লিখিত দিলেও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক’ অভিযোগের অপেক্ষায় রাবি প্রশাসন

রাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের মারধরের ঘটনায় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীর এই অভিযোগ 'অনানুষ্ঠানিকভাবে' পেয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাসকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় প্রাধ্যক্ষকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে সবুজ বলেন, রাত ২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. আতিকুর রহমান ৮-১০ জন অনুসারীসহ এসে তাকে তার কক্ষ থেকে ছাদে নিয়ে গিয়ে শিবির আখ্যা দিয়ে বেধড়ক মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়। নিজেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী দাবি করলে তাকে আরেকদফা পেটানো হয়।

সবুজের লিখিত অভিযোগ এবং এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এই ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগপত্র আসেনি। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্যে এই ব্যাপারে আমরা জানতে পেরেছি। যদিও সবুজ বিশ্বাস অভিযোগটি ছাত্র উপদেষ্টা এবং প্রক্টর বরাবর অনুলিপি করেছে কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। হোয়াটসঅ্যাপে মূলত আমি অভিযোগপত্রের একটি ছবি পেয়েছি।'

'আমরা এখনো সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি,' বলে সকালে ডেইলি স্টারকে জানান তিনি। পরে সাংবাদিকের কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে তিনি সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, 'আমরা সবুজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বিধায় সে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে। কী ধরনের নিরাপত্তা চায় জিজ্ঞেস করলেও সবুজ নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। আমরা তাকে আশ্বাস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এছাড়াও আলোচনার মাধ্যমেও আমরা সমাধানের দিকে আগাতে পারি।'

তিনি বলেন, 'সবুজ সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী নয়। তার এলোটেড সিট শহীদ হবিবুর রহমান হলে।'

হলে শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী চিন্তা করছে এ প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম বলেন, 'আমরা এই ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিকভাবে জেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক। সবাই আমাদের শিক্ষার্থী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধর্মকে পুঁজি করে সংবাদ করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এছাড়াও এই ঘটনার পেছনে কারা জড়িত সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে।'

জড়িতদের নাম সবুজ লিখিত অভিযোগপত্রে দিয়েছে। এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানাতে চাইলে উপ-উপাচার্য বলেন, 'লিখিত অভিযোগপত্রটি সবুজ লিখেছেন। কিন্তু আমাদেরকে দুই পক্ষের কথাই শুনতে হবে। পুরো ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখব। তারপর দোষীদের বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।'

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রের ওপর অন্যায় হোক এটা আমরা চাই না। ইতোমধ্যে আমরা ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যারকে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছি।' 

হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষার্থীকে পেটানোর ঘটনায় গতকাল তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

তদন্ত কমিটির সদস্য তানজিল ভূঞা ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ শনিবার সন্ধ্যায় হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আমাদের একটি মিটিং হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আমরা কীভাবে এই ঘটনার তদন্ত করব। 

আর গত দুই দিন বন্ধের দিন হওয়ায় আমরাও তদন্তে তেমন আগাতে পারিনি, জানান তিনি। 

গতকাল অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. আতিকুর রহমান বলেন, 'আমি সবুজকে চিনি না। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago