ঢাকাই সিনেমায় ‘কৌতুক’ শব্দের প্রতিশব্দ ছিল ‘দিলদার’

আশি-নব্বই দশকের দিকে চলচ্চিত্রকে ব্যবসাসফল করানোর জন্য দিলদার ছিল অপরিহার্য।
দিলদার
কৌতুক অভিনেতা দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

অলংকার শাস্ত্রে উল্লিখিত মানবমনের নয়টি রসের একটি হলো 'হাস্যরস'। হাস্যরস থেকেই হাসির উদ্রেক ঘটে। হাস্যরসের প্রধান ধারা কৌতুক।

আর ঢাকাই সিনেমায় 'কৌতুক' শব্দটির প্রতিশব্দ ছিল 'দিলদার'। বাংলাদেশে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে এক চেটিয়া বাংলা সিনেমায় দাপুটে অভিনয় করে গেছেন তিনি।

দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

আজ, ১৩ জানুয়ারি ঢাকাই সিনেমার 'কমেডি কিং' দিলদারের জন্মদিন। ১৯৪৫ সালের এদিনে চাঁদপুরে জন্ম নেন তিনি। দিলদারের প্রকৃত নাম 'দেলোয়ার হোসেন'। নিজেই নিজের নাম বদলে রেখে দেন দিলদার হোসেন।

এসএসসি পাশের পর ১৯৭২ সালে 'কেন এমন হয়' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন দিলদার। কালক্রমে নিজ অভিনয় গুণে দর্শককে মুগ্ধ করে একনামে পরিচিতি লাভ করেন এবং হয়ে উঠেন ঢাকাই সিনেমার অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতা।

আশি-নব্বই দশকের দিকে চলচ্চিত্রকে ব্যবসাসফল করানোর জন্য দিলদার ছিল অপরিহার্য।

স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে কৌতুক অভিনেতা দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের নামকরা পরিচালক মালেক আফসারী তিনি বলেন, 'আমরা যখন স্ক্রিপ্ট করতে যাই, রাইটারের সাথে বসি তখন তাকে বলি সিনেমায় কী কী থাকতে হবে। বলি গল্পতে অ্যাকশন থাকতে হবে, গল্পতে সাসপেন্স থাকতে হবে...ছবি হিট করাবার জন্য যা যা লাগে।

'একটা নতুন আউটডোর লোকেশন লাগবে, নতুন গল্প লাগবে, আর কী লাগবে? কমেডি লাগবে। কিন্তু আমরা কমেডি শব্দটা উচ্চারণ করতাম না। আমরা বলতাম যে অ্যাকশন লাগবে, সাসপেন্স লাগবে, দিলদার লাগবে।'

কিংবদন্তী কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, 'অভিনয়ের মাধ্যমে কাউকে কাঁদানোর চাইতে হাসানো বেশি কঠিন।' পর্দায় কৌতুক অভিনেতার ক্ষেত্রে সংলাপের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি।

দীর্ঘ সিনে ক্যারিয়ারে দিলদারের অভিনয় দক্ষতা যেমন ছিল, তার অঙ্গভঙ্গিও ছিল বেশ সাবলীল।

তার জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল 'আব্দুল্লাহ' নামে একটি চলচ্চিত্র। সেসময়ের অন্যতম ব্যবসাসফল এই সিনেমা আয় করেছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা।

দিলদার
কৌতুক অভিনেতা দিলদার। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো—বেদের মেয়ে জোসনা, বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, কন্যাদান, চাওয়া থেকে পাওয়া, সুন্দর আলী জীবন সংসার, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, শান্ত কেন মাস্তান, গাড়িয়াল ভাই, অচিন দেশের রাজকুমার, প্রেম যমুনা, বাঁশিওয়ালা, তুমি শুধু আমার, খাইরুন সুন্দরী, আব্দুল্লাহ, এই ঘর এই সংসার, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান ইত্যাদি।

২০০৩ সালে 'তুমি শুধু আমার' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন দিলদার। সে বছর ১৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

অভিনয়ের মাধ্যমে সর্বস্তরের দর্শকদের নানান অসঙ্গতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন তিনি। তার মৃত্যু আজও চলচ্চিত্র প্রেমীদের শোকাহত করে তোলে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago