এক সময় কুৎসা রটানো সেই প্রতিবেশীরাই এখন সাগরিকাকে বাহবা দিচ্ছেন

বামে সাগরিকার বাবা-মা। ডানে সাগরিকা

এক সময় যে প্রতিবেশীরা সাগরিকার ফুটবল খেলা দেখতেন বাঁকা চোখে, করতেন নানান কটু মন্তব্য, গুজব রটিয়ে তৈরি করতেন অস্বস্তি। তারাই এখন ঠাকুরগাঁওর রানি কমল উপজেলায় সাগরিকার খেলা বড় পর্দায় দেখার ব্যবস্থা করেছেন।

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে বৃহস্পতিবার ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে স্বাগতিকদের বড় ভরসার নাম ফরোয়ার্ড সাগরিকা। টুর্নামেন্ট জুড়ে ঝলক দেখিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমের নজর কেড়েছেন তিনি। মুন্সিয়ানা দেখিয়ে দেশজুড়েই সাড়া ফেলেছেন তরুনী ফুটবলার।

চা-বিক্রেতা লিটন আলি ও আনজুমানারা বেগম মেয়ে সাগরিকার ফাইনাল খেলা মাঠে বসে দেখতে আজ ঢাকায় এসেছেন। সাগরিকার অবশ্য তার বাবা মায়ের ঢাকা আসার খবর জানেন না। জানা যায়, সাগরিকার বাবা-মায়ের ঢাকা আসার ব্যবস্থা করেছেন রাঙাউটি গ্রামের তাদের সেই প্রতিবেশীরাই।

নেপালের বিপক্ষে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টিভি ভাড়া করে মেয়ের খেলা দেখেছিলেন তারা। সেই খবর প্রচার হওয়ার পর ওয়ালটন গ্রুপ তাদের একটি টেলিভিশন উপহার দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সেই টেলিভিশন গ্রহণ করতেই ঢাকা আসেন তারা। বাড়তি হিসেবে থাকছে মেয়ের খেলা সরাসরি দেখার ব্যাপার।

ফুটবল খেলে এই পর্যায়ে উঠে আসতে বিরূপ পরিস্থিতি পার করতে হয়েছে সাগরিকাকে। একবার গুজব ছড়িয়ে যায় যে,  সাগরিকা একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন। আনজুমানারা প্রতিবেশীদের নিশ্চিত করেন মেয়ে আসলে গেছেন ফুটবল লিগ খেলতে।

আনজুমানারা বলেন, 'গত বছর প্রতিবেশীরা জানতে চান আমাদের মেয়ে সাগরিকা কোথায়? তারা জানতেন আমাদের মেয়ে একটি ছেলের সঙ্গে লুকিয়ে চলে গেছে। আমরা তাদের প্রমাণ দেখাই যে মেয়ে নারীয় লিগে খেলছে। যে খেলা তাদেরকে সরাসরি মোবাইলে দেখাই। এখন সাগরিকার অর্জনে সবাই খুশি। তারাই আমাদের দেখান যে সাগরিকার ছবি কত বড় করে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।'

সাগরিকার বাবা লিটন আলি জানান, সেই ঠাকুরগাঁও থেকে বহু কষ্টে ঢাকা এসেছেন তারা, সেসব কষ্ট উবে যাবে মেয়েকে সরাসরি খেলতে দেখে, 'ঠাকুরগাঁও থেকে আমরা অনেক যন্ত্রণা সয়ে এসেছি, কারণ আমাদের মেয়ে খেলবে। প্রথমবার মাঠে বসে খেলা দেখব। আমার মনে হয় তাকে সরাসরি দেখে সব যন্ত্রণা চলে যাবে।'

দারিদ্র্যতার কারণে মেয়েকে প্রয়োজনীয় কিছু দিতে পারেননি বলেও আক্ষেপ ঝরে তার কণ্ঠে, 'চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর আগে আমার মেয়ে এক জোড়া বুট চেয়েছিল ৪ হাজার টাকা দামের। আর্থিক কারণে দিতে পারিনি। পরে সাগরিকা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে সে মজা করেছে।'

একবার বিকেএসপি থেকে ফেরার পর সাগরিকার সঙ্গে এক মাস কথা বলেননি তার বাবা। সাগরিকা তখন প্রতিজ্ঞা করেন বড় ফুটবলার হবেন, 'এক মাস কথা বলা বন্ধ রাখার পর সিঙ্গাপুরে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে খেলতে যাওয়ার আগে সে আমার কাছে মাফ চায়।'

Comments

The Daily Star  | English

Gender budget shrinks, concerns raised over women’s development

Rights activists warn that this rollback threatens to reverse progress and stall efforts toward achieving the Sustainable Development Goals (SDGs).

30m ago