বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক: চরিত্র ভিন্ন, গল্প একই

Shakib Al Hasan & Najmul Hossain Shanto
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত— যদিও এদেশের কিংবদন্তিরাই ছিলেন নেতৃত্বের আসনে, তবুও নিজের ব্যাপারে এমন কথা শুনতে হলে পাহাড় ডিঙিয়ে যেতে হবে না শান্তকে। তার পূর্বের অধিনায়কদের টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে অভিজ্ঞতা যে সুখকর ছিল না। বাঁহাতি এই ব্যাটারকে কেবল ১৭০ রান করলেই চলবে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেতৃত্বের মুকুট পরা ষষ্ঠ বাংলাদেশি হতে যাচ্ছেন শান্ত। তার আগের অধিনায়কদের মাত্র একজনের ম্যাচসেরা হওয়ার অর্জন আছে। মোহাম্মদ আশরাফুল ২০০৭ সালে টাইগারদের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচেই ২৭ বলে ৬১ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। এরপর বাংলাদেশের আর কোনো অধিনায়কের হাতে এই পুরস্কার উঠেনি।

ম্যাচসেরা হওয়ার পর তার ব্যাট হাসেনি অবশ্য। ওই ইনিংসে পাওয়া জয় বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে। সেখানে ১০ রানের বড় ইনিংসও অধিনায়কের কাছ থেকে পায়নি বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপে আশরাফুল পাঁচ ম্যাচে ৮৭ রান করলেও স্ট্রাইক রেট ছিল ১৮১.২৫। যে স্ট্রাইক রেটে মূলত ওই ইনিংসেরই অবদান। বাংলাদেশ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও গিয়েছিল আশরাফুলের কাঁধে নেতৃত্বের ভার সঁপে। ইংল্যান্ডে আয়োজিত সে আসরে তিনি দুই ম্যাচে করতে পেরেছিলেন মাত্র ২৫ রান। অধিনায়ক আশরাফুলের ঝুলিতে ৮ ওভারে ১০.৭৫ ইকোনমিতে বল করে ১টা উইকেট আছে।

প্রথম দুই বিশ্বকাপের পরের আসরে সাকিবের নেতৃত্বেই গিয়েছিলেন টাইগাররা। দুই ম্যাচে ১২৭ স্ট্রাইক রেটে ৭৫ রানের সঙ্গে তিনি ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন ৬.৩৭ ইকোনমিতে। এই পারফরম্যান্স যদিও বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখতে পারেনি। দুটি ম্যাচে হেরেই যে সাকিবের দল বিদায় নিয়েছিল প্রথম পর্ব থেকে। এই অলরাউন্ডারের অধীনে ২০২২ সালে আবারও বিশ্বমঞ্চে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫ ম্যাচে একশোর কম স্ট্রাইক রেটে ৪৪ রান করেছিলেন তখন। বল হাতে ছয় উইকেট নিতেই বোলিং করেছিলেন ৮.৭৮ ইকোনমিতে।

আশরাফুল ও সাকিবের মতো মুশফিকুর রহিমে নেতৃত্বেও বাংলাদেশ খেলেছে দুটি বিশ্বকাপ। ২০১২ সালে প্রথমবার নেতার বেশে বিশ্বকাপে গিয়ে মুশফিকের ভুলে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতাই হয়েছে। দুই ম্যাচে মাত্র ২৯ রান করেছিলেন এই ডানহাতি ৯০ স্ট্রাইক রেটে। ঘরের মাঠে পরের আসরেও চিত্র বদলায়নি খুব বেশি। ৫ ইনিংসে প্রায় ২৪ গড় ও ১১৭ স্ট্রাইক রেটে মুশফিক রান পেয়েছিলেন ১১৮।

বোলার হয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে ২০১৬ সালে দায়িত্বে সামলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ভারতে অনুষ্ঠিত সে আসরে ৬.৮৮ ইকোনমিতে বল করেছিলেন মাশরাফি, কিন্তু টাইগারদের এই স্ট্রাইক বোলার উইকেট এনে দিতে পেরেছিলেন মাত্র ৩টি।

এরপর ২০২১ বিশ্বকাপে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সংগ্রহ ছিল- ৮ ম্যাচে ১২০.৭১ স্ট্রাইক রেটে ১৬৯ রান। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ২৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। মূল পর্বে আউট হওয়া চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই ২০ রানের কমে থেমেছেন এরপর। ২৪ বলে অপরাজিত ৩১ করে জেতাতে পারেননি ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে। এমন এক আসর কাটানোর পরও রান ও গড় বিবেচনায় তিনিই যে এগিয়ে বাকিদের থেকে, এটিই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কদের গল্প বলে দেয়।

বিশ্বকাপে দলও তো লিখেছে শুধুই ব্যর্থতার গল্প। দলের মূল যিনি, সেই অধিনায়কের থেকে বলা চলে গল্পের শুরু। বাংলাদেশের বিশ্বকাপে জয় পাওয়া ম্যাচের সংখ্যা নয়ের বেশি নয়। এখন দল জেতে না বলেই কি অধিনায়কেরও সময় খারাপ গিয়েছে? নাকি অধিনায়কের পারফরম্যান্সই পিছিয়ে দিয়েছে দলকে? নেতৃত্বের ভার যার কাঁধে থাকে, তার পারফরম্যান্স শুধুই যে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় না, দলকে উজ্জীবিত করার কাজেও আসে সেটি।

আবার অধিনায়কত্বের চাপে ব্যাটে-বলে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি— এই কথাও আসতে পারে। অধিনায়কের ভূমিকায় মাঠে নামা সাকিব আল হাসানের যেমন ব্যাটিং গড় ১৭ ও স্ট্রাইক রেট ১১৩। আর অধিনায়কত্বের ক্যাপবিহীন এই অলরাউন্ডারের বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে গড় প্রায় ২৬ ও স্ট্রাইক রেট ১২৪। বোলিংয়ে নেতা সাকিবের গড় ২১.৮০ আর ইকোনমি ৮.০৭। যেখানে নেতৃত্বহীন সাকিব ১৭.৭৮ গড় ও মাত্র ৬.৪৪ ইকোনমিতেই বোলিং করেছেন।

কারণ যাই হোক— গল্প ব্যর্থতারই। এজন্য সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক অধিনায়ককে ছাড়িয়ে যেতে হলে শান্তর দরকার পড়ছে মাত্র ১৭০ রান। গ্রুপ পর্ব পাড়ি দিতে না পারলে চার ম্যাচে সেটা করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্যই হবে। তার ওপর যে ফর্মে আছেন ২৫ বছর বয়সী এই বাঁহাতি। অধিনায়ক না হলে হয়তো একাদশেই নিয়মিত থাকতেন না।

যখন অধিনায়কই দুঃসময় পার করেন, একটা দলের এর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে না। শান্তও তেমনই এক সময়ের মধ্যে দিয়েই পা রাখছেন বিশ্বকাপে। নিজের সঙ্গে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কদের গল্পও কি বদলাতে পারবেন?

 

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

10h ago