হায়দরাবাদকে উড়িয়ে ফাইনালে কলকাতা

ছবি: আইপিএল

মিচেল স্টার্কের দিকে আলাদা করে চোখ থাকবেই। আইপিএলের ইতিহাসেই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিত হয়েছেন বলে তো এবার আরও বেশি। সেই স্টার্ক পুরো আসর ধরেই যেন নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন। নিজের জাত যেন চেনালেন, একেবারে ফাইনালে উঠার মঞ্চেই। প্রথম কোয়ালিফায়ারে তার শুরুর স্পেলে নেওয়া ৩ উইকেটেই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কলকাতার বাকি বোলারদের অবদানে আর ঘুরে দাঁড়াতেই পারেনি কামিন্সের দল। তাদের ১৬০ রানের দেওয়া লক্ষ্য ভেঙ্কেটশ আর শ্রেয়াস আইয়ারের ফিফটিতে কলকাতার পেরিয়ে যেতে লেগেছে মাত্র ১৩ ওভার ৪ বল।

মঙ্গলবার আহমেদাবাদে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। 

টসে দুই দলেরই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। প্রথমে ব্যাট করতে চাওয়া হায়দরাবাদের ব্যাটিং প্রত্যাশা মতো হয়নি যদিও মোটেও। ১৫৯ রানেই তারা অলআউট হয়ে যায় ৪ বল বাকি থাকতে। কলকাতার প্রত্যেক বোলারই উইকেট পেয়েছেন। তবে স্টার্কের ৩৩ রানে নেওয়া ৪ উইকেটই রেখেছে সবচেয়ে বেশি অবদান। বরুন চক্রবর্তীও নিয়েছেন ২৬ রানে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট। লক্ষ্য তাড়ায় কলকাতার দুই ওপেনার ইনিংস বড় করতে না পারলেও ভেঙ্কটেশ হায়দরাবাদকে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগই দেননি। বাঁহাতি এই ব্যাটা ২৮ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তার সঙ্গে শ্রেয়াস আইয়ারের ২৪ বলে ৫৮ রানের ইনিংস আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে।

Mitchell Starc

ফিল সল্টের বিধ্বংসী ব্যাটিং কলকাতার গত আসরের ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে এবার সাইডলাইনে বসিয়ে রেখেছে টুর্নামেন্ট জুড়ে। সল্টের অনুপস্থিতিতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে সুযোগ পেয়ে ভালোই শুরু করেছিলেন এই আফগান। কিন্তু ১৪ বলে ২৩ রানেই তাকে ফিরে যেতে হয় নাটরাজনের বলে কাভারে ক্যাচের শিকার হয়ে। ফুলার লেংথের সঙ্গে শর্ট বলের দারুণ মিশ্রণে সুনিল নারিনের লাগাম কিছুটা ধরে রাখতে পারে হায়দরাবাদ। কিন্তু ওয়ান ডাউনে নামা ভেঙ্কটেশ শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। পাওয়ারপ্লেতে চলতি আসরে নবমবারের মতো ৬০ রানের বেশি আনে তাই কলকাতা। পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই যদিও নারিন আউট হয়ে যান ১৬ বলে ২১ রানে। প্যাট কামিন্সের বলে স্কোয়ার লেগের হাতে ক্যাচ তুলে এই ক্যারিবিয়ানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে চারটি চারে। কিন্তু দুই ওপেনার দ্রুত ফিরে গেলেও দুই আইয়ারের ব্যাটে দ্রুতই ফাইনালে যাওয়া নিশ্চিত করে ফেলে কলকাতা।

অবশ্য বোলিংয়েই কাজটা সেরে নিয়েছিল শ্রেয়াসের দল। হায়দরাবাদের ভয়ঙ্কর ওপেনিং জুটিকে থামানো যায় কীভাবে? ম্যাচের আগে কেকেআরের পরিকল্পনা জুড়ে নিশ্চিতভাবেই এই প্রশ্নে সময় কেটেছে সবচেয়ে বেশি। কিন্ত ম্যাচের ১১ বলের ভেতরেই দুই ওপেনারকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বোধহয় তাদের সুন্দরতম কল্পনাতেও আসেনি। স্টার্ক দ্বিতীয় বলেই স্বদেশী ট্রাভিস হেডের স্টাম্প উড়িয়ে দেন শূন্য রানে। দ্বিতীয় ওভারে বৈভব আরোরা এসে ৩ রানে অভিষেক শর্মারও উইকেট তুলে নেন। বিপদের তখনও বাকি, ১৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা হায়দরাবাদের পঞ্চম ওভারে যায় আরও দুটি উইকেট। ১০ বলে ৯ রান করে নিতিশ রেডি ফিরে যান স্টার্কের বলে ক্যাচ তুলে। পরের বলেই শাহবাজ আহমেদ ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে যান। ৪ উইকেটে ৪৫ রানে পাওয়ারপ্লে শেষ করে হায়দরাবাদ।

উইকেটের মিছিলের মাঝে একপাশে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছিলেন রাহুল ত্রিপাঠী। হেনরিখ ক্লাসেনের সঙ্গে মিলে তিনি দেখেশুনে খেলতে থাকেন। আট ওভার শেষে এরপরে দুজনেই আক্রমণে যান। সুনিল নারিনের এক ওভারেই তারা আনেন ১৮ রান। ৬৪ বলে ৬২ রানে থাকা হায়দরাবাদকে ১১তম ওভারেই একশ রানে নিয়ে যায় এই জুটি। কিন্তু সে ওভারেই ক্লাসেন মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়ে যান। বরুনের বলে আউট হয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকানের ইনিংস থেমে যায় ২১ বলে ৩৩ রানে। এরপর ১৪তম ওভারে অপ্রত্যাশিতভাবে ত্রিপাঠীর উইকেটও পেয়ে যায় কলকাতা। আব্দুল সামাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে ত্রিপাঠী ফিরে যান ৩৫ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় গড়া ৫৫ রানের ইনিংস খেলে। ত্রিপাঠীর সঙ্গে প্যাভিলিয়নে পৌঁছে যায় তাদের বড় স্কোরেরও আশা।

হায়দরাবাদ ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসের অপেক্ষা করেনি। ত্রিপাঠীর ফেরার পর তখনই নামিয়ে ফেলে সানভির সিংকে। কিন্তু তিনি ত্রিপাঠীর পিছু পিছু ফিরে যান প্রথম বলেই নারিনের কাছে বোল্ড হয়ে। ১২১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা হায়দরাবাদের আশার আলো আরও নিভে যায় পরের দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে। সামাদ আউট হন ১২ বলে ১৬ রান করে, ভুবনেশ্বর কুমার ১ রানে। অধিনায়ক কামিন্সই এরপর সবশেষ ব্যাটারকে নিয়ে ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত খেলে যান। শেষ উইকেটে ৩৩ রানের জুটি তাদের নিয়ে যায় ১৫৯ রান পর্যন্ত। ২৪ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় কামিন্স করেন ৩৪ রান। তাতে যে পুঁজি এসেছে তা নিয়ে লড়াইও জমানো যায়নি।

ফাইনালে উঠার আরেকটি সুযোগ অবশ্য আছে হায়দরাবাদের। রাজস্থান রয়্যালস-রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মধ্যে জয়ী দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে তারা।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus speech at Earthna Summit 2025 in Doha

No one too poor to dream, no dream too big to achieve: Yunus

He says in his keynote speech at Earthna Summit 2025 in Doha

1h ago