চট্টগ্রাম থেকে যেভাবে অস্কার আয়োজনে আমির হামজা

ছবি: সিনা নাসেরি/ আমির হামজা/ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস/ ডিজাইন: দোয়েল বিশ্বাস

অস্কারের ৯৬ তম আসর বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজরিন আহমেদের প্রথম চলচ্চিত্র 'রেড, হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু' এর জন্য প্রথম অস্কার মনোনয়ন পান তিনি।

এছাড়া 'নিউ ইয়র্ক টাইমস' এর সাথে সংশ্লিষ্ট একজন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী অস্কারের এই আসরের শ্রেষ্ঠ কিছু মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করেছেন।

অস্কারজয়ীদের ছবি দেখতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত আমির হামজার জলছাপ দেওয়া ছবিগুলো হয়তো অনেকেরই চোখে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমির হামজা একজন বাংলাদেশি, তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।

টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারের সাথে সাক্ষাৎকারে আমির হামজা হাসতে হাসতে বলেন, 'এটা সত্যি যে বেশিরভাগ সময় মানুষ আমার নাম দেখে বিভ্রান্ত হয়। তবে নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি পুরোপুরি বাংলাদেশি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) থেকে ফার্মেসি নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তবে পরবর্তীতে আলোকচিত্রী হওয়ার স্বপ্ন পূরণের সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমবার অস্কারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা, অস্কার-পূর্ববর্তী ও অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান ডকুমেন্ট করতে পেরে আমি খুব খুশি। পছন্দের নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের প্রথমবারের মতো অস্কার পেতে দেখা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'

৯৬ তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে আমির হামজা। ছবি: সিনা নাসেরি

অস্কার অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে হামজা বলেন, 'বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নির্মাতা নাজরিন চৌধুরীর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'রেড, হোয়াইট অ্যান্ড ব্লু' নিয়ে আমি আশাবাদী ছিলাম। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত একজন মানুষকে অস্কার মনোনয়ন পেতে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। তাছাড়া, এই মুহুর্তকে আরও জাদুময় করে তুলেছে ক্রিস্টোফার নোলান ও কিলিয়ান মারফিকে প্রথমবার অস্কার পেতে দেখা। তবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতারা যখন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে নিজেদের কাজ দেখাবেন ও অস্কার জয় করবেন, সেটিই হবে আমার জন্য চূড়ান্ত গর্বের বিষয়।'

অস্কারের মতো অনুষ্ঠানে অনায়াসে বিভিন্ন মুহুর্ত ফ্রেমবন্দী করা কঠিন, কারণ পর্যাপ্ত আলো থাকে না ও তারকারা সারাক্ষণ নড়াচড়া করতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে নিখুঁত ছবি তোলেন জানতে চাইলে হামজা বলেন, 'আসলে এটা নির্ভর করে ছবির মান আপনি কীভাবে নির্ধারণ করছেন তার ওপর। সবসময় যে 'হাই কোয়ালিটি' ছবি লাগবে তা না- হলিউডের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাতগুলোতে সিনেমা জগতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন মুহুর্ত ধরতে পারাই এখানে আসল। ছবি তোলায় মাঝে মাঝে আলোর চেয়ে ছায়ায় দেখতে পারা বেশি দরকার।'

হাসান মিনহাজ। ছবি: আমির হামজা

হামজা বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা পিপলু আর খানের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। 'হাসিনা: এ ডটারস টেল' ও স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবন নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রে একজন আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মজীবনীতে কাজ করার সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের 'ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অব ফটোগ্রাফি' থেকে বৃত্তি পান। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

'আমি প্রচুর বিদেশি সিনেমা দেখে বড় হয়েছি, সেখান থেকেই সিনেমাটোগ্রাফির প্রতি আমার ভালোবাসার শুরু, যা থেকে পরবর্তীতে ছবি তোলার ব্যাপারে আগ্রহী হই। জর্জ ফ্লয়েড আন্দোলনের সময় তোলা ছবিগুলো আমাকে সাফল্য এনে দেয়, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাথে কাজ করার সুযোগ পাই। তিন বছর কঠোর পরিশ্রমের পর, গত বছর থেকে তাদের ফেলোশিপ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে পূর্ণকালীন আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করছি।'

২০২২ সালে ব্রুকলিনে ‘দ্য লং গুডবাই’ কনসার্টে রিজ আহমেদ। ছবি: আমির হামজা

হামজা দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। 'দ্য গার্ডিয়ান' এর সাথে কাজ করার সময় গত বছর অস্কারজয়ী অভিনেতা ব্রেন্ডন ফ্রেজারের ছবি তোলার সুযোগ পান।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফরমের সাথে কাজ করার সময় তিনি নোভাক জকোভিচ, মীরা নায়ের ও কোয়েন্টিন তারান্টিনোর মত জনপ্রিয় তারকাদের ছবি তোলার সুযোগ পান। এ ছাড়া কমেডিয়ান হাসান মিনহাজ ও অস্কারজয়ী অভিনেতা রিজ আহমেদের সাথে কাজ করেছেন হামজা।

'আমি কয়েক বছর হাসানের সাথে 'দ্য কিংস জেস্টার' ও 'প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট উইথ হাসান মিনহাজ' এ কাজ করেছি, তিনি সবসময় আমার কাজে সমর্থন দিয়েছেন। এছাড়া একবার রিজ আহমেদের কনসার্টে ছবি তুলেছি।

ব্রেন্ডন ফ্রেজার এবং হামজা।

তারা দুজনেই সমান মেধাবী ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করছেন। বিনোদন জগতে তাদের উচ্চতায় পৌঁছাতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি তাদের নিজের অনুপ্রেরণা মনে করি, তাদের সাথে পরিচিত হতে পেরে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ,' বলেন হামজা।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন জোহানা আফরিন

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago