কাজ শেষের আগে বিল: সওজ'র ৩ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা

গত ৩১ জানুয়ারি কাজ শেষের আগেই এই মহাসড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সকে বিল তুলে দেওয়ার ঘটনায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার। 
ছবি: স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা' আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শেষের আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ও দুজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলীসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। 

সাময়িক বরখাস্তকৃতদের মধ্যে পংকজ ভৌমিক একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ওই মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামালপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুই উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-- ডেইজি রায় টুম্পা ও খন্দকার নেসার আহাম্মদকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) এবং সংশ্লিষ্ট তিনজন কর্মকর্তার কাছেও পাঠানো হয়েছে। 

আদেশে বলা হয়, বর্ণিত চলমান প্রকল্পের (পিডব্লিউ-০৩) প্যাকেজের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল ও জামানত পরিশোধ করার বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দ্বারা তদন্ত করা হয়। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ ধরণের কার্যক্রম সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) এ বর্ণিত অসদাচরণ এবং গুরুদণ্ড আরোপযোগ্য অপরাধ। এজন্য বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালীন তারা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর সংলগ্ন ছুটি, প্রশিক্ষণ ও প্রেষণজনিত সংরক্ষিত (সিভিল) পদ, ঢাকায় সংযুক্ত থাকবেন। 

গত ৩১ জানুয়ারি কাজ শেষের আগেই এই মহাসড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সকে বিল তুলে দেওয়ার ঘটনায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট একেনক বৈঠকে অনুমোদন হওয়া এই মহাসড়কটি নির্মাণের কাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রানা বিল্ডার্স। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ দু-দফা বাড়ানো হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের ৩০ জুন।

২০২১ সালের ৭ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে ওই বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের চূড়ান্ত বিল তুলে নেয় রানা বিল্ডার্স। এরপর মাত্র তিন মাস না পেরোতেই একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর জামানতের ৫০ শতাংশ অর্থও তুলে নেয় এ প্রতিষ্ঠানটি। তৎকালীন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পংকজ ভৌমিকসহ একই বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা 'কাজ শেষের আগে বিল তুলে নেওয়ার' সুযোগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।

পাঁচটি প্যাকেজে মোট ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সঙ্গে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। একনেকে অনুমোদন হওয়া বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার মেঘনা সেতু চালু হলে এ সড়ক দিয়ে ঢাকার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে বিকল্প যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে সড়কটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। 

এর আগে, গত ২০২২ সালে বগুড়া-নাটোর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ধীরগতির অভিযোগে কুমিল্লার মোহাম্মদ আলমের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সকে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। একই বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অসমাপ্ত রেখে ৪০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এর মালিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago