‘তারা আমার ছেলেটারে মাইরা ফালাইছে’

মারুফের মামা সোহাগ অভিযোগ করেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্যাতনের কারণে মারুফের মৃত্যু হয়েছে।
গাজীপুরের টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক)। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে আজ দুপুরে সন্তানের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাবা রফিক আহমেদ।

গতকাল তার বড় ছেলে গাজীপুরের টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) বন্দী মারুফ আহমেদ (১৬) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।

পরিবারের অভিযোগ, উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্যাতনের কারণে মারুফ মারা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে মারুফ।

মারুফ রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় দায়ের একটি মামলাতে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মারুফের বাবা রফিক আহমেদ জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আমার ছেলে হাসপাতালে মারা যায়। গত রাতে লাশ পাইনি। ময়নাতদন্তের পর লাশ দেবে তাই মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। লাশ পেলে কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যাব।

তিনি বলেন, মারুফ আমার বড় ছেলে। আমাদের সংসারে ওরা তিন ভাই, এক বোন।  

মারুফের বাবা বলেন, ছেলেকে টঙ্গীর হাসপাতালে নেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়নি। কিন্তু, ঢামেক হাসপাতালে অবস্থা খারাপ হলে তারা জানায়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যখন ঢাকা মেডিকেলে আসি, তখন মারুফের ডান চোখে একটা দাগ দেখেছি। হাতে-পায়েও ক্ষত ছিল। হাতকড়া পরানো ছিল। আমি তাদের হাতকড়া খুলতে বলেছিলাম, কিন্তু তারা শোনেনি। ছেলেটার মৃত্যুর পর তারা হাতকড়া খুলে দেয়।'

শোকার্ত বাবা বলেন, 'তারা আমার ছেলেটারে মাইরা ফালাইছে।'

মারুফের মামা সোহাগ অভিযোগ করেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্যাতনের কারণে মারুফের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমার বোন (মারুফের মা) গত ৮ ফেব্রুয়ারি মারুফকে দেখতে গিয়েছিল। তখন সে ভালো ছিল। ১১ ফেব্রুয়ারি তারা তাকে জানায় যে তার ছেলে অসুস্থ।'

সোহাগ জানান, মারুফের মা হাসপাতালে গিয়ে দেখেছে মারুফের হাতে, পায়ে, গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

তিনি জানান, মারুফ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে আনার জন্য তার মাকে জানিয়েছিল। মারুফ তার মাকে বলছিল মা, আমি জীবনে আর কখনো মারামারি করব না। আমি খারাপ কাজ করব না। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। ওরা আমাকে বাথরুম ও থালাবাসন ধুতে বাধ্য করে। আমি ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে আমাকে অনেক মারধর করে।

গাজীপুর টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) সুপারভাইজার মো. দেলোয়ার হোসেন, গত শনিবার দুপুরে মারুফ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক বা নার্স না থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে গাজীপুর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল তার মৃত্যু হয়।

কী অসুস্থতায় মারুফের মৃত্যু হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি তিনি জানেন না।

নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'পরিবারের পক্ষ থেকে আমার কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি।'

এ ঘটনায় তিনি একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

মারুফ কী অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল জানতে গাজীপুর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তারিক হাসানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এ টি এম তৌহিদুজ্জামান জানান, কিশোরের মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে। তবে তিনি বলেন, মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

মারুফের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সানারুল হক।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মারুফের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।'

টঙ্গীর এই কেন্দ্রে গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিশোর রাকিব নামে আরেক বন্দী মারা যায়। চিকিৎসা নিতে দেরি হওয়ায় রাকিবের মৃত্যু হয়ে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছিল।

গত জুন মাসে কেন্দ্রে আরেক কিশোর মারা যায়।

কর্তৃপক্ষের মতে, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ২০০ জন। তবে কেন্দ্রে এখন ৭২৭ বন্দী রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of 726 people who died during the student-led mass protests in July and August.

1h ago