লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম

নদীতে পানি নেই, চলছে না জীবন

নদীতে পানি নেই
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় বামনডাঙ্গা এলাকায় দুধকুমার নদ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ও জিনজিরামসহ ২৬ নদ-নদী প্রায় শুকিয়ে গেছে। নদ-নদীর বুকে জেগেছে মাইলের পর মাইল পর দীর্ঘ চর। নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। অনেকে পেশার বদলিয়েছেন। পেশা বদলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে।

নদীপাড়ের লোকজন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান—নদ-নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ নেই। নৌকা চলাচল করছে না। মাইলের পর মাইল চর জেগে উঠায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। নদীতে মাছ না থাকায় জেলে এবং নৌকা চলাচল করতে না পারায় মাঝিদের অনেকে পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। সংসার চালাতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

নদীতে পানি নেই
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি এলাকায় তিস্তা নদী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়—দুই জেলায় ২৫ নদ-নদীতে ঘাট আছে ২০০টি। প্রত্যেকটি ঘাটে মাঝি আছেন পাঁচ থেকে ১৫ জন। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি ঘাট চালু আছে। বাকিগুলো বন্ধ থাকায় মাঝিরা কর্মহীন।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে জেলে পরিবার আছে ২৫ হাজার। গড়ে প্রত্যেক পরিবারে সদস্য আছে পাঁচ জন করে। নদ-নদীতে পানি না থাকায় নেই মাছ। জেলেরা কর্মহীন। অনেকে পেশা ছেড়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।

চরের ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানান, তারা কম খরচে নৌকায় পণ্য পরিবহন করতে পারতেন। নদীতে পানি না থাকায় অনেক বেশি খরচ করে ঘোড়ার গাড়ি অথবা অন্য উপায়ে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

নদীতে পানি নেই
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি এলাকায় তিস্তা নদী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রামের রাজারহাট গতিয়াশ্যাম নৌকা ঘাটের মাঝি মকবুল হোসেন (৪৫) ডেইলি স্টারকে জানান, নদীতে পানি না থাকায় নৌকা চালানো যাচ্ছে না। ঘাট বন্ধ। এই ঘাটের ১০ মাঝির তিনজন পেশা ছেড়ে দিনমজুরের কাজ করেছেন। অন্য মাঝিরাও পেশা বদলানোর চিন্তা করছেন।

তিনি বলেন, 'হামরাগুলা অন্য কাজ ভালোভাবে জানি না। অন্য কাজে যোয়াও ঠিকমতো কামাই কইরবার পাই না। নাও চলা হামার অভ্যাস। নাও বন্ধ হয়া যাওয়ায় হামাকগুলা না খ্যায়া থাকা নাইকবার নাইকছে। ফের কোনদিন নদীত পানি হইবে সেদিন নাও চালামো।'

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া দাসপাড়া গ্রামের জেলে সুখেন চন্দ্র দাস (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীত জল নাই। মাছও নাই। জালগুলা গোটে থুইয়া বাড়িত বসি আছি। হামরাগুলা জাল দিয়া মাছ ছাড়া আর কিছুই কইরবার পাই না। হামরাগুলা বেকার হয়া গ্যাইছি।'

নদীতে পানি নেই
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় গোবর্ধান এলাকায় তিস্তা নদী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একই গ্রামের জেলে নবীন চন্দ্র দাস (৪০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুই একমাস আগোত মাছ মারা বাদ দিছোং। এ্যালা মুই ইকসা চালায়া কামাই কইরবার নাকছোং। ঠিকমেতান ইকসাও চালবার পাং না। এটা না করিয়াও মোর উপায় নাই। সংসার চালা নাগে।'

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে জেলেরা কাজের সংকটে ভুগছেন। পলি জমায় শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদীতে পানি থাকছে না। জেলেরা ছোটবেলা থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরতে অভ্যস্ত। হঠাৎ পেশার বদল করেও তারা ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছেন না।'

নদীতে পানি নেই
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খনন না করায় শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি প্রবাহ থাকছে না। নদ-নদীর এমন অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Israel welcomes 'all help' in striking Iran

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago