‘টুয়েলভথ ফেল’কে কীভাবে দেখছেন বাংলাদেশি দর্শক

কারো জন্য হার না মেনে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা, আবার কারো জন্য আদর্শ প্রেমের গল্প, কেউ আবার দেখেছেন তাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।

'টুয়েলফথ ফেল'' একটি গল্প, একটি সিনেমা যা স্পর্শ করেছে কোটি হৃদয়ের স্পন্দন। সিনেমা হলের প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট, রিল অথবা ট্রল সবখানে শুধু টুয়েলফথ ফেলের চর্চা।

'টুয়েলফথ ফেল'কে কেন্দ্র করে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এই লেখা।

শ্রদ্ধার মতো সঙ্গী

ভারত ও বাংলাদেশে 'টুয়েলফথ ফেল' সিনেমাটির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো এর প্রেমকাহিনী। সমাজের একটি প্রচলিত ধারণা যে প্রেমিকারা একজন তথাকথিত ব্যর্থ পুরুষের সঙ্গী হতে চায় না, যা সিনেমার সংলাপেরও অংশ।

তবে সমাজে 'শ্রদ্ধার' মতো বিপরীত মনন সম্পন্ন নারীও আছেন যার সঙ্গে অনেকে নিজের মিল পেয়েছেন। এমনই একজন নেজা মাহমুদ। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এর আইন বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা এই সিনেমাপ্রেমী মনে করেন 'শ্রদ্ধা' চরিত্রটি মোটেও অবাস্তব নয়।

তিনি বলেন, 'শ্রদ্ধার চরিত্র এবং পরিবার অনেকের কাছে অবাস্তব লাগলেও আমার কাছে অবাস্তব লাগেনি। কারণ, আমি নিজেই এমন ব্যক্তিত্ব ধারণ করি এবং আমার বাবা মা'ও শ্রদ্ধার বাবা মায়ের মতো৷ কোনো রকম অরুচিশীল দৃশ্য ছাড়া যেভাবে নারীত্বকে সিনেমাতে দেখানো হয়েছে তা প্রশংসার দাবিদার।'

অনুপ্রেরণা যোগায়

মানুষের অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে, শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব; 'টুয়েলফথ ফেল' এমন অনুপ্রেরণার যোগান দেয় বলে মনে করেন মো. মিরাজ হোসেন।

স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি নিজেও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন দেখেন। টিউশন করে নিজের খরচ যোগান তিনি। পাশাপাশি পরিবার ও নিজের ভবিষ্যতের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সরকারি চাকরির জন্য লড়ে যাচ্ছেন।

বিসিএস পরীক্ষা টুয়েলফথ ফেলের আইপিএস, আইএএস পরীক্ষার সমতূল্য। তাই টুয়েলফথ ফেলের মনোজ কুমারের মাঝে নিজেকেও দেখতে পান এই বিসিএস পরীক্ষার্থী।

তিনি বলেন, 'সহজ ও সাবলীল গল্পের সাথে অনুপ্রেরণামূলক বার্তা। অনেকেই হয়তো সরকারি চাকরি পাবার ক্ষেত্রে একে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিবে, আমি বরং নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য অদম্য ইচ্ছা শক্তি ও পরিশ্রমকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করব।'

একই কথা জানান স্কুলশিক্ষক সাদিয়া আক্তার। তিনি নিজেও বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শ্রদ্ধার মতো চরিত্রটি বাস্তব জীবনে বিরল বলে মনে করেন তিনি।

'আমরা প্রতিনিয়ত বিসিএস বা সরকারি চাকরিগুলোতে অনুত্তীর্ণ হবার পর আবার চেষ্টা করি যা সিনেমাতে রিস্টার্ট (পুনরায় চেষ্টা) করার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এই রিস্টার্ট করার বিষয়টি যেন আমাদের জন্যই ছিল। তাই গল্পটি অনুপ্রেরণা হিসেবে নেওয়া যায়,' বলেন সাদিয়া আক্তার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা

মানুষ নিজের সংগ্রাম, গল্প-উপন্যাস কিংবা সিনেমাতে দেখতে পছন্দ করে। 'টুয়েলফথ ফেল' মানুষের এই সূক্ষ্ম আবেগেই নাড়া দিয়েছে। জাকির হোসেন সরকারি ব্যাংকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অফিসার (জেনারেল) পদে নিয়োপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, 'সিনেমাটি মনোজ কুমারের সংগ্রামী যাত্রার গল্প। তার যাত্রার ভেতরের পরিবেশটা এতো সুন্দর করে ফোঁটানো হয়েছে যে, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাদের যাত্রার সাথে মিল খুঁজে পেয়েছে। সিনেমাটি আলোচনায় থাকা এটি অন্যতম কারণ। কেননা, সিনেমার গল্পটি আমার সংগ্রামের সাথে মিলে যায়।'

সিনেমাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতো আলোড়ন তৈরির করার পেছনে চার্লস ডারউইনের 'survival of the fittest' বা 'যোগ্যতমের টিকে থাকা' এর সঙ্গে তুলনা করেন মো. মিরাজ হোসেন।

সিনেমার শুরুর দিকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়া দ্বীপ মোহনের আইপিএস অফিসার হওয়ার গল্পটির উদারহণ টেনে তিনি বলেন, 'সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করার সময় পড়েছি যে দর্শক শূণ্য থেকে ওঠে আসা মানুষের গল্প পছন্দ করে। সাধারণত আমরা সবাই যার যার জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত, তাই একজন হিরো বা ত্রাণকর্তাকে চাই। এই সিনেমায় দ্বীপ মোহনের কোনো অভাব ছিল না তাই তার সফলতা আমাদের জন্য 'গল্প' হয়ে ওঠেনি। অপরদিকে মনোজ কুমারের সংগ্রাম যেন তার সফলতাকে ন্যায্যতা দেয়।

'মানুষের জীবনে মনোজ-শ্রদ্ধার মতো এমন প্রেমও সচারাচর দেখা যায় না। এমন প্রেম কারো ভাগ্যে না থাকার আক্ষেপও সিনেমাটিকে জনমানুষের কাছে নিয়ে যায়,' বলেন তিনি।

গতানুগতিক অ্যাকশন সিনেমার স্রোতের বিপরীত

২০২৩ সালে ভারতের সর্বাধিক আয় করা সিনেমার বেশিরভাগই অ্যাকশনধর্মী। বর্তমান ট্রেন্ডে মারকুটে সিনেমা, অতিপুরুষালী আচরণ, প্রেমে প্রতারণা এসব যেন হিট সিনেমার রসদ। তবে এই চলতি স্রোতের বিপরীতে মূল্যবোধের গল্প 'টুয়েলফথ ফেল'।

নামি অভিনেতা আশুতোষ রানা এক সাক্ষাৎকারে আবেগী দৃশ্যের অভিনয় একটি কবিতার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছিলেন যার বাংলা অনেকটা এমন যে, 'শব্দগুলো ঠোঁটের আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই, আমি চোখ দিয়ে শুনতে পাই, তুমি চাহনিতে বলো।' টুয়েলফথ ফেলের পুরো গল্প মনোজ কুমার বা বিক্রম মাসির চাহনিতেই যেন প্রকাশ পায়।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiya Party HQ set afire, vandalised

The Jatiya Party headquarters at the capital’s Kakrail was set on fire and vandalised last night by a group of people who claimed themselves to be “anti-fascist students, workers, and masses”.

11m ago