চাকরির নিরাপত্তাহীনতা যেভাবে মোকাবিলা করবেন

ছবি: ফ্রিপিক

বর্তমানে আপনি যে চাকরি করছেন, সেটি সম্পর্কে অনিশ্চয়তার নামই জব ইনসিকিউরিটি, বাংলায় যাকে বলা যেতে পারে চাকরির নিরাপত্তাহীনতা। কর্মক্ষেত্রে ছাঁটাইসহ নানা পরিস্থিতিতে কর্মীদের এমন অনুভূতি তৈরি হতে পারে। চাকরি হারানো নিয়ে অনেকে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তাও ভোগেন।

অনেকে চাকরিজীবনের দীর্ঘসময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কাটানোর কারণেও চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন।

চাকরির নিরাপত্তাহীনতা কী

কোনো কর্মীর নিয়োগদাতা যদি অস্থিতিশীল হয় অথবা কর্মী যদি তা মনে করেন, তাহলে চাকরির নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। এটা হচ্ছে চাকরির নিরাপত্তার ঠিক বিপরীত। একজন কর্মী তখনই তার চাকরিকে সুরক্ষিত ভাবেন, যখন তিনি নিজের অফিস ও কাজ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী থাকেন।

মাঝে মাঝে চাকরির অনিশ্চয়তা বাস্তব নাকি ধারণাগত, তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ চাপ, উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর এর যে নেতিবাচক প্রভাব, তা খুবই বাস্তব।

মৌসুমি খাতে কাজ করেন, এমন কর্মীরা চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। যেমন- আপনি হয়তো এমন কোনো কাজ করেন, যা শুধু শীতকালেই করা যায়। অথবা ধরুন, আপনি একজন সাঁতার প্রশিক্ষক। গরম কাল শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার হাতে আর কাজ থাকবে না।

চাকরির নিরাপত্তাহীনতার ধরন

চাকরির নিরাপত্তাহীনতার মূলত দুটি প্রধান ধরন রয়েছে: তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী। যেমন- আপনার যদি মনে হয় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে ছাঁটাই করা হতে পারে, তাহলে আপনার মধ্যে চাকরি নিয়ে তীব্র নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে। অন্যদিকে, অফিসের অবস্থা যদি ভালো থাকে, বসও আপনার কাজে সন্তুষ্ট থাকে, কিন্তু আপনি নিশ্চিত নন এই স্থিতাবস্থা কতদিন থাকবে এবং চাকরির বাজারে বড় পরিবর্তনের শঙ্কা থাকে- তাহলে চাকরি নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে।  

দ্বিতীয় ধরনটি অনেকের কাছে পরিচিত মনে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ কর্মী এই পরিস্থিতিতে চাকরি করেন।

চাকরির নিরাপত্তাহীনতার আরেকটি ধরন আছে, সেটি হচ্ছে চাকরিতে অবস্থান বা পদের পরিবর্তন। যেমন ধরুন- আপনার অফিসের পুরো কাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আপনাকে ছাঁটাই করা হয়নি, কিন্তু ভিন্ন একটি বিভাগে বদলি করা হয়েছে, যা আগের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ ও কম মর্যাদাকর। নতুন পদে এমনকি বেতনও কম হতে পারে এবং পরের ধাপে যাওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে।  

এই অবস্থায় চাকরি চলে যাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্কটে হয়তো পড়বেন না, তবে চাকরি নিয়ে আপনার সন্তুষ্টি ও আগ্রহ অনেকটাই কমে যাবে।

চাকরির নিরাপত্তাহীনতা কর্মীর ওপর যে প্রভাব ফেলে

চাকরির নিরাপত্তাহীনতা কর্মীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা থেকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আলসার, মাথাব্যথা, অনিদ্রা ও পিঠে ব্যথার মতো রোগ হতে পারে। চাকরির নিরাপত্তাহীন কর্মীদের ধূমপানের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, চাকরির নিরাপত্তাহীনতার উপলব্ধিও কর্মীদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সক্ষমতার অভাবের কারণেও অনেকে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বলে গবেষকরা মনে করেন। চাকরিচ্যুত হলে আপনার পরবর্তী করণীয় কী, সে সম্পর্কে ধারণা রাখুন। অফিসে এইচআরের সঙ্গে কথা বলুন, কোনো প্রশিক্ষণ অথবা এককালীন আর্থিক সহায়তা পাওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়ে আলোচনা করুন। অনেক সময় দেখা যায় কর্মীরা অযথাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তাই আগে নিশ্চিত হয়ে নিন, তারপর পরবর্তী করণীয় ঠিক করুন।  

যেভাবে মোকাবিলা করবেন 

সরকারি চাকরিজীবী না হলে ক্যারিয়ারের কোনো না কোনো পর্যায়ে সবারই চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে বাস্তবতা মেনে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা। 

কিছু পরামর্শ

নিজের প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন। বর্তমান চাকরিটি যদি আপনার পছন্দেরও হয়, অফিসে যদি সবাই আপনাকে পছন্দও করে, তারপরও এটা মাথায় রাখুন যে, প্রায় কেউই বহু বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে না। ধারাবাহিকভাবে নিজের দক্ষতা বাড়াতে থাকুন। সম্ভাব্য ভালো চাকরি এবং ছাঁটাই- উভয় বিষয়েই চোখ-কান খোলা রাখুন।
 
নিজেকে প্রশ্ন করুন যে, এমন নিরাপত্তাহীনতায় আর কয়দিন থাকতে চান? আরও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও সুরক্ষিত চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করুন। নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করুন।
 
আপনি যে পেশায় নিয়োজিত আছেন, সে পেশায় কোন দক্ষতার মূল্য সবচেয়ে বেশি, সেটি খুঁজে বের করুন। খুব ভালো কোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে সেটি যে শুধু চাকরির নিশ্চয়তা দেবে তা-ই নয়, বরং ক্যারিয়ারে আরও ওপরের দিকে যেতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। 

তথ্যসূত্র: দ্য ব্যালেন্স মানি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago