বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর

বিফলে গেল সৌম্যের ১৬৯, অনায়াসে জিতে সিরিজ নিউজিল্যান্ডের

Soumya Sarkar
সৌম্য সরকার দারুণ সেঞ্চুরি করলেও জিততে পারল না বাংলাদেশ

সৌম্য সরকার তার কাজটা করলেন। কঠিন চাপে দ্যুতি ছড়িয়ে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা রেকর্ডময় ইনিংস। কিন্তু তার সেরা দিনে জ্বলে উঠতে পারলেন না আর কেউ। ব্যাটিং স্বর্গে তিনশোর নিচে পুঁজি নিয়ে তাই লড়াই করতে পারল না বাংলাদেশ।

বুধবার নেলসনে দ্বিতীয় ওয়ানডে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। আগে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশের করা ২৯১ রান ৩.৪ ওভার আগেই টপকে যায় কিউইরা।  অন্তত ৫০ রানের ঘাটতির হাহাকার স্পষ্ট হয় ম্যাচ শেষে।

বাংলাদেশের ২৯১ রানের ১৬৯ রানই আসে সৌম্যের ব্যাটে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুশফিকুর রহিমের ৪৫ বাদ দিলে আর কেউ ২০ রানও করতে পারেননি। ব্যাট করার জন্য সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতায় নিশ্চিতভাবেই পুড়বেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।

বাংলাদেশের ইনিংসে যেখানে একজনের গল্প। স্বাগতিকরা রান তাড়ায় দেখায় সম্মিলিত প্রয়াস। ইয়ং ৯৪ বলে করেন ৮৯, রাচিন ৩৩ বলে ৪৫, হেনরি নিকোলস ৯৯ বলে ৯৫। টম ল্যাথাম ৩২ বলে ৩৪ আর টম ব্ল্যান্ডেল অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ২৪ করে।

কম পুঁজি নিয়ে জিততে হলে বোলারদের করতে হতো বিশেষ কিছু। কিন্তু তারাও গড়পড়তা মান থেকেও খারাপ ছিলেন। ২৯২ রানের লক্ষ্যে নেমে তাই উড়ন্ত শুরু পান কিউই ওপেনাররা।

বিশ্বকাপ হিরো রাচিন রবীন্দ্র আগের ম্যাচে রান না পেলেও এবার জ্বলে উঠেন। আগের রাতে আইপিএলে দল পেয়ে আলোচনায় থাকা ব্যাটার ৩৩ বলে করেন ৪৫ রান। ৭ চার, ১ ছক্কায় তার ইনিংস থামান হাসান মাহমুদ। একাদশ ওভারে রাচিন যখন রিশাদ হোসেনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে আউট হয়ে ফিরছেন তখন দলীয় রান হয়ে গেছে ৭৬।

এরপর উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে জুটি পান হেনরি নিকোলস। দ্বিতীয় উইকেট ১৩১ বলে আসে ১২৮ রান। এই জুটিই ম্যাচ করে দেয় সহজ।

বাংলাদেশের বোলারদের প্রয়াস ছিল একদম সাদামাটা। মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় দলে আসা তানজিম হাসান সাকিব ছিলে একবারে বিবর্ণ। এলোমেলো বল করে রান বিলাতে থাকেন তিনি।

হাসানও ছিলেন খরুচে। তবে টানা তিন চার খাওয়ার পর ইয়ংকে ফেরান তিনি। বাকি কাজ সারতে কেবল সময়ের অপেক্ষা ছিলো। অধিনায়ক টম ল্যাথাম আর হেনরি নিকোলস মিলে পান আরকে জুটি। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে থামেন নিকোলসও। তবে ব্ল্যান্ডেলকে নিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ল্যাথাম।

সকালে টস হেরে ব্যাটিং পেয়ে অখুশি ছিলেন না শান্ত। কিন্তু সৌম্য ছাড়া বাকিদের ব্যর্থতায় মলিন হয়েছে বাস্তবতা। রোদ ঝলমল দিনে চার দিয়ে শুরু করে সৌম্য আভাস দেন বড় কিছুর। কিন্তু আরেক প্রান্তে পড়তে থাকে উইকেট। এনামুল হক বিজয় ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে দেন ক্যাচ, শান্ত বাউন্স বুঝতে না পেরে সহজ ক্যাচ। লিটন দাসের বিদায় আলগা শটে। এই তিনজনই থামেন দুই অঙ্কের আগে।

৪৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর তাওহিদ হৃদয় জুটির সম্ভাবনা দিলেও থামেন রান আউটে। পরে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ৯১ রানের জুটি আনেন সৌম্য। মুশফিকও কাজ অসমাপ্ত রেখে থামেন। সৌম্যর একার উপর তাইল দলকে টানার ভার পড়ে।

অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে দারুণ সব শট উপহার দিতে থাকেন সৌম্য। ৫৮ বলে ফিফটি পেরিয়ে জীবন পেয়ে নিজেকে সামলে গুছিয়ে এগিয়েছেন, ৯২ রানে আরেক জীবন পান। ১১৬ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করার পর উত্তাল হয়ে উঠে তার ব্যাট। পরের ৩৫ বলে যোগ করেন আরও ৬৯ রান। ২২ চার ২ ছক্কার ইনিংসে এশিয়ান ব্যাটার হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাঠে খেলেন সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।

দ্যুতিময় ব্যাটিংয়ে তার এতসব অর্জন পূর্ণতা পেল না দল হারায়। শেষ ওভারে সৌম্যের বিদায়ে তিনশোর নিচে থামা বাংলাদেশের পুঁজি যথেষ্টের চেয়ে বেশ কম ছিলো তা বুঝিয়ে দেন ইয়ং, নিকোলসরা।

বাংলাদেশ হারলেও সৌম্যই হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

Comments

The Daily Star  | English

Familiar Dhaka in an unfamiliar mood

The familiar city now appears in an unfamiliar form—no traffic jams, no honking, no packed footpaths

24m ago