ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের রেকর্ড

খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এই খাতের জন্য রেকর্ড। আর এই রেকর্ড এনবিএফআই খাতের ব্যাপক ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির ইঙ্গিত।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ৩৫টি এনবিএফআইয়ের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, যা একই বছরের জুনের চেয়ে ৯ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এনবিএফআইগুলোর মোট ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছিল খেলাপি। একই বছরের জুন শেষে যা ছিল ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

এমন এক সময়ে এই তথ্য সামনে এলো যখন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ, ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা, সুশাসনের অভাবসহ অন্যান্য দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) সাবেক চেয়ারম্যান, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বাহ্যিক চাপ ও সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। এ কারণে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি এনবিএফআই খাতও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর থেকে এনবিএফআইগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছি। এতে এই খাতের খেলাপি ঋণের তথ্য সামনে আসছে।

ঋণ অনিয়ম ও সুশাসনের অভাবের কারণে সম্প্রতি উত্তরা ফাইন্যান্স এবং ফিনিক্স ফাইন্যান্সের মতো কিছু এনবিএফআইয়ের বোর্ড ও পরিচালনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনা মহামারির সময় ঋণ পরিশোধের দেওয়া সুবিধা প্রত্যাহার করার পর এই খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ খাতের মোট ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে ১০টি এনবিএফআইয়ের খেলাপি ৬৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বা ১৪ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা।

ঋণ অনিয়মের কারণে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৯৯ দশমিক ০২ শতাংশ।

অনিয়মে জর্জরিত আরেক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এনপিএল) খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ।

২০১৯ সালে এই দুটি এনবিএফআইয়ের ঋণ অনিয়মের তথ্য প্রকাশ্যে আসে। কারণ ওই সময়ে তারা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারেনি। এরপর ক্রমান্বয়ে আরও কিছু এনবিএফআইয়ের দুর্বল আর্থিক অবস্থার তথ্য সামনে আসতে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিআইএফসির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪৩ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৯৭ শতাংশ। জিএসপি ফাইন্যান্সের পরিমাণ ৭২১ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৮৭৯ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং আভিভা ফাইন্যান্সের ১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৭২ শতাংশ।

মমিনুল ইসলাম বলেন, চলমান সংকটের মধ্যেও আইপিডিসি ফাইন্যান্সসহ কিছু এনবিএফআইয়ের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারা ভালো করছে। আইপিডিসির খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির (আইআইডিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ও বিএলএফসিএ'র চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এনবিএফআই খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনার সময় দেওয়া সুবিধা প্রত্যাহারের পর খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আইআইডিএফসির খেলাপি ঋণ ছিল ৬১১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫৯ শতাংশ।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে আসবে, যার তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য ঘাটতির কারণে বেশিরভাগ এনবিএফআই বর্তমানে অর্থ সংগ্রহে লড়াই করছে।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি থাকায় গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০টি এনবিএফআইয়ের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দুর্বল এনবিএফআইগুলোর জন্য মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ী।

তিনি বলেন, এনবিএফআইগুলোর উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারেনি। এতে গত কয়েক বছরে এই খাতে বারবার কেলেঙ্কারি ও ঋণ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

পাঁচ থেকে ছয়টি দুর্বল এনবিএফআই বন্ধ ও কয়েকটিকে এক করার আহ্বান জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

7h ago