮ সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে তেল, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার কমাতে সম্মত হয়েছেন।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

নজিরবিহীন এই চুক্তিকে 'তেল যুগের' অবসানের পথে প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

দুই সপ্তাহের আলোচনা ও দরকষাকষির পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে এই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এই চুক্তি সারা বিশ্বের নীতিনির্ধারক ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি এক শক্তিশালী বার্তা, যার মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে সারা বিশ্ব জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের অঙ্গীকারে একতাবদ্ধ। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে এই উদ্যোগই হতে পারে মানবজাতির শেষ আশা।

কপ২৮ এর সভাপতি সুলতান আল জাবের এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক' বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি জানান, প্রকৃত সাফল্য তখনই আসবে যখন চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়িত হবে।

১০০টিরও বেশি দেশ কপ২৮ চুক্তিতে কঠোর ভাষায় তেল, গ্যাস ও কয়লার ব্যবহার 'পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার' বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায়। তবে এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের কাছ থেকে বিরোধিতা আসে। তাদের দাবি, সুনির্দিষ্ট জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ না করেও বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

এই বিতর্কে পুরো একদিন কেটে যায়।

ওপেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিশ্বের প্রমাণিত তেলের রিজার্ভের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দৈনিক তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশই তাদের কাছ থেকে আসে। এই দেশগুলোর সরকার রাজস্বের জন্য জ্বালানি তেলের ওপর বড় আকারে নির্ভরশীল।

জলবায়ু পরিবর্তনে ভঙ্গুর অবস্থায় আছেন এমন দ্বীপরাষ্ট্রগুলো মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসার স্বপক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিল। তাদের সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও অনেক দেশের সরকার।

ডেনমার্কের জলবায়ু ও জ্বালানিমন্ত্রী ডান ইয়রগেনসেন পারিপার্শ্বিকতায় বিস্ময় প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, 'আমরা একটি তেলের দেশে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের চারপাশে অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ দেশ। তা সত্ত্বেও আমরা তেল ও গ্যাসের ব্যবহার থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছি।'

চুক্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে ক্রমান্বয়ে একটি ন্যায্য, সুশৃঙ্খল ও সমতাভিত্তিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে।

চুক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার তিন গুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজের মতো প্রযুক্তির সহায়তায় কয়লার ব্যবহার কমানোর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় সদস্য দেশগুলোকে এখন তাদের জাতীয় নীতিমালা ও বিনিয়োগ কৌশলের সমন্বয় ঘটাতে হবে।

এ মুহূর্তে বিশ্বের ৮০ শতাংশ জ্বালানির উৎস হল তেল, গ্যাস ও কয়লা। এসব উপকরণের চাহিদা কমার বদলে বরং আরও বাড়ছে।

ওপেকের মহাসচিব হাইথাম আল ঘাইস ৬ ডিসেম্বর এক চিঠিতে ওপেকের সদস্য ও কপ২৮ এর মিত্রদের জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে সারা বিশ্বের উচিত নিঃসরণ কমানোর দিকে নজর দেওয়া।

তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো যুক্তি দিয়েছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে জলবায়ু থেকে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ক্ষতিকর প্রভাব দূর করা সম্ভব। কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির মাধ্যমে নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইডকে ক্যাপচার করে সংরক্ষণ করা সম্ভব।

তবে এই প্রযুক্তি অনেক ব্যয়বহুল এবং এখনো ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী নয়। 

Comments

The Daily Star  | English

Heavy damage reported at four sites in Israel after Iran missile attack

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

12h ago