শান্তর 'সাহসী ও কৌশলী' সিদ্ধান্তে সাকিবের অদ্ভুত এক দিন

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বোলিংয়ে এসেছে ১০ রান। সে ওভারে যদি দ্বিগুণ রান এসে যেত কিংবা ১৯তম ওভারে রিশাদ হোসেনের কাছ থেকে যদি চারের বদলে ১৪ রান আনত প্রোটিয়ারা, তখন মাহমুদউল্লাহ কিংবা রিশাদের ওপর দায় পড়ত সামান্যই, বলতে গেলে সব দায় গিয়ে নাজমুল হাসান শান্তর কাঁধেই বসতো। কারণ, শান্ত যা করেছেন, সেটা ছিল অনেক 'ঝুঁকি'র, অনেক 'সাহসী'ও বটে। ওই সিদ্ধান্তগুলো তিনি একাই নিয়ে থাকুন বা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আলোচনা করে।

কেন? সাকিবকে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সোমবারের ম্যাচে শান্ত করিয়েছেন মাত্র এক ওভার। ১২৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এর আগে সাকিবের জীবনে এমন দিন আসেনি কখনোই। ম্যাচে পুরো ২০ ওভার হয়েছে, আর এক ওভারেই তার বোলিংয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে— সাকিবকে প্রথমবারের মতো এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হতে হয়েছে নিউইয়র্কে।

সব ধরনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সাকিবের খেলা ম্যাচের সংখ্যা এদিনের আগে ছিল ৪৩৪। বিশ্বজুড়ে কত অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন! ম্যাচের সবগুলো ওভার মাঠে গড়িয়েছে, আর তাকে এক ওভার বা তার কম বোলিং করিয়েছেন— এমন অধিনায়ক শান্তর আগে পাওয়া যায় মাত্র একজন। সেই অধিনায়কের নাম শোয়েব মালিক। ২০১৬ সালের পিএসএলে লাহোর কালান্দার্সের বিপক্ষে ম্যাচে করাচি কিংসের সাকিবের হাতে বলই তুলে দেননি মালিক।

তার মানে, শান্ত যে কাজ করেছেন, ৪৩৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই সাকিবের ক্ষেত্রে তা ঘটেছে দ্বিতীয়বার। বল হাতে এমন দিনে অদ্ভুত অনুভূতিই হবে হয়তো বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। যেদিন পিএসএলের ওই ম্যাচের সেই অভিজ্ঞতা ফিরে পেয়েছেন সাকিব, সেদিন মাহমুদউল্লাহর বোলিং বিশ্লেষণে ৩ ওভারে ১৭ রানের জায়গায় যদি দ্বিগুণ রান লেখা থাকতো কিংবা রিশাদের ৩২ রানের বদলে ৪০, তখন সাকিবের মতো একজন বোলারকে বাদ দিয়ে কীভাবে একজন পার্টটাইমার ও অনভিজ্ঞ একজনকে ডেথ ওভারে বোলিং দিলেন শান্ত, এই আলোচনায় ছেয়ে যেত বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন।

তবে ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় দারুণ 'কৌশলী' এক সিদ্ধান্তই নিতে হয়েছে শান্তকে। রিশাদ আগের দুই ওভার মিলিয়ে দিয়েছিলেন ২০ রান এবং ক্রিজে ছিলেন হেইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার নামের দুই বিধ্বংসী ব্যাটার। বাঁহাতি সাকিবকে বাঁহাতি মিলারের মুখোমুখি না করিয়ে শান্ত পার্টটাইমার মাহমুদউল্লাহকে বল তুলে দেন ১১তম ওভারে। তখন যে কেউ ভাবতে পারত, পাঁচজন মূল বোলার নিয়ে খেলা বোলিং লাইনআপ থেকে একটি ওভার বের করে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই হয়তো।

মাহমুদউল্লাহ মাত্র ৬ রানে সে ওভার শেষ করলেন। মিলারের কঠিন ক্যাচটা লিটন দাসের হাতে ঢুকে গেলে শান্তর বোলিং পরিবর্তনের কাজ সহজ হয়ে যেত অনেকটাই। মার্কো ইয়ানসেন এলে দুই ডানহাতির সামনে সাকিবকেও ব্যবহার করতে পারতেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর ওই ওভারের পর তিনি উইকেটের আশায় তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আসেন আক্রমণে। যেখানে তানজিম হাসান সাকিবের ৩ ওভার করে ফেলা সারা, তবুও ১৪ ওভারের মধ্যে বাকি দুই পেসারকেও তাদের তৃতীয় ওভার দিতে পিছপা হননি। মাঝখানে রিশাদকেও তার তৃতীয় ওভার করিয়ে দেন টাইগার অধিনায়ক।

কিন্তু জুটি না ভাঙায় মিলারের কারণেই হয়তো আর সাকিবকে আক্রমণে আনেননি শান্ত। বাঁহাতি স্পিনে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মিলারের স্ট্রাইক রেট ১৫১। একশর বেশি ম্যাচের ক্যারিয়ারে যে বোলিংয়ের বিপক্ষে তিনি আউট হয়েছেন মাত্র দুই বার, গড় ১০৯। স্পিনে সম্প্রতি ক্লাসেন কতটা ভয়াবহ সেটা প্রমাণে পরিসংখ্যানের প্রয়োজন পড়বে না। তবুও সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে যখন বাঁহাতি স্পিনে এই ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট দেখবেন ১৭৬ ও গড় ৫৯, তখন বুঝতেই পারছেন কতটা ভয়ঙ্কর তিনি হতে পারেন।

তবে এই জুটির সামনে সাকিবের মতো অভিজ্ঞ একজনের ক্ষেত্রে ভরসা রাখার যুক্তি আসতেই পারে। কিন্তু যদি তার কোনো ওভারে ১৫-২০ রান চলে আসে! বড় রানের ওভার ছাড়া যাতে ইনিংস শেষ করা যায়, সে চিন্তা থেকেই হয়তো সাকিবকে বোলিংয়ে আনার চালকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন শান্ত। লো-স্কোরিং ম্যাচে যে একটি বিশাল ওভারই খেলায় পার্থক্য গড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সার্বিক বিবেচনায় শান্তকে তাই 'সাহসী' হতে হয়েছে। এছাড়া, আর উপায়ও হয়তো ছিল না। তবে শান্তকে সাহায্য করেছে মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক বোলিংয়ের সঙ্গে রিশাদের অসাধারণ ১৯তম ওভার।

শেষমেশ তাই সাকিবকে ওই ছয় রান দিয়ে নবম ওভার শেষ করার পর ফিল্ডিংয়ে মনোযোগী থাকতে হয়েছে ইনিংসের বাকি সময়ে। আর কোনো ওভারে হাত ঘোরানো হয়নি তার। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন অদ্ভুত দিনও আসেনি তাই সাকিবের জীবনে।

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

5h ago