বাংলাদেশে এবারের সফরটা সিকান্দার রাজার কাছে অন্যরকম

Sikandar Raza
সিকান্দার রাজার কন্ঠে বিদায়ের সুর। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টেস্ট খেলুড়ে দেশ হয়েও এবার ২০ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারছে না জিম্বাবুয়ে। এতে অবশ্য নিজেদের দায়টাই বেশি। বাছাইপর্বে উগান্ডার সঙ্গে হেরে দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজার মতে তা এতই যন্ত্রণার যে খেলা ছাড়ার পরও এটা অনেকদিন পোড়াবে ।

আগামী দুই বছরের মধ্যে জিম্বাবুয়ের সামনে কোন আইসিসি ইভেন্ট নেই। সিকান্দার রাজা, শন উইলিয়ামস, ক্রেইগ আরভিনদের মতন অভিজ্ঞ তারকাদের সামনেই তাই কিছু নেই। তবে রাজা মনে করেন, তারা এখনো খেলছেন আগামী প্রজন্মের কথা ভেবেই, একটা ঐতিহ্যের ধারা তৈরি করে বিদায় নিতে চান।  

বিদায়ের সুরও তার কণ্ঠে পরিষ্কার। এবার সফরে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী, সন্তানদের। তাদের বাংলাদেশে আনার পেছনেও শেষের একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই রাজার কাছে বিশ্বকাপে না থাকার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। রাজা জানান কতটা বেদনার তাদের এই সময়,  'আমি জানতাম প্রশ্নটা আসবে। আমার মনে হয় এটা এমন কিছু যা সব সময়ই বেদনাদায়ক। শুধু যখন খেলছেন তখন না, যখন অবসর নিবেন তখনও। ক্রিকেটার, ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট সবার জন্যই বেদনাদায়ক যে আমরা বিশ্বকাপে নেই। শুধু এখনকার জন্য না, এটা এমন একটা বিষয় যা দীর্ঘদিন পোড়াবে।'

sean williams
শন উইলিয়ামস আছেন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। ছবি:ফিরোজ আহমেদ

২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও যন্ত্রণাদায়ক সমাপ্তি হয় জিম্বাবুয়ের। ২০২৩, ২০২৪ পর পর দুটি আইসিসি ইভেন্টে খেলতে পারছে না তারা। ২০২৭ সালে নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপের আগে ২০২৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। কিন্তু ততদিনে ৩৮ পেরুনো রাজা, আরভিন। ৩৭ পেরুনো উইলিয়ামসের খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। কোন প্রেরণায় খেলছেন এই প্রসঙ্গ আসা তাই স্বাভাবিক।

অভিজ্ঞ রাজা এখানে মেলে ধরলেন আগামী প্রজন্মকে নিয়ে তার চিন্তার কথা,  'আমি সব সময় বলি ক্রিকেট খেলার জন্য আমার প্রেরণা দরকার হয় না। প্রেরণা ভেতর থেকেই আসে এবং দলের সঙ্গে কথা বলে আসে। আমরা অনুপ্রাণিত। বিশ্বকাপ আমাদের একটা লক্ষ্য ছিলো যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের অনেক বড় দায়িত্ব আছে দেশের জন্য। ছোটরা যারা আছে, যারা এই খেলাটা খেলছে, যারা এখানে ক্যারিয়ার করতে চায় তাদের জন্য (প্রেরণা খুঁজছি)। বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বাইরে থেকে কোন প্রেরণা নিতে হয় তাহলে ওই শিশুদের থেকে নিব যারা আগামীতে খেলবে, আগামীর খেলাধুলার কথা যদি ভাবি তাহলে পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা আছে। এটা মাথায় রেখে যন্ত্রণা সরিয়ে এক ধাপ আগাতে পারি। খেলাটাকে বিকশিত করতে পারি। একটা ঐতিহ্য তৈরি করে যেতে পারি।'

Sikandar Raza Son
জিম্বাবুয়ের অনুশীলনে সিকান্দার রাজার ছেলে। ছবি:ফিরোজ আহমেদ

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে বাংলাদেশে অনেকবারই এসেছেন রাজা। এবারের আসাটা তার ভিন্ন। কেন জানি জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের মনে হচ্ছে হয়ত এবার শেষবার এলেন। তার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। বাংলাদেশে যে ভালোবাসা পেয়ে এসেছেন পরিবারকে তা দেখাতে চান তিনি। এই দেশ থেকে নানাভাবে সমৃদ্ধ হওয়ায় কৃতজ্ঞতাও জানালেন রাজা,  'আমি বাংলাদেশে ঘন ঘন আসতাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সূচি, আমার জীবন বাংলাদেশে খুব বেশি থাকতে দিচ্ছে না। আমি জানি না জীবন কোনদিকে যাবে আগামীতে। আমি যদি বাংলাদেশে শেষবার আসি, আমি চাইছিলাম আমার স্ত্রী, কন্যা, পুত্রদের নিয়ে আসব। তারা দেখুক এখানে আমি কতটা আতিথ্য, ভালোবাসা পেয়ে আসছিলাম। আমার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বাংলাদেশে, যেটা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। দ্বিতীয়টাও বাংলাদেশে, যেটা বিপিএল। আমার আন্তর্জাতিক অভিষেক বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের খুব ভালো বন্ধু। আমরা আপনাদের আতিথেয়তা দেই, আপনারাও দেন নিয়মিত।'

'আমার ক্যারিয়ারের অনেক কিছু বিকশিত হওয়ার পেছনে, খেলোয়াড় হিসেবে সমৃদ্ধ হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের সফরগুলো কাজে দিয়েছে। আমি তিনটা বিপিএল, তিনটা ডিপিএল খেলেছি। আমি জানি না আমি আর আসব কিনা। কাজেই এবার ভেবেছি এটাই সেরা সময় আমার পরিবারকে এখানে নিয়ে আসার। আমি যতটা যত্ন এখানকার খেলোয়াড় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি সেটা আমি শেষবার তাদের দেখাতে চাই। আলহামদুলিল্লাহ তারা খুশি। খুব ভালো যাচ্ছে। ধন্যবাদ।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

11h ago