পিচ বদলালেও বদলায়নি লিটন-শান্তদের ব্যাটিং

ছবি: ফিরোজ আহমেদ/ স্টার

'আমার মনে হয় সিলেটের তুলনায় এখানে ব্যাটিং করা সহজ'; 'গত ম্যাচের তুলনায় পিচ ব্যাটারদের জন্য বেশ ভালো।' চট্টগ্রামের পিচ নিয়ে দুটি ভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে দুইবার একই সুরে বলেছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। এমনকি বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পও বলেছিলেন একই কথা। তবে উইকেটের বদল দেখা গেলেও কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি টাইগারদের ব্যাটিংয়ে।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই পিচকে ব্যাটিং স্বর্গ বলা না গেলেও ব্যাটিং সহায়কই ছিল। এমন পিচে উইকেট নিতে প্রয়োজন ছিল সঠিক পরিকল্পনা। আর পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন তো বটেই। সেটাই করে গিয়েছেন লঙ্কান বোলাররা। পেতেছেন ফাঁদ। আর সেই ফাঁদে একের পর এক টাইগার ব্যাটাররা হয়েছেন কুপোকাত।

আর লঙ্কানদের পাতা ফাঁদেই যে টাইগাররা পা দিয়েছেন তা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেনও শ্রীলঙ্কার পেস বোলিং কোচ দর্শনা গামাগে, 'অসিথা এমন একজন যে নতুন ও পুরানো উভয় বলেই ভালো বোলিং করতে পারে। সাকিবের আসলে পরিকল্পনা ছিল তখন তাকে পেছনে পাঠানোর জন্য কয়েকটি শর্ট বোলিং করা এবং তারপর ফুলারে গিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা এবং তিনি ঠিক তাই করেছিলেন। আপনি যদি বোলারদের দিকে তাকান, তারা পরিকল্পনা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম।'

সকালে অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে প্রথম ঘণ্টাটা অনায়াসেই কাটিয়ে দেন জাকির হাসান। তবে টানা প্রায় একই লেন্থে বল করার পর পুরস্কার পেয়ে যান বিশ্ব ফার্নান্ডো। এরপর হুট করে অফস্টাম্পের বাইরে রেখে ভেতরে ঢোকানো বলে জাকিরকে বোল্ড করে দিয়ে জুটি ভাঙেন এই পেসার। ডিফেন্স করতে চেয়েও পারেননি জাকির। দলের একমাত্র ফিফটিটি (৫৪) আসে তার ব্যাট থেকে।

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হলেন অনেকটাই আনাড়ির মতো। শর্ট মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে বোলিং করতে থাকেন প্রভাত জয়াসুরিয়া। দ্বিতীয় বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে পারেননি শান্ত। এরপর টানা দুটি লেগ স্টাম্প ও মিডল স্টাম্পের মাঝে বল রাখেন জয়াসুরিয়া। দ্বিতীয় বলে শর্ট মিড উইকেটের ফিল্ডারকেই ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত।

অধিনায়কের আত্মাহুতির পর নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম বিদায় নিলে চাপ বাড়তে থাকে টাইগার শিবিরে। সেই চাপ আরও বাড়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অথচ প্রায় এক বছর পর সময়ের সেরা অলরাউন্ডারকে পেয়ে উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশ। তবে লঙ্কানদের পাতা ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন দেশ সেরা এই ক্রিকেটার।

উইকেটে আসার পর থেকেই সাকিবকে বেশির ভাগ বলই শর্ট অব লেন্থে বাউন্সার দিচ্ছিলেন আসিথা ফার্নান্ডো। আউট হওয়ার আগের বলটিও ছিল বাউন্ডার। ঘোরাতে গিয়ে গ্লাভসে লেগে ভাগ্যের জোরে বাউন্ডারি মিলে যায়। পরের বলটিও হয়তো একই লেন্থে বল করবেন ভেবেছিলেন। তাতেই গড়বড় করে ফেলেন। শার্প ইনসুইঙ্গারে ভেতরে ঢোকা বলে ফ্লিক করতে গিয়ে লাইন মিস করে পড়েন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে।

আর বরাবরের মতো উইকেট বিলিয়ে এসেছেন লিটন। তবে এদিন প্রথম বলেই তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে আউট হননি। প্রথম বলে রক্ষণাত্মক খেললেও অফস্টাম্পের বাইরে রাখা পরের বলে কভার ড্রাইভ করে বাউন্ডারি আদায় করে নেন। তার ঠিক পরের বলটিও অফস্টাম্পের বাইরে রাখেন আসিথা। চাইলেই ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে খোঁচা মারতে যান এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ফলাফল উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দী।

দল যখন সাত উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারে তখন উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন মিরাজ। ভাগ্য সঙ্গে থাকায় হয়তো আকাশে তোলা ক্যাচটি ধরতে পারেননি অতিরিক্ত ফিল্ডার সাদিরা সামারাবিক্রমা। এরপর তাকে সেটআপ করে আউট করেছেন জয়াসুরিয়া। আগের ওভারে দারুণ ডেলিভারি দিয়ে যাওয়া এই স্পিনারের অফস্টাম্পের বাইরে রাখা আর্ম বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে লাইন মিস করে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন মিরাজ।

স্বীকৃত ব্যাটারদের বিদায়ের পর এক প্রান্তে আগলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মুমিনুল। অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শেষ দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। খালেদ বোল্ড হলে নিশ্চিত হয়। মাত্র ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে ঘরের মাঠে দুইশর কমে গুটিয়ে গেল টাইগারদের ইনিংস। শেষবার এমনটা দেখেছিল সেই ২০০৪ সালে।

প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রানের লিড নিয়েও বাংলাদেশকে ফলোঅন করায়নি শ্রীলঙ্কা। অন্যথায় কে জানে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন টাইগাররা, তাতে ইনিংস ব্যবধানেও হারতে পারতো বাংলাদেশ?

Comments

The Daily Star  | English

Rally begins near Jamuna demanding ban on Awami League

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

29m ago